1. admin@mannanpresstv.com : admin :
গল্প -কোথাও আমার হারিয়ে যাবার -সুনির্মল বসু - মান্নান প্রেস টিভি
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

গল্প –কোথাও আমার হারিয়ে যাবার –সুনির্মল বসু

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১১ Time View
এই নিয়ে পরপর তিনদিন গিন্নী সীমার সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়ে গেল।
চাকরির আমলে এমনটা দেখিনি। অবশ্য তখন বাড়িতে কতটুকু সময়ই বা থাকতাম!
রিটারমেন্টের পর সব সময় ঘরে থাকি। সকালে বাজারে যাওয়া, মাসে একদিন পেনশন তোলা,
আর হাতে কোন কাজ নেই।
মাঝে মাঝে পুরনো বন্ধুরা বাড়ি আসে। আড্ডা দিই। রাতের দিকে
কেউ কেউ ফোন করেন। কথা বলি। টিভি দেখার অভ্যেস নেই। সময় কাটাতে, বই ছাড়া বন্ধু নেই।
আজকাল চোখের অবস্থা ভালো না। অনেকক্ষণ পড়াশোনা করলে, ঘাড়ে লাগে।
সকালে বাজারে গিয়েছিলাম। মাছ আর তরকারির থলি রান্নাঘরে রেখেছি। সীমা চেঁচিয়ে উঠলো, বাজারে বড় মাছ ছিল না?
ছিল।
তাহলে? এত ছোট ছোট মাছ এনেছো কেন?
ছোট মাছে স্বাদ বেশি, দাম কম।
কিপটেমি করে সারা জীবন কাটিয়েছো, কি করতে পেরেছো?
আমার মাথায় আগুন চড়ে যাচ্ছিল। ও বলল,
আজ অব্দি বাজার করাটা শিখতে পারলে না।
কেন? কি খারাপ এনেছি?
কুমড়ো কিনেছো। তার সঙ্গে কি লাগে, সেটা জানো না।
বললাম, আমার আর জেনে দরকার নেই ।এবার থেকে তুমি বাজারে যাও।
যাবোই তো।
খুব ভালো।
গতকাল সকালে লিখতে বসেছি, রান্নাঘর থেকে
আওয়াজ এলো, চা নেই, বিস্কুট নেই।
একটা কবিতার লাইন মনে আসছিল। সব ফেলে বাজারে গেলাম।
বাড়ি ফিরে, কবিতার সেই মার্ভেলাস লাইনটা কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।
গত পরশুদিন শ্বশুরবাড়ি থেকে একটা বিয়ের কার্ড এসেছে। শালীর বিয়ে। সীমা বলল, সোনার জিনিস দিতে হবে।
গোনা পয়সা। কিভাবে সারা মাসটা চলবে, ভেবে আমি অস্থির। উত্তর দিতে গেলে, ঝগড়া বেঁধে যাবে।
আমি লুঙ্গি পরে সাদা পাঞ্জাবি গায়ে গলিয়ে পাড়ার মোড়ে সিগারেট টানতে গেলাম।
পথে নেমে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল। দুর্গাপূজার সময় প্যান্ডেলে অনুসন্ধান অফিসে গিয়ে মাঝে মাঝে ওদের বলতাম, আপনারা একটু মাইকে বলুন তো, অমুককে পাওয়া যাচ্ছে না।
বন্ধুরা রাস্তায় নামতেই, আমার নাম উল্লেখ করে মাইকের ঘোষণা কানে আসতো। আমার বন্ধু টবিন বলতো, বাবলু, দ্যাখ্, তোর নাম ফাটছে!
এবার আমার এই বুড়ো বয়সে সেই পুরনো ইচ্ছাটা জেগে উঠলো। আমাকে পালাতে হবে। পালিয়ে গিয়ে দূর থেকে দেখতে হবে, বাড়িতে আমার গুরুত্ব আছে, কি নেই।
পরের রোববার বাজার করতে বেরিয়ে আমি লাপাতা হয়ে গেলাম। এখানকার খবর জানবার জন্য আমার দুই প্রাচীন বন্ধুকে ইনফরমার রেখে গেলাম।
সীমা কান্নাকাটি করল। ছেলে তপোব্রত থানায় মিসিং ডায়েরি করল। আমি দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ে
পাশের রাজ্যে চলে গেলাম।
রাতে পাড়ার বন্ধু শোভনকে ফোন করলাম, কি খবর?
খবর অনেকদূর গড়িয়েছে।
মানে?
মানে, কঙ্কনা, তোর এক্স লাভার, আমাকে বলেছে,
ও একটা বাজে ছেলে। আমি জানতাম। তাই ওকে রিফিউজ করেছিলাম।
তারপর?
বিদিশা এসেছিল, যাকে তুই রিজেক্ট করেছিলি, সে এসে বলল, আমাকে বিয়ে করেনি, কারণ তখন ও চাকরি পায়নি। কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।
পরদিন সকালে আমার বন্ধু অসীম ফোন করে জানালো, এ্যাই বাবলু, তুই ফিরে আয় তাড়াতাড়ি।
তোর বউ কেঁদে ভাসাচ্ছে।
আর আমার ছেলের কি খবর?
তপুর সঙ্গে সকালে দেখা হয়েছিল। বলল, বাবা ঠিক সময় মতো ফিরে আসবে। একা একা বাড়িতে বসে খুব বোর ফিল করছিল। আপনারা টেনশন করবেন না। বাবা একটু হাওয়া বদল করতে গেছে।
ছেলের বউ পল্লবী বলল, বুড়ো বয়সের ভীমরতি! বেড়াতে যাবার ইচ্ছা, সেটা বাড়িতে বলে গেলেই তো হতো!
আমি পাটনা শহরে আছি। হোটেলে খাচ্ছি। খাওয়া মোটেই মনের মতো হচ্ছে না। সবকিছুতে টক, আর বেজায় ঝাল! এই ধরনের খাবার খেলে, আমি বেশিদিন লাস্টিং করতে পারবো না।
হঠাৎ কলকাতা থেকে শোভনের ফোন।
হ্যালো!
পাড়ার ছেলেরা সন্ধ্যেবেলা তোর বাড়ি এসেছিল।
কেন?
কালীপুজোর চাঁদা।
মহা জ্বালাতন!
চাঁদা না দিলে, বাড়িতে পেটো হড়কে দিতে পারে।
বলিস কি?
জানিস তো, এদের মধ্যে কয়েকটা ডবল্যু বি তে চাকরি করে।
বুঝলাম না।
আরে, ওয়াগান ভাঙ্গে।
আমি এখন কি করবো?
তুই কাল সকালে কলকাতায় ফিরে আয়।
দেখছি।
এবার অসীমের ফোন এলো। বললাম, কিরে, বল্।
কঙ্কণার সঙ্গে কালিকার মোড়ে সকালে দেখা হয়েছিল, তোর জন্য খুব দুঃখ করছিল। বলছিল, সেদিন লোকটাকে ওইভাবে কুকুরের মতো তাড়িয়ে না দিলেও পারতাম।
তাই নাকি? সত্যি এই কথা বলেছে?
হু।
তারপর?
বিদিশা তোর গিন্নীর কাছে আজ বিকেলে গিয়েছিল, ও বলে এসেছে, সে ঠিকই ফিরে আসবে। সে কোনদিনই দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়।
রাতে শোভনের ফোন এলো। বলল, বাজারের মাসী
তোকে খুঁজছিল। মাঝারী সাইজের ইলিশ তোর জন্য এনেছিল। তা তুই তো বাড়িতে নেই।
ইলিশের কথা উঠতেই, আমার জিভে জল এসে গেল। আমি মাসীকে বলে রেখেছিলাম।কী ভালো ভালো খাবার ফেলে, এখানে কি খাবার খাচ্ছি?
পরদিন ট্রেন ধরে দুপুরে হাওড়া স্টেশন। তারপর উবের ধরে সোজা বাড়ি।
বাড়িতে ঢুকে সীমার দিকে তাকালাম।
আশি সালে বিয়ের প্রথম দিনের কথা মনে পড়ল।
মাটির দিকে নত দৃষ্টি সীমার।
এটাচিটা এক পাশে রেখে,
বললাম, আমাকে একটু জল দাও!
বৌমা পল্লবী এক গ্লাস জল এনে দিল। বলল, বাবা,
আপনি কি যে করেন না! বাড়িতে বলে গেলেই তো হতো।
সীমা বলল, অনেক দূর থেকে এসেছে। ওনাকে বসতে দাও। ওসব কথা এখন থাক।
তারপর একটা মায়াময় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
আমি বিয়ের সময়কার শুভ দৃষ্টির সেদিনের সন্ধ্যায় ফিরে গেলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD