1. admin@mannanpresstv.com : admin :
বিয়ে বাড়ির ঐতিহাসিক ঘটনা -নাসিমা - মান্নান প্রেস টিভি
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন

বিয়ে বাড়ির ঐতিহাসিক ঘটনা –নাসিমা

এম.এ.মান্নান.মান্না:
  • Update Time : রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫
  • ৮৫ Time View
খুলনা আই ডব্লিউ লঞ্চঘাটে গিয়ে লঞ্চ পেলাম না। প্রাইমারি ছাড়িয়েছি কী ছাড়াইনি তখন। দাদা, আমি আর দিদি। বড়ো বোনের ননদের বিয়েতে যাচ্ছি। কী মুশকিল! লঞ্চ ছেড়ে গেছে খুলনা লঞ্চঘাট।
দাদা আমাদের দুই বোনের হাত শক্ত করে ধরে দৌড় দিল। আমরাও দৌড়াচ্ছি। দৌলতপুর লঞ্চঘাট যেতে হবে। দৌড়ে যাওয়া তো সম্ভব নয়। অই লঞ্চই ধরতে হবে। নইলে পরের লঞ্চ তিনটায়। বিয়ে বাড়ি আজ পৌঁছান সম্ভব নয়। আর বিয়ে আজ রাতেই।
দৌড়ে একটা সিএনজি পাওয়া গেল। দাদা তার সিলভার কালারের চেইনের ঘড়ি বারবার দেখছে। দিদি পরেছে ক্যাসিও ঘড়ি। সে-ও ঘড়ি দেখছে। টেনশনে কান্না আসে আসে। বিয়ে বাড়ি আর যেতে পারব না মনে হয়।
শেষ পর্যন্ত দৌলতপুর লঞ্চঘাট এসে দেখা গেল লঞ্চ এখনো দৌলতপুর পৌঁছেনি। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি লঞ্চের জন্য। ঝুঁকে ঝুঁকে দেখছি পো পো করে কখন লঞ্চ হুইসেল বাজিয়ে ঘাটে পৌঁছবে। দাদা ফ্রকের কোণা ধরে টেনে নিয়ে আসছে আমাকে। যদি পড়ে যাই?
শেষ পর্যন্ত পোঁ শব্দ শোনা গেল। লোকজন টোপলা টুপলি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে একেবারে প্লাটুনের কিণারেতে।কার আগে কে ওঠে!
টেনে হিঁচড়ে আমাদের দুই বোনকে দাদা লঞ্চে উঠাল।আপার ক্লাসের সিটও পেয়ে গেল।
লঞ্চ এত ধীর গতিতে চলছিল। আসলে সেই যুগে এটাই ছিল লঞ্চের ক্ষমতা। কিছুদূর পরপর ঝোঁপঝাড়ের ভিতর ছোট ছোট ঘাটে লোক উঠছে নামছে। দাদা ঝালমুড়ি কিনে দিল। দিদি প্রায় সবটুকুই খেয়ে ফেলল।কিছু বলতে পারলাম না। লোকজন আমাদের খাওয়া দেখছে। শহুরে ভাবের দুটো মেয়ে। একজন যুবতী। আর একজন প্রায় কিশোরী আমরা। লোকজন খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের গিলছে।
ঘোর গ্রামে যাচ্ছি।যেখানে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তায় কোমর অবধি বর্ষাকালে কাদা থাকে। হারিকেন কুপির আলো আর তিন ব্যাটারির লাইট রাতের গতি। তবে বড়ো আপা চিঠি লিখেছিল বিয়েতে হ্যাজাক বাতি আনবে। বেশ আলো হয় তাতে। মজাও হয়।
প্রায় সন্ধ্যা ছয়টাতে পৌঁছালাম। বড়ো পা ছুটে এসে আমাদের ঘরে নিয়ে গেল।বাড়ি ভর্তি লোকজন। কিন্তু কেউ স্মার্ট না। স্মার্টনেস এর উপর আমার দুর্বলতা ছিল। গা ঘিনঘিন করছিল আমার। সারাদিন না খাওয়া টানা প্রায় এগারো ঘ্ণটা পর বিয়ে বাড়ি পৌঁছেছি।
বড়ো আপা ভাত দিতে পারল না।হয়তো ধরে নিয়েছিল আমরা আর আসব না। ঘরে মিষ্টি ছিল তাই খেতে দিল।গপগপ করে তাই কয়েকটি খেয়ে নিলাম। দিদিও খেল। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে শুতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু বিয়ে বাড়ি শোয়ার জায়গার প্রচণ্ড সমস্যা।
দুলাভাই শালাশালিকে প্রচণ্ড ভালোবাসত। বলল,চুপচাপ চল,তোদের শোয়ার ব্যবস্থা করছি।
যে ঘরে বরের বসার ব্যবস্থা হয়েছে সেই ঘরে নিয়ে গেল। সাজানো ফিটফাট ঘর।ক্লান্তিতে শুয়ে পড়লাম। আমি, দিদি আর ভাগ্নী পিয়া।
দুলাভাই বলল,বর আসার অনেক দেরি। দরজা লাগিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাক।বর আসলে তোদের ডেকে নিব।
ক্লান্ত শরীর, ক্ষুধার্ত পেট। শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে গেলাম। পুরো বিয়ে বাড়ি লোক গমগম
শুধু এই একটি ঘর নিরাপদ।
আমাদের ঘুম কত জনমের ছিল কে জানে। বর এসে গেছে। দরজায় লাথিগুতা মারছে। তবুও ঘুম আমাদের ভাঙ্গে না কিছুতেই। দাদা, দুলাভাই, বিয়ে বাড়ির গণ্যমান্য মানুষ সবাই দরজা ধাক্কা ধাক্কি করছে। বরযাত্রী রাগ করে চলে যাবার ভয় দেখাচ্ছে। জানালা খোলা ছিল। জানালা দিয়ে বাঁশের কুটা ঢুকিয়ে আমাদের খুঁচানো হচ্ছে। এ যে কুম্ভ কর্ণের ঘুম! ভাঙ্গছেই না।
দাদা গালাগালি করছে। চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
কীভাবে যেন পিয়া জেগে গেছে। সেই দরজা খুলে দিয়েছে। দাদা কোলে করে অন্য ঘরে আর একজনের ঘাড়ের উপরে আমাকে শুইয়ে দিল। রাত বেশ হয়েছে।
দিদি চোখ ডলতে ডলতে বর দেখতে চলে গেল। আমি চোখ খুলে একবারে বেহুশের মতো। এখানে কীভাবে এলাম। আর একজনের ঘাড়ের উপরে কেন এটা নিয়ে চিন্তিত। এরই ভিতর বিয়ের কণে দেখলাম। আমার পায়ের কাছে বসা। বিয়ের কণে বলল, ও বিয়েন! আল্লাহ আল্লাহ করো। বর চলে যাচ্ছে “
কিছু না বুঝে কিছুক্ষণ পরে আবিষ্কার করলাম আমি জিকির করছি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি অন্য সবাই শান্ত। খুব সম্ভব বর পক্ষ শান্ত হয়েছে। লজ্জায় আমি লাল।
তাড়াতাড়ি হামাগুড়ি দিয়ে খাট থেকে নেমে বাইরে দিদিকে খুঁজছিলাম। আচমকা দিদির চিৎকারে পুরো বাড়ি হৈচৈ। শোনা গেল দিদিকে কে একজন রং দিয়েছে মুখে। বড়ো দুলাভাই অন্ধকারে বাঁশ নিয়ে ছুটেছে তাকে মারতে!
দিদি গালাগালি করছে আর কান্নাকাটি করছে। এতক্ষণে আমার হুশ ফিরেছে। আমি হো হো করে হাসি শুরু করে দিলাম।
১৯/৮/২০২৫

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD