সবুজে ঘেরা,পাখি ডাকা শান্ত শীতল গ্রামটির নাম কড়িয়াটা। গ্রামের ছোট্ট একটি মেয়ে শুভা।শুভা ছিল খুব চঞ্চল আর ডানপিটে স্বভাবের । সারাক্ষণ শুধু ছুটাছুটি আর উচ্ছাসে ভরিয়ে রাখতো চারপাশ। বন্ধুদেরকে প্রচন্ড ভালোবাসতো শুভা।শুভাদের বাড়ির দেখভাল করতো খেদু চাচা আর চাচী।তাদের ছোট ছেলে ফজু।ফজুর থেকে শুভা বেশ কয়েক বছরের বড়।ফজু আর শুভার খুব ভাব।ওরা একসঙ্গে খেলতো,বেড়াতো,মাছ ধরতো,গাছে উঠতো, আরও কত ব্যস্ততায় কাটতো ওদের দিন।
একদিন খুব ভোরে শুভা ফজুকে ডাকতে ডাকতে ওদের ঘরে চলে যায়।ফজু কিছুতেই সাড়া দিচ্ছেনা।ওদের ঘর বন্ধ। শুভা দৌড়ে ওদের বাড়ি চলে গেল।বাড়িতে ঢুকতেই ফজু বলল আফা,তুমি আইছো?আমার মেলা অসুখ তাই তোমার কাছে যাই নাই। আফা দেখছো আমি পায়খানা করলে খালি রক্ত পড়ে। আজকে তোমার সাথে খেলমুনা আফা।তুমি আমারে কাল মেলা বরই পাইরা দিও আফা।শুভা কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি তোরে অনেক বরই দিমু কালকে।তুই ভালো হয়ে যা ফজু।
পরদিন সকাল বেলা ফজু আফা বলে ডাকছে আর বলছে, আফা উঠো, আমি আইছি।বরই পারবানা আ্ফা?শুভা মহাখুশিতে ফজুর হাত ধরে সোজা চলে গেল বরই গাছের তলায়।ফজুকে শুভা বলল,তুই নীচে দাঁড়া আমি গাছে উঠি।
ফজু বলছে আফা তুমি গাছ থেকে পইড়া যাইওনা কিন্তু । শুভা বলল চিন্তা করিস না ভাই, আমি পড়বোনা।
শুভা গাছ থেকে বরই পেরে নেমে এসে বলল,ফজু এই সব বরই তোর। ফজু বললো আফা তুমি পাকাগুলা খাও।শুভা বলল আজ সব পাকা বরই তুই খা।
ফজু অনর্গল বরই খাচ্ছে আর বলছে, আফা আমি আর তোমার সাথে খেলমুনা।শুভা বলল না আমি তোর সাথে খেলবো।তোরে ডেকে আনব।ফজু খুব হাসলো শুনে।
ফজু হঠাৎ বলল আফা আমি ঘর বানামু যাইগা।তুমি আজ আবার আমাদের বাড়ি যাইও।শুভা বললো ঠিক আছে আমি যাবো। তুই এখন বাড়ি যা।
শুভা স্কুল থেকে এসেই চলে গেল ফজুর কাছে। কেন জানি সেদিন বারবার ফজুকে মনে পড়ছে শুভার।ফজু তখন বসেবসে ওর দাদার কবর পরিস্কার করে ঘর বানাচ্ছে। ফজু,শুভাকে দেখেই বলে আফা তুমি আইছো?এই দ্যাখো, আমার ঘর।আজ রাতে আমি এই ঘরে থাকমু আফা বলেই হাহাহা করে হাসলো ফজু।শুভা বলল,কবরের উপর থাকতে ভয় পাবিনা?ভয় পামুনা আফা, বলে আবার হাসলো ফজু।
শুভা বলল ফজু চল্ খেলি গে। ফজু বলল না আফা তুমি যাও আমি ঘর বানাইয়া তোমার কাছে যামু।তুমি আবার কাল সকালে আসবা আফা।শুভা বলল,আজ আমাদের বাড়ি যাবিনা।ফজু তখন খুব জোরে জোরে হেসে বলল,না আফা তুমি কালকে আমার কাছে আইসো ।
শুভা বলল ঠিক আছে আসবো।শুভা যাচ্ছে আর ফজুর কথা ভাবছে।পরদিন সকাল হওয়ার আগেই কান্নার উচ্চ শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো শুভার।ঘুম থেকে উঠে বসেই শুভা শুনতে পায় ফজু নেই।চিরদিনের জন্য চলে গেছে ওর আফাকে রেখে।আজও শুভা ফজুকে খোঁজে। ওর প্রাণ কাঁদে। ফজুর স্মৃতি আজও শুভাকে অশ্রুসিক্ত করে।
ফজু আছে শুভার স্নেহ ছায়ে,আছে তার হৃদয় জুড়ে।