মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সহড়াতলায় প্রেমিকের জোর করে খাওয়ানো হারপিকে প্রাণ গেল কিশোরী সুম্মা খাতুনের। সুম্মা গাংনী উপজেলার সহড়াতলা গ্রামের রেজাউল হকের কন্যা ও হাড়াভাঙ্গা এইসএসকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। দীর্ঘ দুই মাসের জীবনযুদ্ধে হার মেনেছে সুম্মা।
ঢাকা শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকালে মুত্যু হয় সুম্মার। সুম্মার মৃত্যু হলে সন্ধ্যার দিকে মরদেহ গ্রামে এসে পৌঁছায়। সুম্মার মৃত্যুতে পরিবার ও গ্রাম জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
এদিকে অসুস্থ থাকাকালীন সুম্মা খাতুন এক ভিডিও বার্তায় জানায়, ‘সেদিন আমাদের বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি একা ছিলাম। আমার প্রেমিক আমাদের বাড়িতে এসে বলে, পরিবার আমাদের মেনে নিচ্ছে না। আমরা দু’জন একসাথে আত্মহত্যা করবো। এই বলে সে আমাকে জোর করে হারপিক খাওয়ায়। এরপর আমি জ্বালা-যন্ত্রণায় চিৎকার দিলে আমার প্রেমিক আমাকে ফেলে পালিয়ে যায়। আমি অনেক দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছি। কিন্তু ও আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। আমি এর বিচার চাই।’
সুম্মার পরিবার জানান, একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাইদুর রহমানের স্কুলপড়ুয়া ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুম্মার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়। কয়েকবার ছেলের পরিবারকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় সুম্মার পরিবার। বিয়ের বিষয়টি ছেলের পরিবার মেনে নেয়নি। এর পর গত ২২ মে সুম্মার বাড়ি গিয়ে সুম্মাকে জোর করে হারপিক পান করায় তার প্রেমিক। পরে পরিবারের লোকজন সুম্মাকে উদ্ধার করে করমদি সন্ধানী হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এ্যান্ড হাসপাতালে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সুম্মার পিতা রেজাউল হক জানায়, ‘আমার মেয়ের মৃত্যু জন্য ওই ছেলেই দায়ী। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি পথের ফকির হয়ে গেছি। তবুও আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না’, বলতে বলতেই মূর্ছা যান সুম্মার পিতা।
এদিকে অভিযুক্ত প্রেমিক ও তার পরিবারের লোকজন গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। এ কারণে তাদের পরিবারের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের জানান, সুম্মার বাবা রেজাউল হক আজ সোমবার সকালে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।