1. admin@mannanpresstv.com : admin :
 ছোটগল্প- ধনীরা অভিশপ্ত - জেবুন্নেছা জেবু - মান্নান প্রেস টিভি
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:০৯ পূর্বাহ্ন

 ছোটগল্প– ধনীরা অভিশপ্ত – জেবুন্নেছা জেবু

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
  • ৫৩ Time View

জনস ছিলেন  অতি ধনী  ব‍্যবসায়ী মিটিং  সেমিনার কোটি কোটি টাকার কোম্পানী অর্থ বিত্ত খ‍্যাতিতে পরিপূর্ণ  একজন মানুষ সময়  বের করা তার জন‍্য ভীষন কষ্টকর  ব‍্যস্ততাই তার জীবন।

বন্ধু জোসেফ  বলতো এভাবে  রাত দিন পরিশ্রম করো না,মানুষের  জন‍্য নিজেকে অসুস্থ করো না, নিজেকে একটু সময়  দাও।
জনস হেসে বললো একজন রিক্সা ওয়ালাকে  দেখো, সেও আমার  মতো একজন মানুষ , রাতদিন দুই মুটো ভাতের জন‍্য,  বাচাঁর জন‍্য কতো কষ্ট করে। কই তাকে তো কেউ বলে না একটু নিজের শরীরের  যত্ম নাও।

শুনে জোসেফ  বললো আচ্ছা  বন্ধু, তুমি তো মানুষ কে ভালোবেসে কতো কি করো।
আমি গরীব কতো কষ্ট করে মুখে হাসি রেখে কথা বলি বাঁচি তবুও  তোমায় কিছু  বলি না, আমার  দুঃখ শুনার সময় ও নেই তোমার।

জনস বললো- আজকে তুমি যা বলবে তাই শুনবো, যা চাইবে তাই দেবো বলো।
জোসেফ বললো আজ নয় অন‍্য একদিন  চাইবো কথা দাও আমার অনুরোধ রাখবে?

জনস বলে দিলো অবশ্যই  রাখা হবে। আমি ব‍্যস্ত থাকলে ম‍্যানেজার তা পালন করবে।
জোসেফ  চলে গেলো।
কয়দিন পর  জোসেফ এসে বললো -তোমাদের  স‍্যার কে বলো আমি আজ কিছু  চাইবো,
জনস তখন ব‍্যস্ত মিটিং  নিয়ে ।
ম‍্যানেজারকে একটা  চেক দিয়ে  বললো এটাতে  যতো ইচ্ছা  অংক লিখে দিতে  বলো আমি  পে অর্ডার  করে দেবো।
জোসেফ  বললো- আমার  কিছুই লাগবে না,তোমার  স‍্যার যখন ফ্রি হবে আমি কথা বলতে চাই।
জনস ফ্রি হয়ে ভাবছিলো,
জোসেফ  না জানি কতো লাখ টাকার অংক বসিয়ে  দিয়েছে।

কিন্তু  ম‍্যানেজার এর কথা শুনে তো জনস অবাক, এতো বড় অফার সে ত‍্যাগ করলো আর কি কথা বলতে চায় সে জানতে চায় জনস।

ডেকে পাঠালো জোসেফ কে, সে এসেই বললো আমি কিছু  চাই না বন্ধু  শুধু এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিট  সময়  চাই।
জনস বললো কিন্তু  কেনো?
তুমিতো বন্ধু জানো, আমার  সময়  কতো মূল‍্যবান । ঐ সময়ে  আমি একটা উড়োজাহাজ  কেনার মতো ব‍্যবসা হাতছাড়া  হয়ে  যাবে।
তুমি বরং আমার  সাথে বিমানে আসা যাওয়ায়  শুধু ত্রিশ মিনিট  সময়  নাও।

জোসেফ  বললো না, তুমি কথা দিয়েছো আমি যা চাই  দেবে।
আমাকে দেড় ঘন্টা সময়  দাও যাবার বেলায়   কিছু  দৃশ্য  দেখে দেখে যাবে
আর আমি দেখবো তোমার  যাত্রা পথে মুখের না বলা অভিব‍্যক্তি, বিরক্তি।
জনস বললো কথা যখন দিয়েছি রাখতেই হবে, কি করার আমার  কোটি  টাকার লস হবে।
জোসেফ  বললো-  তুমি ভাবো তুমি অনেক অনেক  দায়িত্ব  পালন করছো সমাজে মানুষকে দান  করছো, কম্বল বিতরন,খাবার  সাপ্লাই,  সেলাই মেশিন  সহ কতো কি  দান করো   কিন্তু  তুমি জানো না সমাজের একটা অংশ তোমাদের  মতো ধনীদের  ঘৃনা করে।
তোমাদের  মতো মানুষেরা টাকার  ঘোরে তা ভাবতেই  পারো না।
জনস বিস্মিত  হলো কি বলছো?
গ্রামের পথ দিয়ে  গাড়ি  চলছে  দেখছে রাস্তার দুই ধারে পুকুর  খনন করা ভঙ্গুর রাস্তা ভয়ে কুঁচকে যাচ্ছে  জনস এর চেহারা ,
মাঝে মাঝে দেখছে  ছোট্ট  শিশুদের  গায়ে কোন পোষাক নেই, অবহেলায় বেড়ে উঠা  কতো প্রাণ।
অসহায়  বৃদ্ধ হাতে লাঠিতে ভর করে হাটছে গাড়ি  দেখলে অবাক হয়ে  দাড়িয়ে দেখছে।

এবার  একটা  নীরব অন্ধকার  বাড়ির সামনে গাড়ীটা থামাতে বললো জোসেফ,
গাড়ীর শব্দে  কেউ আসলো না কেউ বের হলো না।
জোসেফ  ধাক্কা দিতে ই দরজা খোলে গেলো
ভেতরে জনসকে নিয়ে  প্রবেশ করলো  লাইট সব জ্বালিয়ে দিলো।
জনস প্রশ্ন করলো এখানে  কেনো এনেছো? জোসেফ বললো কিছু  কি দেখতে পাচ্ছো  না?
জনস বললো হ‍্যা দেখছি এখানে  বিভিন্ন  বয়সের শিশুরা  খেলায় মগ্ন।ওরা কি  আমাকে  চেনে না?
কেনো ওরা আমাদের  দিকে তাকিয়ে  ও দেখছে না?
জোসেফ বললো  তুমি বসো  ভালো  করে করে  দেখো ওরা  আসলে কেমন।
জনস বললো  ওরা ওদের খেলার জগতে  পুরোপুরি  ব‍্যস্ত কি আর দেখবো।
তারপর  জোসেফ  বললো ঠিক  তোমার মতো যেভাবে  তুমি ব‍্যবসা নিয়ে  নিজের  ভেতর  ডুবে থাকো।
তুমি  এখনো  মন দিয়ে  ভালোবেসে ওদের  দিকে তাকিয়ে  দেখোনি।
তারপর  জনস নিজের ব‍্যবসা জগত হতে ধ‍্যান দিলো শিশুগুলোর  দিকে মনদিয়ে দেখতেই দেখলো শিশু গুলোর কারো পা নেই হাত নেই অন্ধ বোবা প্রতিবন্ধী যারা খুবই  অসহায়।
তাদের  অসহায়ত্ব নাড়া দিলো জনস্ এর মনে।
তারপর দাড়িয়ে  ওদের  দিকে গেলো ওদের  জিজ্ঞেস  করলো তোমরা কি আমাকে চেনো না?
ওরা বললো চিনি টিভি তে দেখি আপনি বিশিষ্ট ধনকুবের।
জনস বিস্মিত  হলো, তাহলে তোমরা নিরব কেনো?
হুইল চেয়ারে বসা একটা ছেলে এগিয়ে  আসলো বললো আমরা আপনাকে ঘৃনা করি।
জানতে চাইলো  কেনো?
তারপর জোসেফ  বললো বাচচারা তোমরা খেলা বন্ধ করে এদিকে  মন দাও।
শুনো বাচ্চারা আমি জানতে চাই কোন অপরাধে তোমরা এতো বড় ধনী মন্ত্রীকে ইগনোর  করছো,
যাকে স্বাগত জানাতে লক্ষ মানুষ  ফুল নিয়ে  দাড়িয়ে  থাকে।
সবচেয়ে  বড় শিশুটা হুইল চেয়ার নিয়ে  আর কিছু  শিশু মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে  কাছে এসে বললো,
জীবনের প্রতি আমাদের  কোন কিছু  চাওয়ার নেই।
জন্মের  পর হতে আমরা ভালোবাসা আদর যত্ন পারিবারিক স্নেহ ও ঠিক মতো  খাবার টাও আমাদের  জোটে না।
আমরা প্রতিবদ্ধীদের মা বাবারা ও ভালোবাসে না। বলুন আমাদের  জন‍্য আপনাদের  মতো ধনীদের সময় অর্থ   ভালোবাসা কখনো কি থাকে?

আমরা ও মানুষ ,কেউ কি প্রতিবন্ধী হতে চায়?
কেনো আমাদের  জীবন কাটে অন্ধকার একটি ঘরে?
কেউ কখনো আমাদের  মাথায়  হাত ভুলিয়ে  দেয় না?
ঘুম পাড়িয়ে দেয় না,আদর করে না? আমাদের  কোন ইশ্বর  নেই,

জনস এর চোখ হতে নিরবে জল ঝরছে আর বলছে বলো আমাদের ঈশ্বর  হলো
জোসেফ, যিনি আমাদের খাবারের  ব‍্যবস্থা করেন  নিজের জমির সব ফসল আমাদের  জন‍্য উৎর্সগ করেন।দ্বিতীয় জন দর্জি,যিনি  আমাদের কাপড়ের  ব‍্যবস্থা করেন। তৃতীয় জন যিনি  আমাদের  থাকার জায়গা দিয়েছেন।
পৃথিবীর কাছে আমাদের  কোন চাওয়া  নেই লেনাদেন নেই।
বলুন ধর্ম কি আমাদের  ভাত দেয়? সমাজ রাষ্ট্র কি আমাদের  দেখে?
আপনাদের ধন আমাদের  কোনো কাজে আসে না ওসব আম্বানীদের আমরা অভিশাপ  দেই।
জোসেফ বললো  বন্ধু জনস তোমার  সময়  তো শেষ হয়ে  গেলো…..

জনস বললো -না না আমাকে শুনতে দাও, ওদের  কাছে আমার  অনেক কিছু  জানার আছে।
এতোদিন  আমি একটা ঘোরে ছিলাম।
জনস আবার  বাচ্চাদের  উদ‍্যেশ‍্য করে বললো শোনো বাচ্চারা আজ হতে আমি  তোমাদের  জন‍্য  সব করবো,বলো তোমরা কি চাও?
সবাই  নীরব….
জনস বললো বলো?
সবাই  এক বাক‍্যে বললো -আমাদের  তিনজন দেবতাই আমাদের  সব,আমাদের  কিছুই লাগবে না  আপনি চলে যান

খুব দুঃখ ভারাক্রানত মন নিয়ে চলে যাচ্ছিলো  জনস, ভাবলো কতো অভিমান  বাচ্চাদের  মনে, মানুষের  প্রতি কতো ঘৃনা ওদের।
হঠাৎ একটা ছেলে বললো দাড়াঁন বাবা,
ঘুরে দাড়ালো জনস।
দেখলো সব পঙ্গু শিশুরা যে যেভাবে পারছে তার দিকে এগিয়ে  আসলো বললো –
আপনি যদি আমাদের  জন‍্য সত্যি কিছু  করতে চান  তাহলে আমাদের মতো মাতাপিতা হীন, পথশিশু, অনাথ এতিম পঙ্গু প্রতিবন্ধীদের জন‍্য এই রকম আরো কিছু  প্রতিষ্ঠান গড়ুন।
আমরা আমাদের জন‍্য কিছু  চাই  না, আমরা আমাদের মতো শিশুদের  সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন‍্য আপনাদের ভালোবাসা ও সাহায্য চাই।
জনস অবাক হয়ে ভাবলো,
ওদের মতো আমরা সুস্থ মানুষেরা  স্বার্থ মুক্ত হতে পারি না।
কতো বড় ওদের  আত্মা!
জনস কাঁদছিলো,, জনস বললো  আমি আজ ভার মুক্ত হলাম।
আমার  এতো ধন সম্পদ থেকে ও আমি এখানে এসে ওদের  জন‍্য কিছু করার  প্রতিশ্রুতি দিয়ে  যে শান্তি  পাচ্ছি  হৃদয়ে, তা অন‍্যকিছুতেই পাইনি।
ধন্যবাদ  জোসেফ,আজ হতে আমার  কাজের  ধারা বদলে ফেলবো।
আমরা দান করি  নাম কুড়াই কিন্তু  মনুষ্যত্ব বোধকে জাগিয়ে   সত্যি কি এদের জন‍্য কিছু  করি?
জোসেফ  বললো -আমাকে ক্ষমা করো বন্ধু তোমার  সময়  অনেক আগেই  শেষ হয়েছে।
জনস বললো আমাকে লজ্জিত  করো না।তুমি গরীব  হয়ে এদের  জন‍্যে যা করো,আমি  ভাবছি আমি তা করার চিন্তা ও করিনি কখনো। ধনীর ধন আসলে উপযুক্ত  জায়গায় ব‍্যবহার হয়  না।
আম্বানীদের ধন ধনীদের জন‍্যে ব‍্যয় হয়, আজ বুঝলাম ঘৃন‍্য অভিশপ্ত সেই ধন ও জন।।

সমাপ্ত

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD