আমাদের বাচ্চা ছেলেমেয়েদের বই খাতা পেন্সিল কলম কাঁধে করে এই সময়ে স্কুল-কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকার কথা ছিলো। কিন্ত,দুর্ভাগ্যবশত তাদের হাতে উঠেছে ইটপাথর,লাঠি,বাঁশি! তারা রাজপথে নেমে আসতে হলো এবং দলিয় রাজনীতির রোষানলে
পড়তে হলো! এখন তাদের লেখাপড়ার সময়, ক্ষমতা এক্সারসাইজ করার সময় নয়,রাজপথে থাকার সময় নয় (কিছু ছাত্র ব্যাতিত)? কিন্তু তারা করলো,এক অসাধারণ কাজ করলো, অল্পসময়ে ওরা যা করলো, শিখলো ,কল্পনার স্বপ্নিল চোখে আগামী জীবনের রঙিন স্বপ্ন দেখলো! আমার শঙ্কার জায়গাটা হলো এখানেই, ছাত্রদের এই মুভমেন্ট গুলো তাদের কঁচি মনের ভেতর একটা অনৈতিক কিংবা নৈতিক মানুষিক প্রভাব আর ভয়ঙ্কর দর্শনের প্রতিফলন ঘটবে! এই প্রভাবিত হওয়ার প্রতিফলন আগামী সময়ে আমাদেরকে দেখতে হবে,কোন সন্দেহ নেই! আমাদেরকে শুধু কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। পশ্চিমাদের থেকে আমরা ভালো কিছু গ্রহণ করছি না তাই শতবছর পিছিয়ে পড়া জাতি হয়ে আছি।কথাটা বললাম এই জন্যে যে, পশ্চিমারা কোন কিছু শক্তি, কাজ ও সময়কে সঠিক মূল্যায়ন করে চলেন। কিন্তু, আমরা, ” সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করি না,উপযুক্ত মানুষকে সঠিক জায়গায় বসাই না, সঠিক আইটেম সঠিক ব্যবহার করি না ” আমরা কামারকে কুমারের কাজ করাই, সুইপার কে পাচকের কাজ করাই, স্বর্ণকার কে মুচির কাজ করাই, ডাক্তারকে প্রশাসনের কাজ করাই, প্রকৌশলী কে কৃষক বানাই! এই যে গুণ ও জ্ঞানের সাথে কর্মের অসামর্থ্য ও অসামঞ্জস্য কর্মসূচি ও জীবন রচিত করি এটি পরিবার সমাজ থেকে রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে এক জাতীয় উপর অভিশাপের মতো চেপে বসেছে। আর এই দুর্নীতি ও বৈষম্যের কর্মব্যস্ততা গুলো আমাদেরকে উন্নয়নে বাঁধা গ্রস্ত করে। সুন্দর ও সুস্থ ধারার সভ্যতা বিকাশে অন্তরায় হয়ে উঠে। এতে করে না হয় শিক্ষাদীক্ষার উন্নতি, না হয় কৃষি শিল্প বিজ্ঞান সাহিত্য সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র নীতির সঠিক পরিচর্যা।
আমাদের দেশের তিপ্পান্ন বছর স্বাধীনতার বয়স অতিক্রান্ত হলো, আমরা কি কোন একটি সেক্টরের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পেরেছি? প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে কি বিশ্ব মানদন্ডের প্রতিযোগীকে খুঁজে পেয়েছি। কোন একজন বিশ্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শিক্ষক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, কৃষক, খেলোয়াড় পেয়েছি ? কোন কিছুতেই আমরা মনের মতো করে সভ্যতার পরিচয়ে এমন কোন শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারিনি! কারণ একটাই, আমরা কখনো সঠিক কিছু অর্জনের জন্যে সঠিক বিষয়ে মনোযোগী হয়ে কর্মপন্থা,
কর্মপরিকল্পনা অবলম্বন করতে চাই না! যাহা আমার কাজ তাহা আমি করি না! এর একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ বললে ভুল হবে না,” মনে করেন অতি সংবেদনশীল বিষয় তবুও একটু আলোকপাত করতে চাই। দরুন, রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্যে আমাদের রাজনৈতিক পেশার লোক প্রয়োজন। উনারা
রাষ্ট্রের নানান নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনা করবেন। এই শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্যে প্রধানতঃ দুটো পক্ষ বিপক্ষ থাকবে। একটি পক্ষ ক্ষমতা বসে কাজ করবেন অন্যটি ক্ষমতাসীন পক্ষের খুটিনাটি যাবতীয় বিষয়ের ভুল ত্রোটি গুলো জনসম্মুখে উন্মোচন করবেন এবং কঠিন সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে করবেন। এটি সংসদ কিংবা সংসদের বাইরে অর্থাৎ রাজপথে নেমে আসবেন এবং জনসমর্থন আদায় করে নিজেরা ক্ষমতায় বসতে চেষ্টা করবেন। এটি রাজনৈতিক কর্মীদের নৈতিক দায়ভার ও কাজের শিষ্টাচার।
কিন্তু আমরা কি দেখছি? দেখছি,উনারা অনৈতিক ভাবে তাদের নিজেদের কাজটি অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে থাকেন। যেমন ধরুন, সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত অনৈতিক কার্যক্রম জনহিতকর নয় ; এমন কার্যকলাপ গুলো নিয়ে দরকষাকষি করবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু, আমাদের দেশে দেখছি কি এর বিপরীত সম্পূর্ণ উল্টো মেরুর মানুষ দ্বারা উনারা একটি চলমান সরকারের পতন ঘটানোর মাধ্যম অবলম্বন করেন। যাহা,দেশের রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্র গুলোর চরম অবনতি ঘটিয়ে চলেছে। এতে করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন সত্যিকারের উপযুক্ত ও সঠিক রাজনীতিবিদ সৃষ্টি হচ্ছে না আবার এর মন্দ প্রভাব’ও মারাত্মক ভাবে অরাজনৈতিক সংগঠনের উপর পড়ছে,ফলে একধরনের স্বেরাচারীতা গড়ে উঠেছে। রাজনীতি দেশের মানুষের মাঝে সার্বজনীন হয়ে উঠছে না,অর্থাৎ দেশের সর্বসাধারণের জন্যে একজন উপযুক্ত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের উপস্থিতি এখনও স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভাব হয়ে আছে! ২০২৪,জুলাই আন্দোলন সত্যিকার অর্থে কোন প্রেক্ষাপটে শুরু হলো এবং এর প্রতিবাদ ও দরকষাকষি করে জনবান্ধন করে তুলার কাজ কারা করলো? যাদের করার কথা ছিলো তাদের উপস্থিতি রাজনৈতিক ভাবে নেই? একদল অরাজনৈতিক ছাত্রদের কাঁধে এর দায়ভার তুলে দিলো! আমরা দেখলাম রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে একদল ছাত্র রাজনীতির মাঠে নেমে পড়লো, লাঠিসোঁটা হাতে দাঙ্গাহাঙ্গামা করতে হলো, ওরা আমাদের কোমলমতি ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়ে। এই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাচ্চাগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হলো, ওদেরকে অপসংস্কৃতি চর্চার পথ উম্মুক্ত করে দিলো, ওদেরকে গিনিপিগ করে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের লক্ষ্যে এই ছাত্রদের হাতে রাজনীতি তুলে দিলো! রাষ্ট্রের ট্রাফিকের কাজ ধরিয়ে দিলো, থানা,হাটবাজার, রাস্তাঘাট ঝাড়ু নর্দমা পরিস্কার থেকে সামাজিক নিরাপত্তা ও মানুষের জানমালের দায়ভার তাদের হাতে অবাধে ন্যাস্ত করে দিলো? অথচ, তাদের এই কাজগুলো করার কথা ছিলো না। তাদের এখন ভালো লেখাপড়া করে জীবন গড়ে তুলার সময়! লেখাপড়া শিখে দেশ ও বিশ্বের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করার প্রকৃত ও সঠিক সময়! কিন্তু কি দেখলাম আমাদের রাজনৈতিক সমাজ ওদেরকে একদিন দু’দিন নয় বহুদিন ধরে তাদের কে লেখাপড়া থেকে দূরে সরিয়ে অযাচিত অশোভন শক্তিমত্তার মহড়া দেবার কাজে মনোনিবেশ করিয়ে রাখলেন!
আমাদের দেশের ছাত্রদের যা করার কথা নয়,তা করানো হচ্ছে, একধরনের মানুষিক পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। অর্থাৎ, তাদের দ্বারা অস্বাভাবিক কর্তৃত্ববাদী কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে অনৈতিক মানসিকতার বেড়াজালে আটকিয়ে ফেলা হচ্ছে! আমি নিজের চোখে দেখেছি,এই কচি বাচ্চা ছেলেমেয়েরা সহাস্যে মহানন্দে উৎফুল্ল চিত্তে নেচে-গেয়ে হাসিতামাশা করে একটি শক্তিশালী চলমান পূর্ববর্তী অপশাসনের সরকারের হাত থেকে রাষ্ট্র অবমুক্ত করে আরেকটা নতুন অপশাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছেন। গত সময়ের অপশাসনের যারা এতোদিন চান্দা ধান্দা জোরজুলুম অত্যাচার করতো, সমাজের মানুষকে হয়রানি করতো, তাদের পরিবর্তে নতুন আরেক শ্রেণীর দ্বারা সমাজের সেই মানুষ গুলো আবার নতুন করে চান্দা ধান্দা জোরজুলুম অত্যাচাররীর হাতে পড়ে গেলো! ছাত্রদের কে এই খারাপ অবস্থা থেকে তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তির মতো নিয়ন্ত্রণের জন্যে সমাজের রাজনৈতিক মতাদর্শে মদদপুষ্ট ঐ অশুভ চক্রের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে দারুণ চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে হচ্ছে! এই অন্যায় আঁচ করতে পেরে আমাদের ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েরা প্রতিরোধ করতে সাধ্য মতো বল প্রয়োগের মতো আচরণ করতে হচ্ছে। এই যে আদর্শিক ও নৈতিক আচরণের পরিবর্তন এবং অবক্ষয় ছাত্রদের মাঝে গড়ে উঠলো এটি আমাদের ভবিষ্যৎ জাতিগঠনে মোটেও সহায়ক হবে না!
কেননা, হাইস্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মনে ভিষণ ভাবে একটা লিডারশীপ দেয়ার মতো মনোভঙ্গি তৈয়ার হয়ে গেছে, তারা বুঝে গেছে কি করলে কি হয়। এই যে অপরিপক্ক বয়সে অস্বাভাবিক ও বিশাল কর্তৃত্ববাদী জ্ঞান রপ্ত করলো এটি ছাত্রদলের কে কচি বয়সে দারুণ বিশৃঙ্খল ও উশৃঙ্ঘল জীবনের গতিপথ অনুসরণ করতে উদ্ভুদ্ধ করবে বলে আমি মনে করি। যাহোক, বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে বিস্তারিত বলতে চাই না। দীর্ঘদিন আমাদের সন্তানেরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে না যেয়ে রাস্তায় আন্দোলন সভা মিছিল, প্রতিবাদ, বিপ্লব ঘটাতে দারুণ যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন,রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিয়েছেন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, থানা,পাড়া-মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, চান্দা ধান্ধাবাজদের দৌরাত্ম থেকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে রাজনীতিবিদদের মদদপুষ্ট গুন্ডাপাণ্ডাদের সাথে লড়াই করেছেন, যথেষ্ট করেছেন এখন আর নয়! দয়া করে অতি দ্রুত ছাত্রদের উপর থেকে এসব দায়িত্ব তুলে নিয়ে আপনাদের রাজকর্ম বন্ধ করুন। আমাদের কোমলপ্রাণ ছেলেমেয়েরা দীর্ঘদিন লেখাপড়া থেকে এক্কেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন! আগামী রোববার ১৮/০৮/২০২৪ ইং তারিখ হতে নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে,শুনে মনের মাঝে সুখবোধ করেছি। আমাদের ছেলেরা যেনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন,আবার যেনো নতুন করে কোন দাঙ্গাহাঙ্গামায় জরিয়ে না পড়েন, এই কামনা করি। তবে কেনো যেনো আমার মনে অনেক ভয় হয়! স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর ক্লাসে গিয়ে যেনো আমাদের সোনার ছেলেমেয়ে’রা দলিয় বিশৃঙ্খলার কারণে উশৃংখলা না হয়ে পড়েন, নতুন করে যেনো আরেক নতুন বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতা কামনা না করে। আমাদের দেশটা সকলের,সবাই মিলেমিশে এক হয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে ভাইভাই বলে একসাথে চলতে হবে। অন্যথায় আমাদের দেশের এই কোমলমতি বাচ্চা ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নির্ঘাত অন্ধকার।