জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের অমোছনীয় কালি কেনার টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছিলেন কামালপুত্র জ্যোতি। সে সময় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি আঁচ করতে পারলেও প্রকাশ করার সাহস করেননি। একটি শীর্ষ গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন করলেও তাতে শাফি মুদ্দাসিরের নাম উল্লেখ করেনি। যেখানে সর্বনিম্ন দরদাতা টেন্ডার পায়, সেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার পরও কালি কেনার কাজটি পান শাফি ও তাঁর সিন্ডিকেট।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর পুরো ধানমন্ডি এলাকায় ছিল তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য। ধানমন্ডি রেস্টুরেন্ট দেওয়ার জন্য শাফি মুদ্দাসির জ্যোতিকে দিতে হতো ১ থেকে ২ কোটি টাকা। টাকা দিলে কোনোরকম যাচাইবাছাই ছাড়াই মিলত লাইসেন্স। আর লাইসেন্স করতে বাবার প্রভাব খাটাতেন জ্যোতি। শুধু তাই নয়, এসব রেস্টুরেন্ট থেকে যেসব চাঁদা নেওয়া হতো তা-ও এক হাতে সামলাতেন জ্যোতি।
শুধু রাজধানীর কারওয়ান বাজার এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকেই প্রতিদিন দেড় কোটি চাঁদা উঠত। এর বড় অংশ চলে যেত জ্যোতির পকেটে। এর বাইরে রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাত, বাজার, মাদক কারবার ও আবাসিক হোটেল থেকে ওঠানো চাঁদার বড় একটি অংশ চলে যেত জ্যোতির কাছে। এ টাকা তাঁদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিল মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনসহ আরও দুজনের। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলোয় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল জ্যোতির। এ বিষয়টি তাঁর পক্ষ থেকে দেখভাল করতেন তাঁর বন্ধু খ্যাত ২৯ বিসিএসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী। আশুলিয়া থানার মামলায় কাফী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। দেশব্যাপী ২০০ থানায় ওসি নিয়োগে অন্তত ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় জ্যোতি সিন্ডিকেট। দেশে এবং বিদেশে পুলিশে নিয়োগ, পদায়ন, বদলি, আসামি ছেড়ে দেওয়ার সবকিছুই দেখভাল করতেন কাফী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির। তবে কারাগার, ফায়ার সার্ভিস, মাদক ও আনসারের বিষয়টি দেখতেন মনির। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব টেন্ডারে মোটা অঙ্কের ভাগ পেতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। অর্থের বড় একটি অংশ ইউরোপে লেনদেন হতো। জার্মানিতে নিজের নামে বাড়িও গড়েছেন জ্যোতি। সীমান্তে চোরাচালান এবং গরুর খাটাল নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ মিজান ও আজিজুল হক রানা। নিকেতনে ও ফার্মগেটে তাঁর নিজের অফিস থেকেই সব অপকর্ম বাস্তবায়ন করতেন। তবে সুন্দরী রমণীদের নিয়ে মাঝে মাঝেই জ্যোতি চলে যেতেন সাভারে অটো ব্রিক ফিল্ডে। সব ধরনের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা রাখা হতো আগে থেকেই।