ছুঁই ছুঁই সন্ধ্যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়
টিএসসি থেকে শহিদ মিনারের পথে হাঁটছি
নির্জন চারপাশ, জ্বলে উঠছে আলোর গাছ
উন্মুল বাতাসে, পঞ্চাশ কদম এগোতেই
পিছন থেকে কেউ ডাকল, ‘দাঁড়াও’।
.
আঁৎকে উঠলেও নিজেকে সামলে নিয়ে
ঘুরে দাঁড়ালাম, কোথাও কেউ নেই!
কয়েক কদম এগোতেই প্রতিধ্বনিত হল
‘দাঁড়াও, দাঁড়াও বলছি’!
.
অন্ধকার হাঙর, গিলে খাচ্ছে কমলা রঙের আলো
দেয়ালে দেয়ালে কাফন সাদা বর্ণমালায় উৎকীর্ণ
শৃঙ্খলিত গণতন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়ার স্লোগান!
.
ধীরে ধীরে তিনটি ছায়ামূর্তি স্পষ্ট হলো
প্রথমজন বরকত, দ্বিতীয়জন মুনির চৌধুরি
তৃতীয়জনের দিকে তাকাতেই বলে উঠলো
‘আমি নাম না জানা, ত্রিশলক্ষ শহিদের প্রতিনিধি’
ভরকে গেলাম, স্বপ্ন দেখছি নাতো?
ওনারা তিনজনই সমস্বরে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
.
‘আমাদের রক্তে গড়া স্মৃতির মিনারে ওরা কারা?
বুকের পাঁজরে দাঁড়িয়ে অবলীলায় করছে মিথ্যাচার?
দিয়ে যাচ্ছে চাতুর্য ভরা আশ্বাস
ভাঙছে কোটি মানুষের বিশ্বাস
ওদের ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আজ “শহিদ রক্ত?’’
.
ঢোক গিলে ভীরু ভীরু কণ্ঠে বললাম
শহিদের রক্ত কখনো মোছা যায় না।
ত্রি-কণ্ঠ ধমক দিয়ে জানতে চাইলো
: মায়ের ভাষাকে কি নিতে পেরেছ আনুষ্ঠানিকতার বাইরে ?
সুশিক্ষার আলো কতটুকু ছড়িয়েছ আমার এই বাংলাদেশে?
আচার আচরণে কী পরিপূর্ণ বাঙালিয়ানা আছে?
.
: বাক স্বাধীনতার কতটুকু ভোগ করছ?
বুদ্ধিজীবীরা দলবাজিতে বিকারগ্রস্ত
মন গড়া কথনে ইতিহাস ক্ষত-বিক্ষত।
.
: মৃত্তিকা ঘিরেছ কেন কাঁটাতারের বেড়া
স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে কেন উড়ে রক্ত পতাকা
তোমাদের উন্নাসিকতায় মুক্তিযোদ্ধারা এখন জীবন্ত মূর্তি
গায়ে নানান দলের তকমা, চোখে বাঁচার আকুতি
আর শহিদ পরিবার, হীনম্মন্যতার জেলখানায় বন্দী।
.
প্রশ্নোত্তরে, পাথরের মতো থেকেছি নিশ্চুপ
অশ্রু সজল চোখে থেকেছি নিষ্পলক
অমাবস্যার আকাশে খুঁজেছি সংশপ্তকদের প্রতিবিম্ব
স্মৃতিসৌধের কাছে নতজানু হয়ে জানতে চেয়েছি
অবহেলা আর বঞ্চনার ইতিহাস।
.
এক ভোরে দোয়েল শিস দিয়ে জানালো
শহিদরা কখনো কাউকে ধমক দেয় না
ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে মাত্র
অন্তরাত্মায় দেশপ্রেমের আবির ছড়ায়।
রক্তে কেনা লাল সবুজ পতাকার উড্ডীন ধ্বনিতে
আমার তৃতীয় নয়ন খুলে যায় অসীম সাহসিকতায়।