ঝমঝম ঝমা, নাহি যেন কমা—আষাঢ় প্রথম ভোরে,
দারুণ বৃষ্টি, আজকে সৃষ্টি তুলব যতন ক’রে।
রাকিব হাসান, চাটগাঁর পান—এতকাল পর আজি,
তূর্ণা নিশীথা, পাশে বসা রিতা—ফকিরের বেশ সাজি।
ফকিরের ধারা, আছে কোন পারা? দেখে রণরূপ থামি—
“আহারে মরণ! খুঁজিছ স্মরণ,” কহিল ঘরণী, “আমি!
বসবে তো ঠিক? থাকবে না দিক? এছাড়া অন্য কিছু?
কী-বা লাভ সাথে, সারাদিন রাতে—থেকে বইখাতা পিছু?”
শুনতেছি পরে—“যাই বলো, ঘরে!” রাকিব, কেবিন শেষে,
বসা রেলগাড়ি, দিল এই ছাড়ি—“কোথা কী, বসব বেশে?”
পথধার কাছে, থালা রেখে পাছে—কাজের ধরন যাহা,
থাকবে না আর এই সংসার-ঝুলি—কাঁধে তুমি ‘আহা’!
নয় তাহা কম, পাবে কিছু দম—কলম পেষার চেয়ে—
ঢের সে তো ভালো! শোনো—হবে আলো, বৃষ্টি কালটা যেয়ে।
“কী-বা ছাই হবে? দেখো এসে তবে! ঘর পাকঘর কাদা!
নেই চালডাল—কী যে কলিকাল! নয় কি কাব্যে বাধা?
“লেখো বসে কত, ফাও কথা যত—তুমিও পারো তো বটে!
সংসার ভুলে, শত ঘাট কূলে—ছিল এই মোর ঘটে?
ওপাশের রানি, স্বামী তার আনি—দিয়েছে গলার হার,
আর সাবিনারা করাচিতে—তারা, দালান বিরাট আর!
“এই যে বাহার, কত টাকা তার—কলেজেতে নাকি ফেল!
তুমি পাশ করে, সাথে আরও পড়ে—কী কী, তবু নেই হেল!
আরে, চুপ থাকো! ডাঁটা শাক রাখো! বলি, শোনো মোর কথা—
রাকিব হাসান, দূর ধাবমান, রেলেতে চড়িয়া যথা।
বেণী বাঁধা যার, যুবতিনী ধার—হয়েছে! হয়েছে, থামো!
চালচুলা নাই, লেখা পাঁশছাই—সব ছেড়ে কাজে নামো!
বল কী যে তুমি? শত বিঘা ভূমি কিনি যদি আজি বলো?
এত তাড়াতাড়ি? যাই বাপবাড়ি—যেতে নিজ পথ, চলো?
“ঠিকানাটা হবে? না কি দোষ কবে? আচ্ছা, নিন তো লিখে।”
“ওহ, বলো শুনি, ওগো মোর গুণী! খেয়াল আছে এদিকে?”
“হায়, বলো কী যে! কোথা? এই ভিজে—শুধু মেঘঝরা পানি!
আচ্ছা, রিতার ছাতা দরকার—কেমনে নামবে, জানি?”
ঠিকানাটা নিতে, চায় ছুঁয়ে দিতে—মেয়েটির হাত পরে—
নাম জানিয়াছে, কিছু আগপাছে—বেশি হলে দোষ ধরে!
ধরো, নাও ব্যাগ—করিল যে ত্যাগ ঘরণী কাছের থেকে,
কী-বা বলে গেলে, স্মরণে না মেলে—বেসাত বাজার দেখে!
আসিল সে জোরে—“ক্ষমা করো মোরে, মন কী-বা হেথা থাকে?
এই ঝালমুড়ি, নাই শুনে জুড়ি—রিতা যে কিনতে ডাকে।”
দিল তার থেকে, রাকিবেরে ডেকে—“নেন না, প্লিজ, কিছু!”
খায় না তেমন, আজকে যেমন—নিল হাত করে নিচু।
“ও কী করো আজ? কাগজের ভাঁজ—এই যে ফর্দ পাতা!
ওহ! তাই দাও, আনি সব তাও—বেসাতি ছ’মাস যা-তা!”
“হায় রে মরণ! কথার ধরন—পারবে কে তার সাথে?
বাজারটা যার, করা লাগে ধার—দিনের আনতে হাতে।
সে আনিবে কিনে, শত আঁশি দিনে—বেসাতি সত্য তবে—
ধরো, নাও! এই শাক, বেচা সেই—আঁশি টাকা, কী-বা হবে?”
“হবে, হবে ঠিক! আছে কত দিক—মোবাইল মোর কাছে।
ফোন দিও গিয়ে, কারও চেয়ে নিয়ে—তারপর কথা আছে।”
“নাও ধরো, যাও! শুধু কাজ ফাও—ত্বরা করে সব আনো!”
“আনব না আর! কী-বা বেশি ভার? মানো, আর নাহি মানো!”
এই চলিলাম, দেখি দরদাম—তারপর কী-বা যেন—
ওহ! ঠিক ঠিক—রেল, শেষ দিক, দু’জন দু’দিক হেন।
নেমে অবশেষে রিতা ফিরে এসে বলে—“নাম কী-বা জানি?
রাকিব হাসান, ঢাকা, গুলশান—আরে, দেখি ফুলদানি?”
বাহ! বেশ বেশ! কেনাকাটা শেষ—যাক, এইবার ফেরা!
হায় হায়! যেই আসি ঘরে—সেই ঘরণীর ধুম জেরা!
ঝড় বুঝি নামে? বুঝি ভুল বামে? কোথা সে ফর্দ গেছে?
লেখা ছিল যাহা, আনি নাই তাহা—ডাঁটা শাক আনি বেছে!
কী-বা করি আর! দেই হাতে তার ফুলদানি, শেষ তুলে—
বলে, “ফুল কই?” “আছে, বলি ওই! তুমি ফুল, রবে দুলে!”
মুছে ভেজা চোখ, বলে—“নেই লোক, এত কথা কেউ জানে?
ভুবনের পরে, শুধু মোর ঘরে—বাদশা বাণীর দানে!”
“নাও, হলো, এসো! পরে ভালোবেসো—হাত ধুয়ে নাও খেয়ে।”
কবি ভাবে মনে—বুঝি এতক্ষণে মেঘ গেল দূর বেয়ে।