সালাম জানাই, বন্ধু সাজিদ—কেমন আছিস ভাই?
বহু দিন ধরে তোর যে কোনোই তালাশ, খবর নাই!
রঙিন আগের ডাকচিঠি তোর আসে না এখন আর,
একটির পর লিখি যে একটি—দিস না জবাব তার!
জানি না, আমার লেখা তুই আর খুলিয়া পড়িস কিনা!
ভালো যে লাগে না একলা আমার—কিছুতেই তুই বিনা।
আসবি রে কবে আবার গাঁয়ে তে? নাকি কোনোদিন ফের?
আসবি না তুই? আমরা শুধুই টানব ব্যথার জের?
যেয়ে তোকে ধরে আনব—কিন্তু গাঁয়ে ফিরে আয় বলি,
আর কতকাল থাকবি শহর—নিয়ন আলোর গলি?
সেথায় অফিস, বিলাস ভবন, উচ্চতলার পরে—
এমন করিয়া গাঁয়ের মিঠেল প্রভাত-সূর্য ঝরে?
ওখানে কি হয় শীতের সকালে, কাঁপতে কাঁপতে বসে,
পরাণ জুড়িয়ে, তৃষ্ণা মেটানো খেজুর রসের জোসে?
আগুন পোহানো, জনা কয় মিলে, কাছ ঘেঁষাঘেঁষি করে—
পোড়ায় খাওয়া হয় কি আলু রে—ফুঁক দিয়ে, হাত ধরে?
কভু সন্ধ্যায় আতর মাখিয়া, টুপিটা মাথায় দিয়ে,
দল বেঁধে বসা দূর কোনো মাঠ, সভা-মাহফিলে গিয়ে?
আল্লাহ-রাসুল, মহামানবের শুনিয়া জীবনধারা—
হয় আলোচনা—মোদের জন্য কত কী করেছে তারা!
কী বা আছে বল, ইট-পাথরের পাষাণভূমির মাঝে?
সবুজ কোমল গাঁওখানি তোর ভুলাতে সকাল-সাঁঝে?
যেই গাঁয়ে তোর জন্মটা হলো, কাটল কিশোরকাল—
ভুললি আজকে সেই গাঁওখানি, পেয়ে শহরের হাল?
শহরেতে, ওরে, পর তো সবাই—টাকায় আপন হয়!
ভুলবে দেখিস, তারা তোকে তোর টাকার হলেই ক্ষয়।
গাঁয়ের মানুষ শেখেনি তো আজো টাকায় যত্ন করা—
ভেবে দেখ তুই, টাকা ছাড়া ছিলি কত স্মৃতি-সাজভরা!
খেয়েছি দুজন ঘর বা পাড়াতে মায়ার বাঁধন জোরে—
বাপ-ভাই-বোন সমান আমার, আপন ভেবেছে তোরে।
দুঃখ, যাতনা, বয়সের ভারে মা আজ শয্যা শুয়ে—
বহু হারানোর ব্যথা, তবু তার কাটে না যে তোরে থুয়ে!
শুনেছিস কিনা—মোর ছোটবোন অবেলায় গেছে গোর;
থাকলে বাঁচিয়া হয়তো এখনো খোঁজ নিত ঠিক তোর।
রহিম চাচাও মারা গেছে, আর ওপাড়ার রাঙা ভাই—
এমন অনেকে চিরপরবাস—পৃথিবীতে আর নাই।
তোর পূব সব শুয়ে আছে এই গাঁয়ের বাঁশের বনে—
আমরা না-হয় আসতে পারিস করিয়া তাদের মনে!
তুই আর আমি একসাথে যে রে, ছুটিয়া হয়েছি বড়—
আসল সত্য, বড় হইনি রে—অভাবেতে জড়সড়!
সত্যিকারের বড় তুই আজ—কী বা আজ তোর নাই!
গাড়ি, বাড়ি, টাকা, মান-সম্মান, উঁচু দরবারে ঠাঁই!
এক স্কুলে পড়েছি দুজন, মানিকজোড়ের মতো—
রোল ছিল এক, প্রথমে আমার, পরে তাই তোর হতো।
হারায় বাপ রে—নামল যে ধস, পড়ালেখা গেল নিচে;
অনাহারে রই, তবে তোর ছোঁটা আমি বহুদূর পিছে।
দিন দিন সেই নিচু, নেমে নিচু—তোর জোর যথা ঠিক,
সফলতা তোকে নিয়ে গেল দূর, আমি বিফলের দিক!
তবে তোর ভালো দেখে খুশি হই, বন্ধু—সবার থেকে;
তুই আর আমি আলাদা—কিসের মন কভু যায় বেঁকে?
চাকরিটা সেই কবে হারিয়েছি—ঘুষ না খাওয়ার তরে!
টিউশনি করি আর ছোট কাজ, দুটি ভাত আসে ঘরে।
অর্থ পেছন ছোটা হয় নাই, ছোটে নাই মোর মন—
তাই বাছিয়াছি সব ছেড়ে দিয়ে থাকা অজপাড়া বন।
কোনো ব্যথা নেই, খুব সুখী আমি—ব্যথা শুধু বুকে এই—
তোর দেখা নেই, দেখি না যে তোকে—ব্যথা বুকে মোর সেই।
শোন, বলি তবে—যত থাক কাজ, যাস একবার ঘুরে—
গাঁয়ে, তোর গোড়া শিকড়ের টান, থাকিস না আর দূরে।
টানিয়া তোকে তো রাখব না ধরে, যাস পরে তুই চলে—
তবু ক্ষণ করে গেলি এসে—ঘুরে আপন সবারে বলে।
আসিস না তুই অভিমানে—তাই বড় কথা তোরে কই,
তাই বলে তোর বড় অর্জনে আমরা কি বাঁধা হই?
আমার কথায় জানি না রে—তোর মনে দোলা দিবে কিনা—
যদিও আমরা ভালো আছি, তবু ভালো নেই তুই বিনা!
কত দিন ধরে দেখি নাই তোকে, তোর সেই কাঁচা মুখ,
কত সুন্দর! জানি না এখন—দেখলে জুড়াত বুক।
অনেক কথাই হলো লেখা—আজ করিস না মন ভার,
ভালো থাক তুই—যাস না তো ভুলে গাঁয়ের মাটির ধার।
এখানে এখনো অনেকে খুঁজিয়া, একটি বারের মতো—
মুখ দেখে তোর মরিতে যে আশা করে অবিরত কত!
যাহোক বন্ধু, ভালো থাক তুই—আজকের যত কথা—
তব জ্ঞানমতে ভুল হলে কোনো, ক্ষমা চায় রাজু যথা।