জামালপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র দয়াময়ী পাড়া। এখানেই বসবাস করেন বিজন কুমার দেব—একজন সাধারণ মানুষ, যার জীবন এখন অবরুদ্ধ এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতায়। সংস্কৃতি পল্লী নির্মাণের সময় শত অনুরোধ, আকুতি, কাকুতি-মিনতি করেও এলজিইডি ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তার চলাচলের রাস্তা রাখেনি। বরং সুউচ্চ প্রাচীর তুলে তাকে ও তার পরিবারকে বন্দী করে দিয়েছে নিজেদের বাড়িতেই।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ওই সময় অনেকে মানবিক বিবেচনায় রাস্তা রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। এমনকি বিজন নিজেও জেলা প্রশাসক, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলজিইডির দপ্তরে গিয়ে বারবার আবেদন করেছেন—কিন্তু ফল হয়নি। বরং একরাতে প্রাচীর তুলে দেওয়া হয়, যেনো তাদের যাতায়াতের পথ চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রই সম্পন্ন করা হলো।
বিজনের বাড়ি এখন যেনো ছোট্ট এক কারাগার। সংস্কৃতি পল্লীর প্রাচীরের কারণে তার বাড়ি জলাবদ্ধ থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। পানি বের হতে না পারায় বাড়ির ভেতরে সৃষ্টি হয় নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। তবুও তিনি বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে যেতে চাননি। পরিবারের অন্য সদস্যরা বাধ্য হয়ে ভাড়া বাসায় থাকলেও, বিজন কেবল আত্মপরিচয়ের সেই শেষ আশ্রয়টুকু আঁকড়ে রেখেছেন বুক চেপে।
আরও হৃদয়বিদারক বিষয় হলো—নিজ বাড়ি থেকে বের হতে বিজনকে এখন মই বেয়ে দেয়াল টপকাতে হয়। প্রতিদিন এভাবে চলাচল করছেন জীবন বাজি রেখে। যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউই এখনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।
এই দুঃসহ অবস্থার খবর আগেও প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানবিক আবেদন জানানো হলেও বরং প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়, কেউ কেউ ‘নেতাদের চক্ষুশুল’ হয়ে পড়েন।
সংস্কৃতি পল্লীর কার্যক্রম আজ প্রায় অচল। অথচ সেই বন্ধ পল্লীর দেয়ালই আজ এক অসহায় পরিবারের জীবনের পথে মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—রাষ্ট্র কি পারে না এক নাগরিকের ন্যূনতম মানবাধিকার নিশ্চিত করতে? একটি পরিবারের নিরাপদ যাতায়াতের অধিকার কি এতই তুচ্ছ?
দয়াময়ী পাড়া, জামালপুরের এই বাস্তবতা যেনো সত্যিই প্রমাণ করে—
“বাতির নিচেই সবচেয়ে ঘন অন্ধকার।”
বাংলার বুলেটিন এই মানবিক ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।