“এসব অভিনয় ছাড়ো,”
সেদিনই বুঝে গেলাম,
তুমি এখন অন্য কোনো প্রার্থনার মঞ্চে অভিনয় করছো।
আমি তখনও বিশ্বাসে অন্ধ,
তোমার চোখে দেখতাম মহাবিশ্বের ঈশ্বর,
তোমার ঠোঁটে শুনতাম অমরত্বের গান।
কিন্তু সেই দিন—
সেই শব্দ, সেই নিঃসঙ্গ উচ্চারণ—
আমার সমস্ত প্রেমকে নির্বাসিত করল শূন্যতার দিকে।
 
জানো, ভালোবাসা আসলে কোনো সরল রেখা নয়,
এটি এক গোলকধাঁধা,
যেখানে প্রবেশের পথ আছে, কিন্তু ফেরার নেই।
তুমি গিয়েছিলে সেই গোলকধাঁধার আলো ধরে,
আর আমি আটকে রইলাম তার অন্ধকার প্রান্তে।
তোমার বিদায়ের পর প্রতিটি রাত
হয়ে উঠেছে অসমাপ্ত সংলাপের মতো,
যেখানে আমি একা অভিনয় করি
এক মৃত চরিত্রের ভূমিকায়।
 
তুমি যখন বলেছিলে—
“এসব অভিনয় ছাড়ো,”
আমি তখনও ভাবিনি
তুমি মঞ্চই ছেড়ে চলে যাবে অন্য কারো কাছে।
ভালোবাসা তোমার কাছে ছিল প্রদর্শন,
আমার কাছে ছিল প্রার্থনা।
তোমার প্রেম ছিল আলোর পোশাকে সজ্জিত,
আমার প্রেম ছিল অন্ধকারের গহীনে রক্তাক্ত সত্য।
 
রাতের দেয়ালে এখনো ভেসে আসে
তোমার হাসির প্রতিধ্বনি—
যেন কোনো ভূতুড়ে সুর,
যা হৃদয়ে ঢুকে যায় নিঃশব্দে,
আর ছিঁড়ে দেয় স্নায়ুর গভীরতম তার।
আমি চেষ্টা করি ভুলে যেতে,
কিন্তু প্রতিটি বিস্মৃতি আবার জন্ম দেয় তোমাকেই—
অন্য রূপে, অন্য শব্দে,
অন্য কারো ছায়ায়।
 
আমি তোমাকে ঘৃণা করতে চেয়েছি বহুবার,
কিন্তু ঘৃণাতেও তোমার অনুপস্থিতি টের পাই।
তুমি যেন এক ব্যথার স্থায়ী রূপ,
যা মুছে ফেলা যায় না
সময়ের কোনো অমোঘ সমীকরণে।
তুমি চলে গিয়েছিলে,
কিন্তু রেখে গিয়েছিলে আমার বুকের ভেতর
এক অনন্ত প্রতিধ্বনি—
“এসব অভিনয় ছাড়ো…”
 
এখন আমি অভিনয় করি না,
কারণ আমি চরিত্রহীন—
আমি নিজেই এক ভগ্ন নাট্যমঞ্চ,
যেখানে শুধু বাতাসের শব্দ
আর অদৃশ্য দর্শকের শোকধ্বনি শোনা যায়।
 
তুমি যদি কখনও ফিরে আসো,
দেখবে—
আমার চোখে আর প্রেম নেই,
আছে কেবল নীরবতার রাজনীতি।
সেখানে প্রেম মানে যুদ্ধ,
বিশ্বাস মানে অস্ত্র,
আর বিদায় মানে মৃত্যুর সমান এক শান্তি।
 
আমি জানি, তুমি এখন সুখী,
তোমার নতুন আকাশে অন্য রবি জ্বলে।
আর আমি—
আমি এখনো গুনে চলেছি তারার ক্ষয়,
মনে মনে লিখে চলেছি শেষ নাটকের সংলাপ:
 
“ভালোবাসা এক অন্তহীন অভিনয়,
আর সত্যিকারের প্রেমিকরা
কখনও মঞ্চ ছাড়ে না—
তারা শুধু আলো নিভে গেলে অদৃশ্য হয়ে যায়।”
 
নিলখী, হোমনা, কুমিল্লা।
২৫~১০~২০২৫