টঙ্গী-গাজীপুর সড়কে উন্নয়নের খানাখন্দ ও অব্যবস্থাপনার কারণে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত পুরো সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অংশে যানবাহনের অচলাবস্থার কারণে উত্তরা হয়ে পুরো বিমানবন্দর সড়ক, বনানী, মহাখালী এমনকি রামপুরা, বাড্ডা রোডেও যানজটের বিস্তার ঘটেছে। গতকাল রাজধানীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে গন্তব্যে গেছেন যাত্রীরা। গাজীপুরের পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এই নজিরবিহীন যানজটের কারণে তারা সারা দিনে ঢাকা-গাজীপুরে একটির বেশি ট্রিপ দিতে পারছেন না। এতে যে যাত্রীভাড়া আসে, তাতে জ্বালানির খরচও উঠছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো সময় গাজীপুর থেকে ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান পরিবহন ব্যবসায়ীরা। ভয়াবহ সড়কের নাম এখন টঙ্গী-গাজীপুর। তীব্র যানজটের কারণে স্বাভাবিকভাবে চলছে না গাড়ি। ফলে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথের নিয়মিত যাত্রীরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে থেমে থেমে বৃষ্টি, সড়কে খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা ও মহাসড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গত দুই দিন ধরে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। সড়কে চলতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। এই যানজটের প্রভাব এখন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া এলাকায় দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে এই যানজটের কারণে জনমনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে যানজট রোধে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করলেও মিলছে না সুফল। আধা ঘণ্টার রাস্তা পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। পরিবহনের যাত্রী-চালক ও সহকারীদের গাড়িতে বসে থেকে সময় ক্ষেপণ ছাড়া আর কোনো গতি থাকছে না।সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী ও গাজীপুর অংশের তীব্র যানজটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি, সড়কে খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা, মহাসড়ক দখল করে দোকান পাট ও গাড়ির স্ট্যান্ড বসানো কারণে সৃষ্ট তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী। এর মধ্যে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়ক, টঙ্গী-কামারপাড়া সড়ক, মিরের বাজার বাইপাস সড়কের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে রাস্তায় খানাখন্দ, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে টঙ্গী ব্রিজ, টঙ্গী স্টেশন রোড, মিলগেট ও চেরাগ আলী এলাকায়। এর মধ্যে ভয়াবহ যানজট হচ্ছে মিলগেট এলাকায়। মহাসড়কে বৃষ্টির একহাঁটু পানি জমে খানাখন্দ এবং বিআরটি প্রকল্পের কাজের গর্ত মেরামত না করায় যেসব গর্ত বড় হয়ে গেছে। ফলে তিন থেকে চার লেনের গাড়ি মিলগেট এসে এক লেনে চলতে বাধ্য হয়। আবার গাড়ি গর্তে পড়ে শুরু হয় জ্যাম। এসব গাড়ি গর্তে পড়লে রেকার দিয়ে উঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।
টঙ্গী এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কের ওপর বিআরটি প্রকল্পের পাইলিং করায় বড় বড় গর্ত বৃষ্টির পানি জমে এক ভয়ানক রূপ নিয়েছে। এতে জ্যাম বাড়ছে। টঙ্গী শিলমুন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে মেয়েকে উত্তরার স্কুলে নিতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমেছে এবং বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। এর ফলে গাড়ির গতি কমে যাওয়ায় জ্যাম বাড়তে থাকে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বআরটি প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সড়কে মানুষের চলাচলের ভোগান্তি কমবে না।