সৌদি আরবে ওমরা পালন শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় সৌদি প্রবাসী মো. মোজাম্মেল হোসেন মৃধা ও তার শ্যালক মো. সাগর জোমাদ্দার নিহত হয়েছেন। তাদের লাশ একমাস চারদিন পর স্বজনরা ফিরে পেয়েছেন। নিহত ভগ্নিপতি ও শ্যালক সৌদি আরবে হোটেল ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। শুক্রবার গভীর রাতে ঢাকা পৌঁছানোর পর শনিবার সকালে তাদের লাশ নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পৌঁছায়। এসময় স্বজন হারানোর আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
শনিবার সকাল সারে ১০টায় বেতাগীর হোসনাবাদ গ্রামে সাগরের জানাজা সম্পন্ন হয়। এর আগে, সকাল ৯টায় মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়ায় নিজ বাড়িতে মোজাম্মেলের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওমরাহ হজ করে ফেরার পথে সৌদি আরব প্রবাসী তারা দু’জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।
গত ২৫ মার্চ স্থানীয় সময় রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা সৌদি আরবের আলগাছিমের উনাইয়া নামক স্থানে হোটেল ব্যবসা করতেন। ওমরাহ হজ পালনের জন্য মক্কায় যান তারা। ওমরা হজ পালন শেষে শনিবার কর্মস্থলে ফেরার পথে তাদের বহন করা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পাথরের পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা দু’জন নিহত হন।
দীর্ঘ এক মাস ৪ দিন অপেক্ষার পর তাদের মরদেহ গতাকল শুক্রবার বিকেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর এবং সৌদি আরব থেকে লাশবাহী বিমানটি বিকেল সাড়ে ৩টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে তাদের পরিবার লাশ ও আর্থিক অনুদান গ্রহণ করে।
নিহত সাগর জোমাদ্দারের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের বটতলা গ্রামে। তিনি ওই এলাকায় মোতাহার জোমাদ্দারের ছেলে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সাগর সবার ছোট। আর ভগ্নিপতি মোজাম্মেল হোসাইনের(৪৫) বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামে। সে ওই এলাকার মৃত আজিজ মৃধার ছেলে। ২৩ বছর আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার অনেক দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর নিহতদের মরেদেহ দেশে আনার পর প্রিয়জনের আহাজারিতে শোকস্তব্ধ দু’টি বাড়িেই। ছেলে ও মেয়ে জামাইকে হারিয়ে বিলাপ করছেন মোতাহার জোমাদ্দার। মোতাহার জোমাদ্দার বলেন, সৌদিতে কোটি টাকার ব্যবসা ও পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে আমরা নিঃস্ব ও চরম অসহায় হয়ে পড়েছি।
বাবার (মোজাম্মেল) লাশবাহী গাড়ি ধরে আহাজারি করছিলেন ছোটমেয়ে অন্তু আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন। খানিকটা দূরে নির্বাক বসে দেখছেন লাশবাহী গাড়ি সাগরের স্ত্রী শান্তা আক্তার। সাগর জোমাদ্দারের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, সাত বছর প্রেমের পর সাগরের সাথে আমার বিয়ে হয়। কিন্তু দু’মাসের বেশি আমরা সংসার করতে পারিনি। কিন্ত এত অল্প সময়ে আল্লাহ তাকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেল। আমি এখন কার জন্য বাচঁবো! তবুও একবারের জন্য হলেও তার মুখটা এক নজড় দেখতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি।
মোজাম্মেল জোমাদ্দারের স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২৩ বছর আগে ব্যবসা করতে আমার স্বামী সৌদি আরবে গিয়েছিল। ৮ বছর আগে সবশেষ দেশে এসেছিলেন। ছেলে-মেয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে, কিন্তু তার আগেই কিছু না বলে চলে গেল। এখন লাশ দেশে নিয়ে আসায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।