1. admin@mannanpresstv.com : admin :
রোমহর্ষক বর্ণনা ১০ খুনের - মান্নান প্রেস টিভি
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

রোমহর্ষক বর্ণনা ১০ খুনের

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : বুধবার, ৩ মে, ২০২৩
  • ১৯৭ Time View
কক্সবাজারে ডুবন্ত ট্রলারে অর্ধগলিত ১০ জনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি মামলার ১ নম্বর আসামি। কামাল হোসেন বলেছেন, ঘটনার সময় তিনি কক্সবাজার শহরে ছিলেন। তবে ট্রলারের মাঝিমাল্লাদের সঙ্গে তার কয়েক দফার কথায় নিশ্চিত হয়েছেন, ১০ জনের ট্রলারটি সাগরে ডাকাতি করতে নেমেছিল। ডাকাতির একপর্যায়ে কয়েকটি ট্রলারের জেলেরা ১০ জেলেকে ধরে প্রথমে গণপিটুনি দেন। এরপর গুম করার জন্য লাশগুলো বরফ রাখার কক্ষে আটকে রেখে সেই ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

সোমবার সন্ধ্যায় কামাল হোসেনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ। আগের দিন একই মামলার দুই আসামি (ট্রলারের মাঝি) আবু তৈয়ুব ও ফজল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তারা বলেছেন, ঘটনাটি তাদের চোখের সামনে ঘটেছে, তবে তারা জড়িত ছিলেন না। ওই দুই মাঝির জবানবন্দি রেকর্ড করেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা। ফজল ও তৈয়ুবের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কুদুকখালী গ্রামে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে কামাল হোসেন বলেছেন, তার মাছধরার ট্রলারের ব্যবসা আছে। বর্তমানে একটি ভাসা জালের ট্রলার আছে। ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন সমুদ্রে তার ভাই আনোয়ারের (মামলার পলাতক আসামি) ট্রলারে ডাকাতি হয়েছে। এরপর মাতারবাড়ীর আবদুল গফুর, সাগরে থাকা দুই ট্রলারের জেলে বেলাল ও আক্কাসের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে নিশ্চিত হন আনোয়ারের ট্রলারে ডাকাতি হয়েছে। ১০ এপ্রিল সকালে আক্কাসের সঙ্গে তার দ্বিতীয় দফায় আরও ১৫ মিনিট কথা হয়। তখন আক্কাস ঘটনার বিস্তারিত তাকে তুলে ধরেন। আক্কাস তখন ঘটনাস্থলে ট্রলারে ছিলেন। 

কামাল হোসেন জবানবন্দিতে বলেছেন, ৯ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আনোয়ারের ট্রলার সাগরে জাল ফেলে। হঠাৎ এই ট্রলারের (আনোয়ারের) পাশে ভেড়ে আরেকটি ছোট ট্রলার। তখন আনোয়ারের ট্রলারের জেলে ফোরকান টর্চলাইট মেরে কাছে ভেড়ার কারণ জানতে চান। কিছু বুঝতে না দিয়ে ছোট ট্রলারের (ডাকাতদের বোট) লোকজন দা, কিরিচ, রড ও বন্দুক নিয়ে আনোয়ারের ট্রলারে উঠে পড়ে এবং আনোয়ারের ট্রলারের জেলেদের এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। একপর্যায়ে কায়সার ও জয়নাল মাঝি ছাড়া অবশিষ্ট জেলেদের জাল রাখার কক্ষে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর ডাকাতরা কায়সারকে (আনোয়ারের ট্রলারের চালক) ট্রলারের ইঞ্জিন চালু করতে বাধ্য করে। জয়নাল মাঝিকে ট্রলার চালাতে বাধ্য করে ডাকাতরা। ট্রলারটি পূর্ব-উত্তরে কিছুদূর যাওয়ার পর ডাকাতরা জয়নাল ও কায়সারকে রেখে ট্রলারের অবশিষ্ট জেলেদের সাগরে ফেলে দেয়। তারপর ডাকাতরা আনোয়ারের ট্রলার অন্য একটি ট্রলারের সঙ্গে ভেড়াতে বলে। এতে দেরি হওয়ায় ওই ট্রলারটি দ্রুত সরে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ডাকাতরা জয়নাল ও কায়সারকেও মারধর করে সাগরে নিক্ষেপ করে। এ সময় আনোয়ারের ট্রলারে ডাকাত ছাড়া অন্য কেউ ছিল না। পুলিশ জানায়, জবানবন্দিতে মহেশখালীর মাতারবাড়ীর সাইরারডেইল এলাকার কামাল হোসেন বলেন, এরপর ডাকাতরা আনোয়ারের ট্রলারের সঙ্গে তাদের (ডাকাতদের) ছোট ট্রলারটি বেঁধে উত্তর-পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। তখন সামনে পড়ে আফসার মাঝি ও বাবুল মাঝির দুই ট্রলার। দুই মাঝি আনোয়ারের ট্রলার চিনতে পেরে কাছে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয় ডাকাতরা। সন্দেহ হলে আনোয়ারের ট্রলারের জেলে জয়নাল, কায়সার ও মালিক আনোয়ারকে নাম ধরে ডাকতে থাকেন তারা। এতেও সাড়াশব্দ না পেলে আফসার ও বাবুল মাঝির সন্দেহ হয়। এরপর বাবুল মাঝি তাদের ট্রলারটি ভেড়ানোর চেষ্টা করলে ডাকাতরা গুলি ছুড়তে থাকে। উপায় না দেখে বাবুল মাঝি ও আফসার মাঝি বাঁশের মাথায় কাপড় বেঁধে ট্রলারে তুলে দেয়। এটি এক ধরনের বিপৎসংকেত। বিপৎসংকেত দেখানোর ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ১০-১২টি ট্রলার। ট্রলারগুলো ডাকাতদের ট্রলারটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে ডাকাতরা আনোয়ারের ট্রলারের বাঁধা নিজেদের ছোট ট্রলারটি রশি কেটে দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর আনোয়ারের ট্রলার নিয়ে ডাকাতরা পালাতে থাকে। তখন অন্যান্য ট্রলারের জেলেরা ডাকাতদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে ডাকাতদের ট্রলারের জ্বালানি তেল শেষ হয়ে যায়। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার দুটি ট্রলার দুই পাশ থেকে ঘিরে ডাকাতদের ট্রলারটি আটকায় এবং ডাকাতদের হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এরপর বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার দুটি ট্রলারের সঙ্গে বাবুল মাঝি, আফসার মাঝি, আমান উল্লাহ ও আনোয়ারের ট্রলারের জেলেরা (সাগরে নিক্ষেপের পর অন্য ট্রলার কর্তৃক উদ্ধার) ডাকাতদের চারদিক ঘিরে ধরে বাঁশ, বরফ ভাঙার মুগুর, লাকড়ি দিয়ে গণপিটুনি দেন। এই পিটুনিতে ডাকাতদের মৃত্যু হয়। এরপর আফসার মাঝি, বাবুল মাঝি, আমান উল্লাহ মাঝি, আনোয়ার মাঝি ও অন্যান্য ট্রলারের জেলেরা (অন্তত ৬০ জন) সাগরে ভাসমান ডাকাতদের ছোট ট্রলারটি খুঁজে নেন। তারপর ডাকাতদের লাশগুলো ছোট ট্রলারের মাছ রাখার কক্ষে ঢুকিয়ে ঢাকনা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ট্রলারটি সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ২৩ এপ্রিল বিকালে শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ডুবন্ত একটি মাছধরার ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহারনামীয় চারজন (মহেশখালীর মাতারবাড়ীর বাইট্যা কামাল, করিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন ডুবন্ত ট্রলারের মালিক ও মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা নিহত সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD