সাভারের আশুলিয়ায় বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ, নানা দাবিতে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। এর জেরে গতকাল জামগড়া, নরসিংহপুরসহ আশপাশের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত অন্তত ৮০টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। তবে অন্য এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে না পারায় আগে থেকেই অনেক কারখানার ফটকে কারখানা বন্ধ ও ছুটির নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়। তবে শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধ কিংবা কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। বেশির ভাগ কারখানাতেই উৎপাদন স্বাভাবিক আছে।
জানা যায়, আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরাও কাজে না ফেরায় কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলো ছুটি ঘোষণা করেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার সামনে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা। কারখানা মালিকরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্প অস্থিতিশীল করে তুলতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় নানা অজুহাতে আন্দোলন ও কারখানা ভাঙচুর শুরু করে দুর্বৃত্তরা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখে পড়বে পোশাক খাত। ফায়দা নিতে ওত পেতে আছে বেশকিছু দেশ। আশুলিয়ার এস.সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ এবং কমপ্লায়েন্স বিভাগীয় প্রধান সাইফুদ্দিন মিয়া বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে সরাসরি প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত থাকলেও পরোক্ষভাবে উপকারভোগী কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ। যারা বিভিন্ন কায়দায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে আমার মনে হয় তারা শ্রমিক না। একটি গোষ্ঠীর হয়ে পরিকল্পিতভাবে দেশের পোশাক খাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আমরা শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে কাউন্সেলিং করে কাজে রাখার চেষ্টা করছি। সরকার এবং প্রশাসনেরও উচিত শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা। প্রতিদিন আমাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার পিস পোশাক উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সময়মতো ক্রেতাদের অর্ডারকৃত মালামাল বুঝিয়ে দিতে না পারলে তারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তাতে করে এই শিল্প পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে গেলে বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্পাঞ্চলটিতে বন্ধ রয়েছে ৮০-৯০টি কারখানা। মূলত শ্রমিকদের দাবিগুলোর বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় আগে থেকেই কয়েকটি কারখানায় বন্ধ ও ছুটির নোটিশ টাঙিয়ে দেয়। এ ছাড়া কিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করায় সেগুলো ছুটি দেয়া হয়েছে। অন্যান্য কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্প পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছেন বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। র?্যাব-৪, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হলেও একপর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা র?্যাবের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টাসহ ভাঙচুর করেন। সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েন। আমাদের টিম ছায়া তদন্ত করছে। শিল্পাঞ্চলে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে যে সকল দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।