আমি একদিন বর্ণমালার গর্ভে ঢুকি—
জন্ম নেই, কেবল বিদ্রোহের ঢেউ, রক্তের কোলাহল।
আলিফের চোখে আগুন— সে জ্বলে যাক বা নিভে
তবু সে-ই এখন জাগ্রত যুদ্ধ।
মিমের পেছনে দাঁত-মোচড়ানো হাহাকার
নীরবতাই এখন গর্জনের মঞ্চ।
লালন এখন স্ক্রল-ফিডে হারানো অশ্রু,
তার করতলে স্মার্টফোন, তবু তার গান ভাঙে কোডে।
স্বরবর্ণে মিম আছে, ব্যঞ্জনে মিম নেই—
অক্ষরের প্রতিটি চিহ্ন এখন বিপর্যয়, দেনা-লেখা, বকেয়া আইন।
মুখে মুখে ট্যাগলাইন : ‘শান্তি মানে স্থিতি।’
কিন্তু—যদি শান্তি হয় স্থিতি
তবে ইতিহাস মরবে নিঃশব্দে।
অশান্তিই আমাদের ধর্ম, অশান্তিই আমাদের পাঠশালা—
যেখানে ভয়,নির্বাসন সাধারণ বিষয়
আমরা পুনরুত্থাবপর লুপে ফিরে ফিরে জেগে উঠি।
এই যে বাঁকা নিশান—
এটা শুধু পতাকা নয়; এটা বিবর্জিত আখ্যানের বিকল্প
ছিন্নশব্দের মিছিল।
নিশান যখন বাঁকা হয়, সোজা পথে শাসনের স্বর বাজে।
সোজা পথে ঈশ্বর নেই—
শুধু শৃঙ্খলার পৃষ্ঠায় সই করা চুক্তিপত্র।
দক্ষিণের আলো আমরা নিভাই না—
তাকে চুষে নিই, মাংসের ভেতর মন্ত্রে পরিণত করি।
ফিসফিস করে বলি
‘গোপনেতেই জন্ম নেয় নয়া বিশ্ব।’
আমরা গোপনকে সশস্ত্র করব—
শব্দে শিয়ালীর নৌকা, বারুদের খোলা থালা।
আলিফ এখন গেরিলা কবি—
তার বাক্যে বেঁচে আছে আগামীর ভাষা।
মিম, সেই পুরনো সংবিধান—কেটে ফেলা হবে;
রক্তপাতার খাতায় লেখা হবে নতুন ব্যাকরণ
যেখানে ভুলের আকারেই থাকবে গৌরব
আর নিষিদ্ধের ভিতরেই মুক্তির মানচিত্র।
আমরা হারিয়ে যাই প্রতিটি নিষিদ্ধ শব্দে—
অতএব আমাদের হাতে আছে ভাঙচুরের নকশা।
ভাঙাই পুনর্গঠন, ভাঙাই ভাষার ভূলোচিত্র।
আলোর শত্রুদের মুখে আঁকি অন্ধকারের পঙ্ক্তি—
না, সেই অন্ধকার নয় যা বিনষ্ট করে
বরং সেই অন্ধকার যা পুনর্জন্মের ক্যালেন্ডার খোলে।
কোনো ধর্ম নেই—শব্দের প্রতি আনুগত্য আছে।
কোনো মুখোশ নেই—খোলা মুখে লড়াই, খোলা কণ্ঠে স্লোগান।
শুধু এক নিশান—বাঁকা, জেদি, রক্তমাখা, ছেঁড়া—
এই নরমচামড়া বিপ্লব এখানেই শুরু, এখানেই শেষ নয়।
এই শহরের গলিপথে আমরা জ্বালাবো স্মৃতির আগুন
বাতাসে ছড়াবো কাঁটা ফুল—
অরুচির প্রতীক, প্রত্যাখ্যানের ধাঁধা।
কোথাও লেখা থাকবে: ‘নিষিদ্ধ শব্দটাই নীলমণি।’
আমরা খুঁড়ে আনব, কাটিল নয়—শব্দে কাটব
কবিতায় কেটে দেব নতুন পথের রেখা।
বিপ্লব আর বন্দুক নয়—
বিপ্লব এখন শব্দের অ্যাসেম্বলি।
আমরা কোড-ব্রেকিং করব—শাসনের বাগ উন্মোচন করব।
গড়ব ডিকশনারি কংগ্রেস—
যেখানে নতুন শব্দের জন্য ভোট চলে,
রায় হবে প্রান্তর-লেখায়,
আর বিভ্রান্তিই হবে মুক্তির নতুন ব্যাকরণ।
ভাষার মুক্তি হলে দেহও অনুসরণ করে—
শব্দ খুললে পেটও খোলে, কলম নড়লে পা নড়ে।
ভুলগুলোই আমাদের বিজয়ীর তালা;
আমরা সেটাই ভাঙব—
নতুন ব্যাকরণ লিখব
যেখানে “আমি ভুলে যাই” হবে গর্বের ঘোষণা,
আর ‘আমি ভুল করেছি’ হবে ঐতিহ্যের মন্ত্র।
উঠো, বলো—রাতকে সবুজ করতে হবে,
কিন্তু হাত দিয়ে নয়—কণ্ঠ দিয়ে, কাগজ দিয়ে, কলম দিয়ে।
কলম না থাকলে ইশারা দাও মন্টেজের পথে—
যেখানে অবৈধ শব্দেই জন্ম নেবে নতুন গান
অবৈধ কাজেই হবে নতুন কাব্য।
নিশানটা আরও বাঁকা হবে—আমরা তাকেই শপথ করব;
জেদি, রক্তমাখা, অদম্য—একেই বলব স্বাধীনতা।
আর সেই স্বাধীনতা—প্রাচীনও, নবীনও—
নতুন করে লিখবে ইতিহাস:
‘আমরা ভুলে ভুলে জিতেছি।’