1. admin@mannanpresstv.com : admin :
বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি : শেখ হাসিনা - মান্নান প্রেস টিভি
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি : শেখ হাসিনা

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৭৩ Time View

♦ মোদির সঙ্গে বৈঠক আজ ♦ আলোচনায় সাত এজেন্ডা, হতে পারে সাত চুক্তি ও সমঝোতা

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নয়াদিল্লি পৌঁছালে তাঁকে দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা।  বাংলাদেশ হাইকমিশনে নৈশভোজে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি। আমি বন্ধুত্ব চাই।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। উপমহাদেশের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বৈঠক হবে তিন ধরনের- রুদ্ধদ্বার, একান্ত ও দ্বিপক্ষীয়। নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে এ বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘোষণা হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুতি শুরুর। বৈঠক শেষে ঘোষিত যৌথ ইশতেহারে থাকবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ১৬ বার বৈঠক করতে যাচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদ্বীপ ধনখরের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। আজ সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে গান্ধীর সমাধিস্থলে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমে করবেন রুদ্ধদ্বার বৈঠক, পরে করবেন একান্ত বৈঠক এবং শেষে দুই দেশের প্রতিনিধি দলসহ হবে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। হবে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং যৌথ ইশতেহার ঘোষণা।

কূটনীতিকরা জানান, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শুধু দুই শীর্ষ নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। এ ধরনের বৈঠকে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি থাকেন না। এর কোনো লিখিত এজেন্ডাও থাকে না। দুই শীর্ষ নেতা কথা বলে নিজেরাই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ বৈঠকের কোনো তথ্য অন্য কারও জানার সুযোগও থাকে না। একান্ত বৈঠকে দুই শীর্ষ নেতার পাশাপাশি এক বা একাধিক প্রতিনিধি থাকার সুযোগ থাকে। সাধারণত আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা ও ঘোষণার বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতা ছোট পরিসরে কথা বলে নেন। আর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব প্রতিনিধিকে নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা হয়।

ঢাকা ও দিল্লির কর্মকর্তারা জানান, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের এজেন্ডাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজনীতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও সংযুক্তিতে সহযোগিতা, পানিসম্পদে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও জনগণের মেলবন্ধন এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা। আজকের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার, রেলের সক্ষমতা বাড়ানো, বিচারবিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণায় সহযোগিতা, দুই দেশের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশের রেলওয়েকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং মহাকাশ বিষয়ক সহযোগিতা। দুই দেশ সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) স্বাক্ষরের একটি রূপরেখা ঘোষণা করতে পারে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক রাজনীতি-অর্থনীতি ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি থাকবে আলোচনায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবার সেই চিরাচরিত তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হবে। তবে এবারের সফরে তিস্তা চুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কূটনীতিকরা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মূল এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে রাখাইনে সাম্প্রতিক অস্থিরতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে সবার মনে শঙ্কা আছে। ভারতও লক্ষ্য করছে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। এটা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া পরিস্থিতির কারণে পুরো বিশ্ব যে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।  পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মূল দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনায় ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আসে সেগুলোর ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্তের আগে বাংলাদেশ যেন পূর্বাভাস পায়। বর্তমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় পেট্রোল-ডিজেলসহ এ ধরনের পণ্য ভারতে যদি উদ্বৃত্ত থাকে তা আমদানি ও নেপালের সঙ্গে চলমান জলবিদ্যুৎ সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হবে। সচিব জানান, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরের তালিকায় থাকা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলোর ফাইনাল টাচ এখনো দেওয়া হচ্ছে। রাতে এগুলো ফাইনাল হবে। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এগুলো দুই নেতার উপস্থিতিতে স্বাক্ষর হবে।

আমি বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি বন্ধুত্ব চাইতে এসেছি। আমি বন্ধুত্ব চাই। আমি অত্যন্ত আশাবাদী, সফর ইনশাআল্লাহ অনেক ভালো হবে। তবে চমকের কথা বলতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত নৈশভোজে কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মমতার সঙ্গে দেখা করার আমার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ও তো আসেনি। মমতা আমার  বোনের মতো, আমি ওকে স্নেহ করি। ওর সঙ্গে রাজনীতির বাইরে আমার সম্পর্ক। ও যখন চাইবে তখনই আমার সঙ্গে দেখা করতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পর্ক আমার গান্ধী পরিবারের সঙ্গে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু অবশ্যই উত্থাপন করব। যাতে ভারতের মতো একটা বড় দেশ, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে এবং মিয়ানমারকে চাপ দেয়। আমার মনে হয় ভারত এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কিছু প্রতিশ্রুতি দেবে।

তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি দিচ্ছেন না বলেই ইলিশ পাচ্ছেন না। আমরা এখন দুর্গাপূজার সময় দেই, সেটা বিশেষ সময় বলে। তবে নিয়মিত পেতে গেলে তো আমাদেরকে পানি দিতে হবে। তিনি বলেন, আমি আসলে অভিন্ন নদীগুলো ড্রেজিংয়ের জন্য একটা প্রস্তাব দিয়েছি। দুই  দেশ একসঙ্গে ড্রেজিং করলে ভালো। নদীগুলোতে এর মধ্যেই পলি পড়ে পানিপ্রবাহ কমে গেছে। এ কাজে ভারত যদি এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট)  থেকে টাকা দেয় তাহলে ভালো। টাকা না দিলেও কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা চেষ্টা করব। এ ছাড়া বন্যার সময় যে পানিটা চলে আসে তা কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তার একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। ভারত যদি এতে সাহায্য করে তাহলে খুবই ভালো হয়।

নিজামউদ্দিনের দরগায় প্রধানমন্ত্রীর নামাজ  দোয়া : উপমহাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধক নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  সেখানে নফল নামাজ আদায় ও মোনাজাতকালে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। পরে তিনি নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার বিভিন্ন অংশে যান। ভারতে সুফি সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্রস্থান এই দরগাটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা নিয়মিত নিজামউদ্দিনের দরগায় জিয়ারতে যেতেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে বিশেষ বিমানে ঢাকা থেকে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। সেখানে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান তাঁকে স্বাগত জানান। শেখ হাসিনার সম্মানে বিমানবন্দরে লালগালিচার পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে। বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইটিসি মৌর্য হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরে যান নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ পরিদর্শনে। দরগাহ পরিদর্শন শেষে হোটেলে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। রাতে তাঁর সম্মানে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন। আগামীকাল সকালে ভারতের নর্থ ইস্ট উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী কিষান রেড্ডি সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পরে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নেবেন। বিকালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ বৃত্তি তুলে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর রাজস্থানে যাবেন। তিনি সেখানে আজমির শরিফ দরগায় মাজার জিয়ারত শেষে ওই দিন বিকালে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD