কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে পূর্ণিমা আক্তার নামের দশম শ্রেণির এক মাদরাসা ছাত্রী হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও এ ঘটনার মূলহোতা সোলাইমান ওরফে বাবু সহ সকল আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট পূর্ণিমাকে অপহরণের পর ৩ দিন আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে বাইশগাঁও উত্তরপাড়া চৌকিদার বাড়ির রফিকুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান ওরফে বাবু। ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ণিমাকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পালিয়ে যায় সোলাইমানের সহযোগী শাহাদাত হোসেন। এসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর নিহত পূর্ণিমা আক্তারের মা মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে বাইশগাঁও উত্তরপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান ওরফে বাবু ও তার সহযোগী বাইশগাঁও বেপারী বাড়ির মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে শাহাদাত হোসেন সহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহার ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত পূর্ণিমা আক্তার বাইশগাঁও ইউনিয়নের উদাইশ গ্রামের পাটোয়ারী বাড়ির মোঃ মানিকের মেয়ে। সে দাদঘর কেয়ারী দাখিল মাদরাসায় দশম শ্রেণিতে পড়তো। মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে প্রায় সময় অভিযুক্ত সোলাইমান ওরফে বাবু পূর্ণিমাকে উত্যক্ত করতো ও তাকে বিভিন্ন ধরণের কুপ্রস্তাব দিতো। সম্প্রতি তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ণিমাকে অপহরণের হুমকি দেয়৷ এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গত ২৮ আগস্ট পূর্ণিমা হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামে তার ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ৩১ আগস্ট বিকেলে পূর্ণিমা তার ফুফুর বাড়ির পাশে রাস্তায় হাঁটতে বের হলে পূর্বথেকে ওঁত পেতে থাকা সোলাইমান ওরফে বাবু তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে পূর্ণিমাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। ৩ দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। এর মধ্যে পূর্ণিমা তার কাঞ্চন আক্তার নামের এক বান্ধবীকে মোবাইল ফোনে কল করে জানায় সোলাইমান ওরফে বাবু তাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণসহ তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। পরবর্তীতে গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় লোক মারফতে পূর্ণিমার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পূর্ণিমার মরদেহ পড়ে আছে। খবর পেয়ে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে জানান, ওইদিন সন্ধ্যায় শাহাদাত নামের এক যুবক পূর্ণিমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তাৎক্ষণিক পালিয়ে যায়। এসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে পূর্ণিমার মৃত্যু হয়েছ বলে জানান চিকিৎসক।
পূর্ণিমার মৃত্যুর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর তার মা মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে বাইশগাঁও উত্তরপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে সোলাইমান ওরফে বাবু ও তার সহযোগী একই গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে শাহাদাত সহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মনোহরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তপন কুমার বাকচী জানান, নিহতের মা মনোয়ারা বেগমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সোলাইমান ওরফে বাবুর সহযোগী শাহাদাতকে গ্রেফতার করেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল আলম জানান, নিহতের মা মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে মাদরাসা ছাত্রী পূর্ণিমার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ এ ঘটনায় জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।