১৪ বছর বয়সী এক ছাত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং তা গোপন রাখতে তাকে বাধ্য করানোর অভিযোগে সিঙ্গাপুরে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্কুলের শিক্ষক (২৯)কে সোমবার ৫ বছরের জেল দিয়েছে আদালত। অভিযুক্ত শিক্ষক একজন চীনা নাগরিক। সিঙ্গাপুরে তার স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে। তার পরিচয় গোপন রাখার নির্দেশনা থাকায় নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ খবর দিয়ে অনলাইন স্ট্রেইট টাইমস বলেছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক কমপক্ষে চারবার যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। কমপক্ষে দু’বার তাকে গর্ভনিরোধক পিল খাওয়ার নির্দেশনা দেয়।
কম বয়সী একটি মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের তিনটি অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই রকম আরও দুটি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে। আদালতের শুনানিতে বলা হয়েছে, ভিকটিমের এখন বয়স ১৭ বছর। তিনিও একজন চীনা নাগরিক। শিক্ষা লাভের জন্য ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সিঙ্গাপুরে যান।ওই বছরই জানুয়ারিতে ওই স্কুলে গণিত পড়ানো শুরু করে অভিযুক্ত শিক্ষক। মার্চের দিকে তাদের মধ্যে জানাশোনা হয়। ওই ছাত্রীর ক্লাসে পড়াতো ওই শিক্ষক। নির্যাতিত বালিকা তাকে অন্য বিষয়গুলো পড়াশোনায় সহায়তা করার অনুরোধ করেন।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য আদান-প্রদান হয়। নির্যাতিতা যেহেতু সিঙ্গাপুরে একজন বিদেশি ছাত্রী হিসেবে গিয়েছেন, তাই সেখানে তিনি যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন, তা নিয়ে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে সহায়তা নিতে চেষ্টা করেন। ওই বছরের ৬ই এপ্রিল মধ্যাহ্নভোজের জন্য ওই বালিকা এবং তার ২০ বছর বয়সী এক পুরুষ বন্ধুকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান ওই শিক্ষক। সেখানে পুরুষ বন্ধু উপস্থিত হওয়ার আগেই মেয়েটি পৌঁছে যান। এ সময় ওই শিক্ষক তাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে এবং তার মুখে চুমু দেয়।
ভোজ শেষে ওই বালিকা যখন বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন তাকে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দেয় অভিযুক্ত শিক্ষক। এতে তিনি সম্মতি দেন। কারণ, ওই বালিকা ভেবেছিলেন, একজন শিক্ষক হিসেবে সে তার দেখাশোনা করবে। এটা ভালোই হবে। এরপর তাদের সম্পর্ক সামনে এগুতে থাকে। যখন স্কুলে অন্য কেউ থাকতো না, তখন ওই বালিকাকে চুম্বন করতো ওই শিক্ষক। দুই মাসের মধ্যে ওই শিক্ষকের বাসায় কমপক্ষে চারবার তারা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে।
আদালতে ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর কোলিন নগ বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ভিকটিমকে বলেছিল- এক জোড়া নর-নারীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক একটি প্রাকৃতিক বিষয়। একই সঙ্গে সে ভিকটিমকে এ বিষয় অন্যদের কাছে প্রকাশ না করতে বলে। জানিয়ে দেয়, যদি এটা প্রকাশ করে, তাহলে এতে তারই সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। যদি তার পিতামাতা বিষয়টি জানতে পারেন, তাহলে তা তার জন্য হবে আরও ভয়ানক।
ওই বছরই মধ্য জুনে ভিকটিম ওই শিক্ষককে জানান, তিনি অন্য একটি স্কুলে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। একই সঙ্গে এটা ছিল স্কুল টার্মের শেষ। ওই স্কুলে ওই শিক্ষকের চাকরিরও শেষ সময় ছিল সেটা। এ সময়ই তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে এক বন্ধুর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন ভিকটিম। তিনি জানান, ওই শিক্ষকের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল।
এ কথা জানার পর তার বন্ধু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি ভিকটিমকে নিয়ে ওই স্কুলে চলে যান অভিযুক্ত শিক্ষকের মুখোমুখি হতে। এ সময় অভিযুক্ত বিষয়টি নিয়ে পুলিশে না যেতে অনুরোধ করে। এরপর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে চীনে ফিরে যান ভিকটিম। তিনি পুরো বিষয় নিজের মাকে খুলে বলেন। এ কথা জেনে তার মা সিঙ্গাপুরে মেয়েটির অভিভাবক বা গার্ডিয়ানকে ফোন করেন এবং পুলিশে রিপোর্ট করতে বলেন। ওই সময় ওই শিক্ষক ছিল বিদেশে। সে সিঙ্গাপুরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওদিকে ভিকটিমের মানসিক অবস্থা বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিনি খুবই হতাশ, ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্ক বোধ করছেন অভিযুক্তের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে। তিনি এখন পুরুষদের দেখলেই আতঙ্ক প্রকাশ করেন। অন্যদের বিশ্বাস করেন না। প্রসিকিউটর কোলিন নগ আদালতের কাছে অভিযুক্তের ৫ থেকে ৬ বছরের জেল দাবি করেন। কারণ, একজন শিক্ষক হিসেবে তার ওপর যে আস্থা রাখা হয়েছে, সে তা লঙ্ঘন করেছে। সে জানতো একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই সম্পর্ক গড়ে তোলা ছিল অন্যায়। এ ছাড়া সে সন্দেহজনক একটি সূত্র থেকে গর্ভনিরোধক পিল সংগ্রহ করে। এর মধ্যদিয়ে সে ভিকটিমের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে।