1. admin@mannanpresstv.com : admin :
কবিতার রাজপুত্র রেজাউদ্দিন স্টালিন দ্রোহ-প্রেমের বৈশ্বিক কবি শুভ জন্মদিন - মান্নান প্রেস টিভি
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

কবিতার রাজপুত্র রেজাউদ্দিন স্টালিন দ্রোহ-প্রেমের বৈশ্বিক কবি শুভ জন্মদিন

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৭৯ Time View

কবিতার রাজপুত্র রেজাউদ্দিন স্টালিন  দ্রোহ-প্রেমের বৈশ্বিক কবি শুভ জন্মদিন-এবিএম সোহেল রশিদ

রেজাউদ্দিন স্টালিন নামটির সাথেই বৈশ্বিক একটা সম্পর্ক আছে। বিশ্বময় নিজেকে উদ্ভাসের একটা ইঙ্গিত আছে। এসময়ে কবিতা অনেকেই লিখছেন। প্রচার-প্রচারণায় হয়তো কেউ কেউ এগিয়েও আছেন। কিন্তু কবিতা যার হাত ধরে সমসাময়িক বিষয়আশয়কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপযোগী করে উচ্চারণ করে যাচ্ছে, তিনি নিসন্দেহে কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। আপাতত দৃষ্টিতে প্রেম ভালোবাসা দ্রোহের কথন মনে হলেও তার কোনো কবিতাই অধিকার বঞ্চিত মানুষের নীতি ও নৈতিকতার উচ্চারণ বিবর্জিত নয়। আর যার ভাবনার মূল উপজীব্য অধিকার বঞ্চিত মানুষ, পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকা জনগোষ্ঠী, তার কবিতায় দেশ ও বিশ্ব রাজনীতি ও মানুষের মনবিক উচ্চারণ কাব্যিক কৌশলতায় ওঠে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাঁর মানবিক উচ্চারণ—
‘আজ আর মানুষের বর্ণকলহ
নির্মম নাগরিকত্ব ভালো লাগছে না
শহরের জলকষ্ট, বিপণীর কোলাহল
করতালি প্রিয় জনসভা অসম বন্টন
সমিতির ভুয়া উন্নয়ন, আনবিক চিমনির ধোঁয়া’
(কবিতা: মানুষের ভালো লাগছে না)
বাংলা সাহিত্যের পথে যারা নিশ্চিত ভাবে আলো ছড়াবেন তাদের তালিকায় ইতোমধ্যে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এর মূল কারণ হলো তাঁর চিন্তার বহিঃপ্রকাশের মৌলিকত্ব, মেদহীন বাক্যবিন্যাস, শব্দ চয়নে অতিমাত্রায় সতর্কতা, অনুষঙ্গ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও চিত্রকল্পে বৈচিত্র্য। পাশাপাশি প্রকাশের নিজস্ব একটা স্বতন্ত্র ক্যানভাস তিনি তৈরি করেছেন। যা পাঠক সাদরে গ্রহণ করেছে। তাছাড়া তিনি একজায়গায় নোঙর ফেলে বসে থাকেননি। প্রতিনিয়ত সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেকে ভাংচুরের মাধ্যমে উৎকর্ষতার সাথে নিরবে লিখেছেন—
রঙ্গমঞ্চ কিংবা অনুষ্ঠান প্রথম সারিতে গুরুত্বপূর্ণগণ
এবং তাদের পেছনের ছায়া- ছায়ার ছায়া
শেষ সারিতে কবি ও শিল্পীরা অচ্ছুত
তাদের ব্যাদান মুখ ধরা পড়ে ক্যামেরায় অসহায়
(কবিতা: রাষ্ট্রাচার)
দেখার দৃষ্টি, অনুভবের শক্তি, কল্পনার ক্ষমতা, ভাবনার গভীরতা এবং উপস্থাপনার পরিশীলিত দক্ষতায় পরিচিত বিষয়গুলো নতুন হয়ে ওঠে। ওর কবিতায় স্থান আছে, রয়েছে বৃষ্টিভরা আকাশ, আছে আকাশ ও পৃথিবীর রসায়ন, রয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বের টানাপোড়েন। সব মিলিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বলয়। কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা একই সঙ্গে আত্মজৈবনিক ও সর্বজনীন।
‘কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি
পথের ধুলোর উপর শুকনো পাতা
দিকভ্রান্ত নৌকার নিয়তি
ধনুকের জ্যা-মুক্ত বান
কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি।
(কবিতা: কেউ আমাকে গ্রহণ করেনি)
রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতায় বোধোদয়ের চিত্রকল্প আছে। তার কবিতায় শৃঙ্খলা কেবল ছন্দের ঢেউয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আছে যুক্তির প্রতিফলন। আছে নাটকীয়তার অভিনবত্ব। নাটকীয়তার সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি করার মুনশিয়ানা পাঠককে ভিন্নতার স্বাদ দেয়।
কেউ যদি দেয় বিশ্বজোড়া বাড়ি
আমি দেবো মাত্র দশ হাত লজ্জা ঢাকার শাড়ি।
(কবিতা: অভয়)
এভাবেই কবিতার শেষে সহজসরল অথচ ছান্দসিক পঙক্তিতে ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উচ্চারণের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান চালচিত্র তুলে ধরেন। এই সুক্ষ্ম কৌশল সমসাময়িক অন্য কবিদের কবিতায় দেখা যায় না। সতর্ক অথচ মৌলিক বাক্য বিনির্মানে কবিতা আকর্ষক হয়ে ওঠে। কবিতায় রূপক থাকে, স্টালিনের কবিতাতেও আছে। তার ব্যবহৃত রূপকগুলো আমাদের ভাবনার পৃথিবীতে একপশলা বৃষ্টির মতোই জানিয়ে দেয় ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র উচ্চারণে কবিতা সামাজিক বা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে পারে না।
”মা বলতেন, জানিস্ তো কবিতা লিখে ভাত হয় না
আমি লজ্জায় অবনত হয়ে থাকতাম
কিন্তু আজ আমার সময় হয়েছে
আমি সাহসী সন্তানের মতো প্রশ্ন করতে পারি
মা, যারা কবিতা লেখে না-তাদেরও কি ভাত হয়?’
মিথ সব্যবহার পারদর্শী স্টালিন; কোথাও আড়ষ্ট নয়। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীল ব্যাবহারের কারণেই তার সব কবিতা সুখপাঠ্য ও একটি আরেকটি কবিতা থেকে আলাদা।
পথচলাটা তার নিজস্ব। পথ যেন চুপিচুপি তাঁকে বলছে :
‘কত কিছুই তো দেখা হয় নি
এক জীবনে সব কিছু দেখা যায় না
দেখার দরকারও নেই, শোনারও
কিন্তু, নিরূপায় শুনতে হয় অনেক কিছু।’
( কবিতা: প্রস্তাবনা)
কবি স্বাধীন, এবং স্বনিয়ন্ত্রিত। শিল্পবোধের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। একটি সমৃদ্ধ ও সুন্দর জীবনের জন্য গন্তব্যে কড়া নাড়ে।
রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতার অনেক কিছুই আমার ভালো লাগে। কোনো কিছুই
আরোপিত মনে হয় না। পাঠকের ভাবনাকে উসকে দেয়ার কৌশলটা সে ভালো ভাবেই রপ্ত করেছে। সে দুঃসময়কে স্বীকার করে, কিন্তু হতাশ হয় না। তাই তিনি বলেন—
চোখের ভেতর মুখ দেখেছি
আয়না কি দরকার?
পৃথিবীতে স্বচ্ছতম আয়না পাওয়াই ভার,
পারদ তো নয় কাচের নিচে গভীর অন্ধকার।
চোখের ভেতর মুখ দেখেছি
আয়না কি দরকার?
(কবিতা: আয়না কি দরকার)
তার কাব্যিক পথচলা যতই বন্ধুর হোক, অব্যাহত থাকুক, সময়ের কবি, কবিতার বাতিঘরের কাছে এইটুকুই প্রত্যাশা।
এবিএম সোহেল রশিদ

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD