চলচ্চিত্র পরিচালক শিবলী সাদিক ও আমি থাকতাম একই এলাকায়। আমি শেরশাহ সূরী রোডে এবং তিনি থাকতেন তাজমহল রোডে। প্রায়ই যেতাম তার বাসায়। বড্ড ভালোবাসতেন আমাকে। একদিন বিকেলে তার বাসায় যেতেই দেখি সোহানুর রহমান সোহান বসা। যদিও তার সাথে আগেই পরিচয় ছিল আমার। কিন্তু এদিন থেকে যেনো সম্পর্কের গাড়ত্ব বেশি হলো। এফডিসিতে যতবার আমার সাথে দেখা হয়েছে ততবারই সোহানুর রহমান সোহান চায়ের অফার করেছেন। পরিচালক সমিতির সামনে খোলা আকাশের নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা দু’জন কথা বলেছি, গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি। পুরো আশির দশক আমরা একে অপরের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উঠি।
রহমান সোহান ছিলেন সহকারী তৃন ১৯৭৭ সালে শিবলী সাদিকের সরকারি পরিষদ হিসেবে নির্মাণ কাজে জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬), শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) ছবিতে।
এককভাবে ছবি করার চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু কোনক্রমেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ পেয়ে গেলেন। শিবলী সাদিকই ব্যবস্থা করে দেন। ১৯৮৮ সালে পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ মুক্তি পায়। ছবিটি মোটামুটি ব্যবসা করে। তবে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সুপার ডুপার হিট ব্যবসা করে। এই ছবিতে অভিনয় করে সালমান শাহ ও মৌসুমী তারকা খ্যাতি অর্জন করে। এই ছবিকে বলা যায় চলচ্চিত্র দুর্দিনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, সালমান শাহ্ ও মৌসুমী। তবে ‘পড়েনা চোখের পলক’ গানটি গেয়ে আগুনও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
সোহানুর রহমান সোহান যখনই ছবি করতেন আমাকে খবর দিতেন। আমি তখন সাপ্তাহিক সিনেমার নিজস্ব আলোকচিত্র শিল্পী। সুহানের প্রতিটি ছবির খবর আমি যত্ন সহকারে সাপ্তাহিক সিনেমাতে প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতাম। সাপ্তাহিক সিনেমার নির্বাহী সম্পাদক আখরুজ্জামান আমার কোন খবর বাদ দিতেন না। ছবির সাথে খবর, আলাদা খবর, হাওয়া থেকে পাওয়া খবর সবকিছুই তিনি ছাপার ব্যবস্থা করতেন। এই সুযোগটা আমার জন্য ছিল পরম পাওয়া। আমি ও আমার পরিচিতজন, ঘনিষ্ঠজনদের নিউজ ছাপাতে পারতাম নিশ্চিন্তে। সবার খবর পত্রিকায় উঠতো, এজন্যে চলচ্চিত্র জগতে আমাকে সবাই ভালোবাসতো।
বলা যায়, আমার জন্য চলচ্চিত্রের প্রতিটি দরজা অবাধ ছিলো যাতায়াতের।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য সোহানুর রহমান সোহানকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি একের পর এক চলচ্চিত্র পরিচালনা করে গেছেন। তার পরিচালিত ছবিগুলো হলো- ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশ্ত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরান যায় জ্বলিয়ারে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন করেছে’, ‘দ্য স্পিড’ ও ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ প্রকৃতি।
আজকের শাকিব খান সোহানুর রহমান সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। আজ তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী সোহানুর রহমান সোহান থাকতেন উত্তরায়। তিনি সামাজিক বিভিন্ন কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করে রেখেছিলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির দুইবার মহাসচিব, দুইবার সহ-সভাপতি ও একবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঘুমের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর আগের দিন তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। একদিনের ব্যবধানে স্বামী-স্ত্রীর এ মৃত্যু স্বজনদের মাঝে বিষাদের ছায়া ফেলে দেয়। বাসায় নেমে আসে ভুতুড়ে পরিবেশ।