ছোটবেলা থেকেই আমার “মা”কে দেখেছি একজন সততা, নিষ্ঠা এবং আদর্শের মাপকাঠি হিসেবে। মানুষের জীবনে অনেক সংগ্রাম এবং উত্থান পতন থাকে। কেউবা আপোষ করে, কেউবা স্রোতে গা ভাসায়। কিন্তু আমার “মা”কে জীবনের কোন অবস্থাতেই কখনো সততা ও নিষ্ঠা থেকে এক চুল পরিমাণ সরে যেতে দেখিনি। অন্যায় এবং মিথ্যার সাথে তিনি কখনো আপোষ করেননি।
তাইতো আমার আম্মার সততা ও সত্যবাদিতা সর্বজন বিদিত। গ্রামে অনেক জায়গা-জমি থাকার ফলে ছোটবেলায় দেখেছি দু-একবার প্রতিপক্ষের সাথে শালিস-মিমাংসাও বসেছিল। সাধারণত শালিস-মিমাংসায় সবাই নিজের পক্ষ নিয়ে একটু বাড়িয়ে বলার চেষ্টা করে। অথবা একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে মিথ্যে বলে যেন শালিস তার পক্ষে আসে। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে আমাদেরই প্রতিপক্ষ আমার মা’কেই সাক্ষী মেনেছে। যার ফলে দেখা গেছে কখনো কখনো শালিসের রায় আমাদের পক্ষে আসেনি।
পরবর্তীতে আমার মাকে যখন জিজ্ঞেস করেছি মা আপনি এভাবে না বলে বিষয়টি একটু এড়িয়ে যেতে পারতেন। মা আমাদের বলেছেন “আমার কবরে অন্য কেউ যাবেনা, তাই আমি মিথ্যা বলতে পারবো না।”
আমার বাবা খুব মেজাজী ছিলেন। কিন্তু কখনো মায়ের সাথে গলা উঁচু করে কখনো কথা বলেন নাই। বরং আমার আম্মার সততা ও নিষ্ঠার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি মাকে জিজ্ঞেস করতেন। মা রাতের বেলায় বিশেষ কোন এক নামাজ পড়ে চিন্তা ভাবনা করে ২/১ দিন পরে সিদ্ধান্ত নিতেন।
আমার আপারা চার (০৪) জন। দুলাভাইদের মধ্যে চারজনই আমার মায়ের কঠিন ভক্ত। তারা আম্মাকে এতোটাই শ্রদ্ধা করেন যে কখনো দুলা-ভাইদের সাথে আপাদের ঝগড়া চললে মা সেখানে উপস্থিত হলে সবাই ঠান্ডা হয়ে যান।
আমাদের পরিবারের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মা নেন এখন পর্যন্ত। আমরা এখনো কোন কাজ শুরুর আগে মাকে জিজ্ঞেস করি মা কোন কাজটা কিভাবে করবো। মা যে সিদ্ধান্ত দেন আমরা সবাই বিনা বাক্যে সেটা মেনে নেই।
আমাদের বাড়ির মসজিদটি ব্রিটিশ আমলের, যা জরাজীর্ণ ছিল। এজন্য নতুন মসজিদ করা প্রয়োজন ছিল। মা বললেন মসজিদ করতে হবে। এজন্য মা নিজের জায়গা দিবেন। আমার বাবা মাকে একটা জায়গা দিয়েছিলেন, সে জায়গা বিক্রি করে মসজিদের কাজ শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ খুব সুন্দর একটি মসজিদ করেছি। আমার মা চেয়েছেন বিধায় হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ আমার মায়ের বদৌলতে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাও পেয়েছি। দুনিয়াদারির পাশাপাশি আম্মা বরাবরই আমাদের ভাই-বোনদের ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছেন। তাইতো আমরা সাত (০৭) ভাই-বোন সূরাহ ইয়াসিন, সূরাহ আর-রাহমানসহ প্রয়োজনীয় সব সূরাহ-কেরাত এবং দোয়া মুখস্থ করেছি।
এমন একজন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন “মা” এর সন্তান হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমি মনে করি জীবনে চলার পথে আমার মায়ের দোয়া আমার জীবনের সবকিছু। মা এর দেওয়া ধর্মীয় মূল্যবোধ, আচার ব্যবহার, সততা ও নিষ্ঠার শিক্ষা আমার জীবনের চলার পথের পাথেয় এবং মূলমন্ত্র।( চলবে )