কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার পথে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম তালুকদার ওরফে রমজান (২৮)। ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় মারা যান তিনি।
সেলিম তালুকদার ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার টিএনটি এলাকার সুলতান তালুকদারের ছেলে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সেলিম ছিলেন মেজ। এক বছরও হয়নি বিয়ে করেছেন তিনি। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে দুই বছর আগে স্নাতক পাস করে নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলসে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেলিম তালুকদারের লাশ রাজধানীর বাড্ডা লিঙ্ক রোডের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি নলছিটিতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন আত্মীয়স্বজন ও সহপাঠীরা।
কান্না করতে করতে সেলিমের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘সেদিন (১৮ জুলাই) সকালে অফিসের গাড়ি তাকে নিতে আসেনি। অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সে বাসা থেকে বের হয়। এর তিন ঘণ্টা পর মুগদা হাসপাতাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় কেউ একজন আমার মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়ে জানান, আপনার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে, তাড়াতাড়ি আসেন।’
সেলিনা বেগম বলেন, ‘ফোনে কল পেয়েই আমরা দ্রুত মুগদা হাসপাতালে ছুটে যাই। অবস্থা খারাপ দেখে আমরা ঢাকার গ্রিন রোডের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরি। কোথাও আইসিইউতে সিট খালি পাইনি। পরদিন ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করাই ছেলেকে। ওখানে ১৩ দিন আইসিইউতে থাকার পরে আমার ছেলেটি মারা গেছে। সে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না, তাকে এভাবে মরতে হলো কেন? আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই।’সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার বলেন, ‘ঘটনার দিন সেলিম বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছলে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। এ সময় তার মাথায়, বুকে ও পিঠে গুলি লাগে। ফুসফুসেও গুলি লাগে। চার হাসপাতাল ঘোরার পর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।’