হাসান আল মাহমুদ
গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশেষ করে ইসলামী রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলো একে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও বিচারহীনতার ফল বলে উল্লেখ করেছে। একাধিক বিবৃতিতে নেতারা বলেছেন, এটি শুধু একজন সাংবাদিক হত্যাই নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হামলা। তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম এলাকায় যেভাবে সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু নির্মম নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।”
তিনি জানান, নিহত সাংবাদিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন।
“এরপরই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো—এটি প্রমাণ করে, অপরাধীরা এখন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তারা গণমাধ্যমের কণ্ঠও রক্তাক্তভাবে স্তব্ধ করে দিতে দ্বিধা করছে না।”
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান শাসনব্যবস্থায় অপরাধের প্রশ্রয়, বিচারহীনতা এবং দুর্বৃত্তদের রাজত্বের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সমাজে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সন্ত্রাসের যে ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে, তা রোধ না করা গেলে এমন হত্যাকাণ্ড আরও বাড়বে।’
তিনি সাংবাদিক তুহিনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি সমাজের বিবেকবান মানুষদের দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘একজন সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি এভাবে বর্বরযুগীয় কায়দায় প্রাণ হারান তাহলে আমরা এমন নির্মমতা দেখতে প্রস্তুত নই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর দায় এড়াতে পারে না।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।’
তারা সাংবাদিক তুহিনের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ‘কোনো একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার অর্থ গোটা মানবজাতিকে হত্যা করা। এ ধরণের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে না পারলে কোন পরিকল্পনাই সফল হবে না।’
এক পৃথক বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘দেশে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য এমন বেড়েছে যে তারা প্রকাশ্যে বর্বরতায় মানুষ খুন করছে। গাজীপুরের মত জনবহুল এলাকায় একজন সাংবাদিককে হত্যা প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষের জীবন এখনও দখলবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘বিগত এক বছরে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা সাহস পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এমন চিত্র কাম্য নয়।’
তারা অবিলম্বে সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে টহল জোরদার এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানান।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর ও সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড শুধু একটি ব্যক্তিগত হত্যাই নয়, বরং এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনস্বার্থে সত্য উচ্চারণের বিরুদ্ধে কাপুরুষোচিত হামলা।’
তারা বলেন, মৃত্যুর পূর্বে তুহিন চাঁদাবাজি ও ফুটপাত দখলের বিষয়ে সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেন। এরপরেই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
‘এটি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির করুণ চিত্র তুলে ধরে। সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে তারা সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর, সাংবাদিকবান্ধব ও বাস্তবমুখী আইন প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। বিদ্যমান আইনসমূহ অপর্যাপ্ত এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ।’
তারা দ্রুত বিচার দাবি করেন এবং প্রশাসনের গাফিলতির সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানান।