1. admin@mannanpresstv.com : admin :
ইসলামে দান-সদকার সওয়াব অপরিসীম - মান্নান প্রেস টিভি
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৮ অপরাহ্ন

ইসলামে দান-সদকার সওয়াব অপরিসীম

এম এ মান্নান
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১১৪ Time View

ইসলামে দান-সদকার গুরুত্ব অপরিসীম। একে সওয়াবের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শরিয়তে দান-সদকা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি এমন দান যা অবস্থাপন্ন মুসলিম ব্যক্তির জন্য ফরজ। এ ধরনের দানই জাকাত। অন্যটি মুসলিম ব্যক্তিকে করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু তার জন্য ফরজ করা হয়নি। এমন দানকে সদকা বলা হয়।

আল কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মোমিনরা! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আল্লাহর স্মরণ থেকে তোমাদের গাফিল না করে। যারা এ কারণে গাফিল হয় তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদের যা দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। নতুবা সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ সুরা মুনাফিকুন, আয়াত ৯-১০।

‘আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের মুখোমুখি কোর না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫। একই সুরায় ২৭৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের ধনসম্পদ খরচ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে বদলা রয়েছে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’

 

দান-সদকার পাশাপাশি ইসলামের কিছু বিধান মেনে চললেই মানুষ অতি মহৎ মানবিক চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অন্য মানুষকে সাহায্য করা, ভালো আচরণ করা, ক্ষমাশীল হওয়া, সহনশীল ও পরোপকারী হওয়া, উদারতা এবং দয়ালু ও মহৎপ্রাণ হওয়া। রসুল (সা.) বলেছেন, মানুষের প্রতি সহনশীল হওয়া ইমানের অর্ধেক।

আল কোরআনে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা সহনশীলতা ও নামাজের মাধ্যমে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সহনশীলদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৩।

দান-সদকায় ধনসম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধি পায়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে বিলুপ্ত এবং সদকাকে বৃদ্ধি করেন।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬।

রসুল (সা.) বলেন, ‘সদকা কোনো সম্পদ হ্রাস করে না।’ মুসলিম। হজরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দেয়। আর কিয়ামতের দিন বান্দাকে আরশের ছায়ায় জায়গা করে দেয়।’ তাবারানি, বায়হাকি।

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের জীবদ্দশায় ১ দিরহাম দান করা তার মৃত্যুর পর ১০০ দিরহাম দান করার চেয়ে উত্তম।’ আবু দাউদ, মিশকাত)।

দান-সদকার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’ বুখারি, মুসলিম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়ানো ছাড়া কমান না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তাকে মানুষের কাছে বড় করে তোলেন।’ মুসলিম।

সদকা পুণ্য ও তাকওয়া অর্জনের উপায়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,  ‘তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯২।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকাহ গ্রহণ করবে যাতে তা দিয়ে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পার।’ সুরা তওবা, আয়াত ১০৩।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন যায় না যেদিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করেন না। তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং বলেন, হে আল্লাহ! আপনি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম প্রতিদান দিন। দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ করুন।’ বুখারি, মুসলিম।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের কাছাকাছি এবং মানুষের ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে, আর দূরে থাকে ভয়াবহ দোজখ থেকে। পক্ষান্তরে কৃপণ অবস্থান করে আল্লাহ থেকে দূরে, বেহেশতের বিপরীতে এবং মানুষের শুভ কামনার বাইরে অথচ দোজখের একান্ত সন্নিকটে। জাহেল দাতা, বখিল আবেদের চেয়ে আল্লাহর কাছে অবশ্যই বেশি প্রিয়।’ তিরমিজি।

হাদিসে আছে, ‘সাত প্রকারের লোক আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে। তার মধ্যে এক ব্যক্তি সে যে গোপনে এমনভাবে সদকা করে : তার ডান হাত যা খরচ করে বাঁ হাত জানতে পারে না।’ বুখারি, মুসলিম।

প্রশ্ন আসতে পারে, দান-সদকার উত্তম মাধ্যম কোনটি? অভাবীদের দান করা বা মসজিদ-মাদরাসায় দান করা এ রকম আরও অনেক মাধ্যম আছে, এগুলোর মধ্যে কোনটি উত্তম? গরিব -দুঃখীদের দান-সদকা করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।

দানের মধ্যে আরেকটি উত্তম দান হচ্ছে সদকায়ে জারিয়া। যার সুফল সব সময় অব্যাহত থাকবে। যেমন মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, টিউবওয়েল স্থাপন ইত্যাদি। তা দাতা মারা যাওয়ার পরও সুফল অব্যাহত থাকে এবং মানুষ উপকৃত হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দান-সদকার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD