1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখিকা–নুসরাত_তারান্নুম_চৌধুরী [মম] এর গল্প // আমি_তোমার_প্রেমের_কৃষ্ণচূড়া - মান্নান প্রেস টিভি
বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ অপরাহ্ন

লেখিকা–নুসরাত_তারান্নুম_চৌধুরী [মম] এর গল্প // আমি_তোমার_প্রেমের_কৃষ্ণচূড়া

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৬৮ Time View
“হসপিটাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিল নিশিতা। আজ সে ভীষণ খুশি। কারণ আজ সে জানতে পেরেছে, সে মা হতে যাচ্ছে। হসপিটাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে বাসায় ফেরার পথে,হঠাৎ নিশিতার চোখ যায় শ্রাবণের মত একটা পুরুষ অবয়বের দিকে। কিন্তু নিশিতা সেদিকে এত পাত্তা দিল না।”
“কারণ শ্রাবণ তাকে আজ সকালে বলেছিল, আজ সে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোথাও একটা যাবে। তাছাড়া আজ রাতে সে বাসায় ফিরবে না বলেও নিশ্চিত করেছে। শ্রাবণ’কে এত বলে কয়েও নিশিতা তার সঙ্গে হসপিটালে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি।”
“নিশিতা তার হাতের রিপোর্ট গুলোর উপর বারবার খুশি মনে তাকাচ্ছে। আর উৎফুল্ল মনে মিটমিট করে মুদ্যু মৃদ্যু হাসছে। রিপোর্ট গুলোকে এবার সে বুকের সাথে চে’পে ধরে মিশিয়ে নিল। তাছাড়া আজ শ্রাবণ ওর সাথে না আসায় ওকে রিকশা দিয়েই হসপিটালে যাতায়াত করতে হয়েছে।”
“হঠাৎ একটা কথায় নিশিতা চমকে উঠল। ঠিক শ্রাবণের কন্ঠস্বরের মতো কেউ একজনের কন্ঠস্বর তার কানে কর্ণগোচর হতেই নিশিতা সেদিকটায় দৃষ্টিপাত করল। তবে যেটা দেখল, সেটার জন্য নিশিতা মোটেও প্রস্তুত ছিল না।”
“নিশিতার থেকেও প্রায় কয়েক হাত দূরে একটি মেয়ের সাথে শ্রাবণ খুব ক্লোজ হয়ে মেয়েটার হাতের উপর হাত রেখে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ শ্রাবণ তার সাথের মেয়েটি’কে বলল,
“চলো ডার্লিং?”
“আজ সারারাত আমি ফ্রী আছি। আমরা দু’জন আজ একান্ত সময় কা’টা’বো হোটেলে নিজেদের মতো করে।”
“তৎক্ষনাৎ মেয়েটি বলল, “হোটেল রুম বুক করেছো বেইবি?”
“হুম বেইবি!”
“আমাদের রুমটা তো অলওয়েজ স্পেশাল ভাবেই বুক করাই থাকে। তাহলে আজ আবার বুক করতে হবে কেন?”
“ওহ!”
“সরি বেইবি!”
“তোমার বউয়ের চিন্তায় চিন্তায় আমার মাথায় কোনকিছুই কাজ করে না আজকাল। মনেই থাকে না কোনকিছু!”
“শ্রাবণ’কে আরেকটু ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরে ন্যা’ক্যা’মি সুরে কথাগুলো বলে হেসে দিল মেয়েটা। শ্রাবণ বলল,
“তুমি আমার বউকে নিয়ে এত চিন্তা কেন করছো ডার্লিং?”
“বলেই মেয়েটার নাকটা আলতো করে টেনে দিল শ্রাবণ। আবার বলল, আমি নিশিতা’কে তোমার আর আমার ব্যপারটা শীঘ্রই জানাবো। ততদিন তুমি একটু সাবধানে থাকো,নিশ্চিতে থাকো। আমার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখো। আর আমার বিশ্বাস নিশিতা তোমাকে মেনে নিবে। আমার সুখের জন্য হলেও সে তোমাকে মেনে নিবে। আর মেনে নিতে বাধ্য। তবে তুমি এই ব্যপারটা নিয়ে আর একদমই কোন চিন্তা করবে না। বলেই মেয়েটিকে নিজের কাছে টেনে নিল শ্রাবণ। নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে,মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেল তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে।”
“ওদের কথপোকথন শুনে ওখানেই মূর্তির মত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিশিতা। এ সে নিজ কানে কি শুনলো? শ্রাবণ তার সাথে মজা করছে না তো? চিন্তায় অস্থিরতায় নিশিতার হাত পা সহ সারা শরীর কাঁ’প’তে লাগলো। দমবন্ধ হয়ে, তার মনে ভেতর হাজারও অজানা আ’ত’ঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো।”
“মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে,বাজতে লাগলো শ্রাবণ আর তার সাথে থাকা অচেনা মেয়েটির সবগুলো কথোপকথন। নিশিতা নিজের মনের ভেতর তৈরি হওয়া আ’ত’ঙ্ক, অস্থিরতা আর কৌতুহল দমন করতে না পেরে, অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শ্রাবণ আর তার সাথে থাকা অচেনা মেয়েটাকে, ওদের পিছু থেকে ফলো করতে শুরু করল। একপর্যায়ে সেও তাদের পিছু পিছু তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যায়। যেটা শ্রাবণ আর তার সাথের অচেনা মেয়েটির অগোচরেই।
____________________
“আমার আর শ্রাবণের জীবন থেকে চলে যাচ্ছো না কেন নিশিতা?”
“শ্রাবণ তোমাকে এখন আর আগেরমত বিন্দুমাত্রও ভালোবাসে না! যদি শ্রাবণ ভালোবাস’তো,তাহলে সে তোমাকে দিনের পর দিন মি’থ্যে বলে, তোমাকে ঠ’কি’য়ে, রোজ রোজ স্পেশাল হোটেল রুম বুক করে, আমার সাথে প্রতিনিয়ত একান্ত অ’ন্ত’র’ঙ্গ মুহূর্ত কা’টা’তো না?”
“তোমার মতো ব’ন্ধ্যা/আঁ’ট’কু’ড়ে/সন্তান জন্মদানে অ’ক্ষ’ম একটা মেয়েকে বিয়ে করে শ্রাবণের জীবন’টা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে? ন’র’কে’র মত হয়ে গেছে? শ্রাবণের এতো সুন্দর জীবনটা’কে তুমি নিজের হাতে ধ্বং’স করে দিয়েছো? বিবর্ণ করে দিয়েছো?”
“শ্রাবণ’কে বাবা ডাক শোনানোর মত কোন যোগ্যতাই তোমার মধ্যে নেই?”
“আর শুনো,সে এখন আমার সাথে অ’ন্ত’র’ঙ্গ অবস্থায় হোটেলেই আছে। তাই বারবার ফোন করে আমাদের ব্যক্তিগত সুন্দর সময়টা ন’ষ্ট করো না বলে দিচ্ছি! এর পরিণাম একদম ভালো হবেনা?”
“পুরোদমে কথা গুলো বলে হাফ ছাড়লো মোনালিসা। মোনালিসা মনে মনে বলল, যেইভাবেই হোক, যেই করেই হোক! এই নিশিতা নামক আ’প’দ/আ’ব’র্জ’না’টা’কে আমার আর শ্রাবণের জীবন থেকে সমূলে উ’প’ড়ে পেলতে হবে। এর জন্য যা যা করার প্রয়োজন? দরকার হলে আমি তাই তাই করবো! যতোটা নিচে নামতে হয় দরকার হলে ঠিক ততোটাই নিচে নামবো। একমাত্র এই মেয়েটার জন্যই শ্রাবণ’কে এখনো আমি নিজের করে পাচ্ছি না!”
“কথা বলা শেষে কল লিস্ট থেকে নিশিতার নাম্বারটা ডিলেট করে দিল মোনালিসা। ফোনটা ঠিক আগের মতোই যথাস্থানে রেখে দিল। কারণ শ্রাবণ যদি জানতে পারে মোনালিসা তার ফোন থেকে নিশিতার সাথে কথা বলেছে, কিংবা নিশিতাকে এইরকম কড়া সুরে শা’সি’য়ে’ছে অথবা হু’ম’কি/ধা’ম’কি দিয়েছে? তাহলে শ্রাবণ ওর খবরই করে পেলবে। তাহলে তো শ্রাবণকে ও পাবেনা?ওর উদ্দেশ্য ও সফল হবেনা। ওর হাত ছাড়া হয়ে যাবে? এটা কোনমতেই মোনালিসা হতে দিবে না!”
“শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। মোনালিসাও কিছু হয়নি এমন একটা ভান ধরে আগের মতোই বেডের উপর ন’গ্ন অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।”
___________________
“একই বিছানায় নিজের স্বামীর সঙ্গে অন্য আরেক’টি নারীকে ন’গ্ন এবং অ’ন্ত’র’ঙ্গ অবস্থায় দেখলে সেই মুহুর্তে একজন নারীর ঠিক নিজের মধ্যে কেমন অনুভব হতে পারে?”
“অশ্রুসিক্ত নয়নে রয়েল হোটেলের ৩০৭ নাম্বার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশিতা। কিছুক্ষন আগে শ্রাবণ আর ওর সাথের মেয়েটার পিছুপিছু সেও এখানে ফলো করতে করতে চলে আসে। মেয়েটার সাথে নিজের স্বামী শ্রাবণকে হোটেল রুমে ডুকতে দেখে নিশিতার দুনিয়া উল্টে যায়। চিন্তায় অস্থিরতায় তার কিছু সময় পরেই নিশিতা শ্রাবণের নাম্বারে লাগাতার কল করতেই মেয়েটি ফোন রিসিভ করে কড়াসুরে কথাগুলো বলল নিশিতাকে।”
“মেয়েটিকে কিছু না বলে তৎক্ষনাৎ কল কে’টে দেয় নিশিতা। টলমল অশ্রুসিক্ত নয়নে,দূ’র্ব’ল পায়ে, ব্য’থি’ত হৃদয়, ভা’রা’ক্রা’ন্ত মন বেরিয়ে আসে হোটেল থেকে। ঝা’প’সা দৃষ্টিতে আবেগশুন্য হয়ে তাকিয়ে থাকে ব্যস্ততম রাস্তার পানে। মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে রঙিন জীবনটা বড্ডো ফ্যা’কা’সে ধুসর, বিবর্ণ লাগছে নিশিতার কাছে।”
“আজকে সকালেও অফিসে বের হওয়ার সময় শ্রাবণ নিশিতাকে জড়িয়ে ধরে মৃদ্যু আলিঙ্গন করে। পর পর কয়েকটি অধরের উষ্ণ পরশ ভুলিয়ে দিয়েছে তার ললাটে, সমগ্র লোচনে। তারপর আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে “ভালোবাসি প্রিয়তমা নিশু” একথাখানিও কতোটা মাদকতা মিশিয়ে বলেছিল। তাহলে সবটাই কি নিতান্তই শ্রাবণের অভিনয় ছিল?”
“কেন এই প্রতারণা?”
“আর কেন এত এত নিখুঁত অভিনয়?”
“আর কেন কেন এত………..
ওহ!
“আর কোন কিছুর উত্তর খুঁজে পেলনা নিশিতা। মানসিক বি’ধ্ব’স্ত উ’দ্ভা’ন্তে’র মতো কিছুক্ষণ হোটেল পানে ছেয়ে এগিয়ে যায় বাসার উদ্দেশ্য।”
_____________
“শ্রাবণ সারারাত বাসায় ফিরেনি। নিশিতা সারারাত ছটফট ছটফট করছিল, বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ। শ্রাবণ নিশ্চয়ই হোটেলে এখনও ওই মেয়েটার সাথেই অ’ন্ত’র’ঙ্গ মুহুর্ত কা’টা’তে ব্যস্ত হয়তো। বুক ছিঁ’ড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো নিশিতার।”
“চিন্তায়, অস্থিরতায়, দুঃখে ক’ষ্টে, নিশিতার দু’চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম আসেনি সারারাত জুড়ে। সারারাত কাঁ’ন্না করেছিল শ্রাবণের জন্য। শ্রাবণ তার সাথে বিশ্বাস’ঘা’ত’কা’র জন্য। নিশিতা সারাটারাত কেঁ’দে’কে’টে অনিদ্রায় রাত্রিটাকে দিন করে দিলো। সারারাত না ঘুমানোর ফলে চোখের নিচে কালো কালির দাগও জমে গেছে। অতিরিক্ত কাঁ’ন্না’র ফলে চোখগুলো ফুলে ঢোলের মতো হয়ে গেছে। নিশিতা সারারাত ভাবল,
“একটু ভালো থাকার আশায় মানুষ যা কিছু আঁ’ক’ড়ে ধরে,সেটাই একসময় ভালো না থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়! বিষাক্ত তীরের মতো আঘাত হানে বক্ষপিঞ্জিয়ার মধ্যখানে। শ্রাবণ তার সাথে এমনটা না করলেও পারতো। একটু সময় কি অপেক্ষা করা যেতো না?”
___________________
“সকাল বেলা ঠিক নয়টায় শ্রাবণ ফিরে আসে বাসায়। হাফ ছাড়লো শ্রাবণ। সারারাত তার উপর অনেক ধ’ক’ল গেছে। মোনালিসাকে সারারাত সামলাতে সামলাতে তার অবস্থাও করুণ। মেয়েটা এমনই। ছাড়তে চায়না তাকে একবার পেলেই। রুমে ঢুকতেই অনেকটা বিস্ময়ে চমকিত হয়ে গেলো শ্রাবণ। কারণ নিশিতা দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। আজকের হাসিতে যেন অন্য কিছু একটা বিদ্যমান। তাছাড়া সাজে ও আছে ভিন্নতা। নিশিতা আজ শ্বেত,শুভ্র, সাদা শাড়ি পরে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণের সামনে।”
“সাদা শাড়ি পরিহিত নিশিতাকে আজ বেলিফুলের মতো শুভ্র,স্নিগ্ধ পবিত্র সতেজ এবং মনোরম লাগছে। এইরকম অদ্ভুত রকমের সাজসজ্জা নিশিতা আগে কখনও করেনি, আর শ্রাবণও দেখেনি। বলা যায় নিশিতা সাদা রঙটা তেমন একটা পছন্দ করেনা বলে শ্রাবণ জানে। তার সবগুলো শাড়ি কাপড় খোঁজ করেও বোধহয় সাদা রঙের কোন শাড়ি কাপড় পাওয়া যাবে না। তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো?”
“তাছাড়া আজ সকাল সকাল এমন সাজসজ্জা করার মানেটাও শ্রাবণ হঠাৎ খুঁজে পেলনা। নিশিতাকে শ্রাবণ ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু তার জীবন অপূর্ণ একটা সন্তান ছাড়া। সেও তো চায় বাবা হতে অন্যদের মতো। বাবা ডাক শুনতে। কম’তো আর হলো না?”
“আজ প্রায় তিনবছর চলছে,ওদের বিয়ের। তবুও তাদের কোনো সন্তান নেই। তাই সে নিশিতার অগোচরেই মোনালিসাকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মোনালিসা শ্রাবণের অফিসের কলিগ। আজ থেকে প্রায় কয়েক মাস যাবৎ তাদের এফেয়ার চলছে দু’জনের মধ্যে। দু’জন প্রায় অনেকটা কাছাকাছি বলতে, ঘনিষ্ঠভাবেও চলে এসেছে।”
“তবে মোনালিসার কথাটা শুনলে নিশিতা খুব ক’ষ্ট পাবে এটা শ্রাবণ জানে। কিন্তু একটু বুঝালেই নিশিতা অবশ্যই শ্রাবণ কে বুঝবে বলে শ্রাবণের অগাধ বিশ্বাস। নিশিতাও তাকে খুব ভালোবাসে। এতো বছরের সংসারে শ্রাবণকে ছাড়া একটা রাতও সে কোথাও কা’টা’য়’নি।”
“শ্রাবণ নিশ্চিত নিশিতা সবকিছু মেনে নিবে। মোনালিসাকেও মেনেও নিবে। হয়তো একটু ক’ষ্ট হবে এই আর কি। তবে নিশিতা নিজেকে সামলে নিতে পারবে। শ্রাবণ তার স্বামী, ভালোবাসার মানুষ। শ্রাবণের খুশির জন্য হলেও নিশিতা সব মেনে নিবে। তাছাড়া শ্রাবণের খুশির জন্য, ইচ্ছে পূরণের জন্য নিশিতা এইটুকু করতেই পারে,করতে বাধ্য।”
__________________________
চলবে………

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD