1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখিকা: ফারহানা_কবীর_মানাল এর গল্প // জোনাকি_পোকার_বাতি - মান্নান প্রেস টিভি
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫ অপরাহ্ন

লেখিকা: ফারহানা_কবীর_মানাল এর গল্প // জোনাকি_পোকার_বাতি

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩
  • ১০৯ Time View
বিয়ের সাতদিনের মাথায় জানতে পারি, আমার শশুর আবার বিয়ে করবেন। পাত্রী পছন্দ করা আছে, শুধু ছেলের বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ছেলের বিয়ে হয়েছে সাত দিন হয়ে গেছে, এখন শুভ কাজে দেরি করার কোন মানেই হয় না।
সকাল বেলা খাবার টেবিলে উনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী শুক্রবার বিয়ে। এ বিষয়ে কারো কোন প্রকার আপত্তি বরদাস্ত করবেন না তিনি। শাশুড়ি মা সেই থেকে একনাগাড়ে কাঁদছে। শেষ বয়সে এ কোন বিপদ নেমে এলো উনার সংসারে! বাড়ির পরিবেশ একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকজন আত্মীয় তখনও নিজেদের বাড়িতে ফেরেননি। আমাদের বিয়ে উপলক্ষে এসেছিলেন, তাঁদের ভিতর এ বিষয় নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আমি সবকিছু চুপচাপ দেখছি। কিছু বলার অবস্থা নেই আমার।
হাতের মেহেদী এখনও শুকায়নি , বাড়ির নতুন বউ আমি। এমন গুরুগম্ভীর বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই ভালো হবে। বিয়ের আগে চার বছরের সম্পর্ক ছিল মনিরুলের সাথে। এক কলেজে পড়াশোনা, সেই সুবাদে পরিচয়। সেখান থেকেই প্রণয়ের সম্পর্ক, চার বছর পর সাতদিন আগে বিয়ে হয়েছে। জানা মতে, মনিরুলের মা-বাবা আমাকে পছন্দ করেনি। আমাদের বিয়ে নিয়ে অনেক ঝামেলা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলের জেদের সাথে জিততে পারেনি বিধায় বিয়েটা হয়েছে। কথা ছিলো বিয়ে পরে আমরা আলাদা থাকবো, আগের মতো পড়াশোনা চালিয়ে যাবো। সবকিছুর খরচ শশুর আব্বা দিবেন। যদিও শশুর মশাই আমাকে পছন্দ করেননি, তবুও আমার পড়াশোনা খরচ চালাতে রাজি ছিলেন। কারণটা অবশ্য আমার অজানা। হয়তো তিনি ছেলের বাবা হিসেবে নিজের সবটুকু দায়িত্ব এড়াতে পারেননি।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চললো, শাশুড়ি মা একনাগাড়ে কেঁদে চলেছেন। সকাল থেকে এক জায়গাতে বসে আছেন। কয়েকবার সান্তনা দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কি বলবো বুঝতে পারিনি। শুধু হাত চেপে ধরে বলেছি, “আল্লাহ আপনাকে ধৈর্য দান করুক।”
শাশুড়ি মা-ও ভাঙা গলায় আমিন বলেছেন প্রতিবার। মনিরুল সকাল বেলা শশুরের সাথে কথা কাটাকাটি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে, এখনও ফেরার নাম নেই। কয়েকবার কল দিয়েছি কিন্তু মোবাইল বন্ধ। শশুর আব্বাও অফিসে চলে গেছেন, সন্ধ্যার পরে ফিরবেন। এই বয়সে এসে শশুর আব্বা কেন যে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন! কিছুই বুঝতে পারছি না। শশুর-শাশুড়ির সম্পর্কে এমন ফাটল ধরবে আশা করিনি। উনাদের ভেতরে ভালোবাসার কমতি আছে, এমনটা সাত দিনে একবারও মনে হয়নি আমার বরং ভেবেছি উনাদের সম্পর্ক অনেক বেশি দৃঢ়, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ । আসলেই দূর থেকে যেমনটা দেখা যায়, ভেতর থেকে তেমনটা হয় না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাশুড়ি মা’য়ের কাছে গেলাম। ছেলের বউ হিসেবে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে। বিপদের সময় উনাকে স্বান্তনা দেওয়া আমার কর্তব্য। নতুন বউ বলে সব দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
” আম্মা কত সময় এভাবে বসে থাকবেন? এরকম করলে আপনার শরীর খারাপ করবে। “
” মনটা যেখানে ম”রে গেছে, শরীর দিতে আর কি হবে?”
” তবুও এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না, আপনাকে শক্ত হতে হবে। “
” মুখে বলা অনেক সহজ রে মা। কিন্তু কি করে শক্ত হব আমি? এতো বছরের সংসার আমাদের, ছেলের বিয়ে দিয়েছি, কয়েকদিন পরে নাতি-নাতনীদের মুখ দেখবো। অথচ উনি আবার বিয়ে করবেন বলছেন। আল্লাহ কোন পা”পের শাস্তি দিচ্ছে আমাকে!”
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন। পরম যত্নে শাশুড়ি মা’কে বুকে জড়িয়ে নিলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, ” আপনি চিন্তা করবেন না। আব্বার সাথে আমি নিজে কথা বলবো। উনার এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইবো। এমনটা না করার জন্য অনুরোধ করবো। “
” আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুক। “
কয়েক মিনিট পরে শাশুড়ি মা একটু শান্ত হলেন। উঠে গোসলে চলে গেলেন। আমিও ঘরে চলে এলাম। গোসলের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। বাড়িতে সব রুমের সাথে আলাদা আলাদা বাথরুম আছে। বাড়ির সামনে সিঁড়ি বাঁধানো বিশাল পুকুর তাই গোসল নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না।
বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম মনিরুল ফিরে এসেছে। খাটের উপর বসে আছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ চিন্তিত। ধীর পায়ে হেঁটে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। হাতের উপর হাত রেখে বললাম, ” চিন্তা করো না, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। “
মনিরুল কিছু বললো না, তাছ্যিলের হাসি হাসলো। যেন সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে, আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
” মনিরুল, তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে মা’কে কে সামলাবে বলো? “
” আব্বা হুট করে এমন অবান্তর সিদ্ধান্ত নিবেন কখনো ভাবতে পারিনি। জানো মিতালি, বাবা-মায়ের সম্পর্কে ভালোবাসার কোন অভাব ছিল না। কেন যে আব্বা দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইছে বুঝতে পারছি না। “
” এভাবে নিজেরা আলোচনা করে কোন লাভ হবে না। আব্বার সাথে কথা বলতে হবে। তাহলেই সমাধানের পথ বের হবে। “
” আব্বা আজীবন এক কথার মানুষ, একবার যা বলেন তা-ই করেন। কারো কথার তোয়াক্কা করেন না। “
” তবুও কথা বলে দেখতে হবে। “
” কিছু ভালো লাগছে না। তোমার বাপের বাড়ির লোকজন এই ব্যাপারটা জানলে আমার মানসম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝতে পারছো? তাছাড়া লোক-জনকে মুখ দেখাবো কি করে?”
” অযথা এসব চিন্তা না করে, আব্বার ভুলটা শোধরানোর চেষ্টা করো। “
” তুমি বুঝতে পারছো না। “
” আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি না। তাই বলে তুমি এতো অস্থির হবে? আমার বাপের বাড়ির লোকজন এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারবে না। তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো। আমি ওদের কাউকে কিছু বলবো না। “
” এসব কথা গোপন থাকে না রে পা”গ”লী। “
সত্যিই ব্যাপারটা গোপন রইলো না। ব্যাপারটা পাড়াপ্রতিবেশি সকলের কানে পৌঁছে গিয়েছে। বিকেল থেকে দলে দলে মহিলারা বাড়িতে ভীড় করছে, নানান জনের নানান কথা। গ্রামের পরিবেশ হয়তো এমনই হয়। প্রথম দিকে উনাদের কথা কিছুটা হলেও সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল কিন্তু আস্তে আস্তে মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শাশুড়ি মা’কে নানান রকমের প্রশ্ন করছে, অদ্ভুত সব কথা বলছে। কয়েকজন আত্মীয় উনাদের তালে তাল দিচ্ছে। উনাদের কথায় আমারই গা ঘিনঘিন করে উঠছে, বিরক্ত হয়ে একে একে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে লাগলাম। চিৎকার করে বলে উঠলাম, ” আমার শশুর বিয়ে করুক বা না করুক এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। এসব নিয়ে আপনাদের মাথা ঘামতে হবে না। কোথা থেকে এমন আজগুবি কথা নিয়ে আসেন আপনারা? আর আত্মীয়দের বলছি, স্ব-সম্মানে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। আমাদের বদনাম করতে আপনাদের তিন বেলা পেট পুরে খাওয়ানো হচ্ছে না। “
শশুর আব্বা তখন বাড়ি ঢুকছিলেন, আজ একটু আগেই বাড়িতে ফিরেছেন। আমার কথা শুনে কয়েক মুহুর্ত দাঁড়ালেন। কিন্তু কিছু বললেন না, চুপচাপ নিজের মতো ঘরে চলে গেলেন। সন্ধ্যের আগে আগে বেশিরভাগ আত্মীয় নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। শুধুমাত্র মামি শাশুড়ি রয়ে গেলেন। হয়তো ননদের পাশে থেকে ননদকে স্বান্তনা দিতে চাইছেন।
সত্যি বলতে এসব কিছু আর ভালো লাগছে না, লোকজনের একটা কথাও সহ্য করতে পারছি না। সত্যি হলেও লোকমুখে নিজেদের খারাপ কথা শুনতে বড্ড গায়ে লাগে। অবশ্য শশুর আব্বা বাড়িতে আসার পরে বাড়ির পরিবেশ একদম বদলে গেছে। শাশুড়ি মা উনার ননদের ঘরে বসে আছেন, মনিরুল নিজের মতো বাইরে চলে গেছে। এখন বাড়িতে মানুষ বলতে আমরা পাঁচজন। কি করবো ভেবে না পেয়ে, সকলের জন্য নাস্তা বানালাম। আদা-চা এবং পাস্তা। এর থেকে বেশি কিছু বানাতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। নাস্তা সাজিয়ে শশুরের ঘরের দিকে গেলাম। দরজায় কড়া নাড়তে ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো।
” কে ওখানে?”
” জ্বি, আমি মিতালি। “
” ওহ্, আচ্ছা ভেতরে এসো। “
” আসসালামু আলাইকুম আব্বু। আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছিলাম। “
” ওয়ালাইকুম আসসালাম। বেশ আদবকায়দা শিখেছ দেখছি। তা বেশ ভালো। “
” জ্বি। “
” তা শুধু নাস্তাই দিতে এসেছ নাকি কিছু বলবে?”
” আসলে আব্বু। “
” আব্বু বলে যখন ডেকেছ তখন সংকোচ কর না। বাবা মেয়ের সম্পর্কে সংকোচ থাকা উচিত নয়। তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছে নাকি এ বাড়িতে?”
” না আব্বু তেমন কিছু নয়। “
” কোন জিনিসের প্রয়োজন হলে নিঃসংকোচে আমাকে বলতে পারো। তোমাকে আমি মেয়ের মতোই স্নেহ করি। “
শশুরের কথায় ভয় অনেকটা কেটে গিয়েছে। উনাকে যতোটা খারাপ মনে করেছিলাম হয়তো ততটা খারাপ নন। রাগের বশে বিয়ে কথা বলে ফেলেছে। হয়তো শাশুড়ির সাথে ঝগড়া হয়েছিল। সাহস করে বলে ফেললাম, ” আব্বু আপনার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে চাই। আম্মা অনেক বেশি কষ্ট পাচ্ছে। “
মুহুর্তে ভিতরে শশুরের মেজাজ পরিবর্তন হয়ে গেল। চোখে-মুখে রাগ উপচে পড়ছে। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছেন। কর্কশ গলায় বললেন, ” বউ মা, তুমি এ পরিবারের অংশ। পারিবারিক আলোচনায় অংশ নিবে সমস্যা নেই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চেষ্টা করবে না। আমি বিয়ে করবো কিনা এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কাউকে কৈফিয়ত দিবো না। “
” আব্বু আমি আসলে।”
” তোমাদের মানসম্মানে সমস্যা হলে হোস্টেলে ফেরত চলে যাও। চাইলে বাসা ভাড়া নিয়েও থাকতে পারো। মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দরকার হলে তোমার শাশুড়ি আম্মাকেও সাথে নিয়ে যেও। এখন আসতে পারো। “
হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে এলাম। শশুর আব্বা যে এমন করবেন বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম উনি আমার কথা শুনবেন। হয়তো শাশুড়ি মা’য়ের কষ্ট বুঝতে পারবেন কিন্তু উল্টোটা হলো।
পরেরদিন সকালে মেয়ের বাড়ি থেকে দুইজন লোক এলো। শশুর আব্বু নিজের হাতে সবার যত্ন-আত্তি করছে। নানান পদের খাবারের আয়োজন করেছে, লোক দুইটা দিব্যি নিজেদের মতো কথা বলে যাচ্ছে, খাবার খাচ্ছে। আমার ভাবতেও অবাক লাগছে, সবকিছু জেনে বুঝে এরা কিভাবে এখানে মেয়ের বিয়ে দিতে পারে? যেখানে পাত্র বিবাহিত, তাঁর ছেলে পর্যন্ত বিয়ে করেছে, সেখানে কিভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারে?
উনাদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম মেয়ের বয়স ২২ বছর। মেয়ের বয়স শুনে মাথায় বা”জ পড়লো আমার। এখনকার যুগে বাইশ বছরের মেয়েকে এক ছেলের বাপের সাথে বিয়ে দিচ্ছে! যেখানে পাত্রের বয়স ৫০+। লোক দুটো যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” তোমার নতুন শাশুড়ি আসছে, সবকিছু নিজের হাতে ব্যবস্থা করবে। “
আমি কোন প্রকার উত্তর দিলাম না। হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD