মাদ্রাসার ছাত্রী আমি। টুকটাক ধর্মকর্ম জানি।
এক দুপুরে নানী আমাকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে গেল। নানী পর্দানশীন মহিলা। পুকুরটা রাস্তার ধারে। নানী আমাকে বলল, ‘নাতি, আমি গোসল করতে নামছি। কোনো লোক এলে জট জলদি আমাকে ডাক দিবি, ঠিক আছে?’
-‘ঠিক আছে নানী।’
.
নানী ঘাটে বসে গায়ের কাপড় খুলে সাবান মাখতে লাগল। আমি পাড়ে ঠায় দাড়িয়ে আছি। কোনো লোকজন আসে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছি। খানিক পরে একটি লোক আসতে দেখে আমি হাকুলি-বিকুলি করে বলে উঠলাম, ‘নানী গো নানী! একটা লোক আসছে গো নানী। আপনার এখন কি উপায় হবে গো নানী!’
নানী আমার হাঁকডাক শুনে শশব্যস্ত হয়ে গায়ে, মাথায় শাড়ী জড়িয়ে নিল। লোকটি পার হয়ে গেল। ঘোমটার ফাঁকে নানী দেখল, লোকটি আর কেউ নয়, ও পাড়ার ফটিক। তাই দেখে নানী বলল, ‘ও-হহ! এ তো ও পাড়ার ফটিক রে! ভাল করে একটু দেখে ডাক দিবি না? পরপুরুষ লোক এলে ডাক দিবি, বুঝলি?’
-‘হুম, বুঝলাম।’
.
কিছুক্ষণ পর আর একজন লোককে আসতে দেখে আমি মনে করলাম এই লোক বুঝি পরপুরুষ। আমি আবারো চিৎকার করে বললাম, ‘নানী গো নানী! পরপুরুষ লোক আসছে। তাড়াতাড়ি কাপড়-চোপড় ঠিক করো।’
নানী সত্বর গায়ে-মাথায় শাড়ী জড়িয়ে নিল। অতঃপর চোরা চাহনিতে দেখল, দুধ-ওয়ালা। এবারো মহা বিরক্ত হয়ে আমাকে বলতে লাগলো, ‘আরে বোকা হতচ্ছাড়া! ও তো দুধ-ওয়ালা রে! প্রত্যেকদিন আমাদের ঘরে দুধ দিয়ে যায়, জানিস না? কোনো দিন দেখিস নি? ভাল করে দেখে নিবি পরপুরুষ কিনা। তবেই না আমায় ডাকবি। ঠিক আছে?’
-‘ঠিক আছে নানী।’
.
আমি পাড়ে বসে মাটি খুটতে থাকি আর ভাবতে থাকি, ‘পরপুরুষ লোক কে আবার? আমার বিদ্যা-বুদ্ধিতে যতটুকু বুঝতে পারছি তাতে আমার বুঝ বলছে আমাদের বাড়ির লোক ছাড়া সব লোক-ই পরপুরুষ।’ সামান্য ক্ষণ পরেই মাথায় ঝুড়ি নিয়ে একজনকে আসতে দেখে আমি সিউর হলাম এই চুড়ি-ওয়ালা নিশ্চয়ই পরপুরুষ। চিৎকার করে বলে উঠলাম, ‘নানী গো নানী! আসল পরপুরুষ আসছে। তুমি এবার কি করবা করো।’
নানী গায়ে, মাথায় কাপড় নিয়ে পিছন থেকে তাকিয়ে দেখে বলল, ‘ও তো চুড়ি-ওয়ালা রে! আমরা ওর কাছে কত চুড়ি কিনেছি। ওর হাত দিয়ে চুড়ি পড়িয়েছি। তুই কি চিনতে পারিস নাই?’
.
নানী সাবান মাখতে মশগুল। আমি তো মহা হতাশ। নানীর দৃষ্টিতে আসল পরপুরুষ কে তাহলে? এরা পরপুরুষ না হলে আসল পরপুরুষ আবার কাকে বলে? আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপল। এবার ঠিক করলাম, যেই আসুক না কেন, আমি আর নানীকে ডাকবো না। দেখি কি হয়!
এমন সময় অকস্মাৎ গ্রামের ইমাম সাহেব সে রাস্তায় পার হচ্ছিলেন। আমি দেখেও চুপচাপ মাটি নিয়ে খেলতে লাগলাম। কিছুই বললাম না। নানীকে দেখে মৌলবি সাহেব গলা ঝাড়তে শুরু করলেন। নানী শশব্যস্ত হয়ে লজ্জাবতী লতার মত শাড়ী জড়িয়ে জড়সড় হয়ে গেল। মৌলবি সাহেব পার হয়ে গেলে নানী রাগে অধীরা হয়ে পাড়ে এসে আমার গালে ঠাস ঠাস করে দু’ চড় লাগিয়ে দিল। বলল, ‘বাঁদর! পরপুরুষ চিনিস না? তোর চোখ খারাপ হয়েছে নাকি? কত করে বললাম যে, পরপুরুষ লোক এলে বলবি! না বলে চুপচাপ খেলছিস না? হতচ্ছাড়া কোথাকার!’
.
আমি খুব বেশি ব্যথা না পেলেও কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলাম,
‘ও নানী…, তুমিই তো বললে যে, ফটিক পরপুরুষ নয়, দুধ-ওয়ালা পরপুরুষ নয়, চুড়ি-ওয়ালা পরপুরুষ নয়। তাহলে আসল পরপুরুষ লোক কে? শুধু মৌলবিরা-ই যে, আসল পরপুরুষ তা তো আমি মাদ্রাসায় পড়ি নাই গো নানী!
ও নানী…, কেবল মৌলবি সাহেব-হাজী সাহেবদেরকে দেখে মাথার ঘোমটা দিতে হবে এটা তো আমি জানতাম না গো নানী!
ও নানী.., আসল পরপুরুষ, আর নকল পরপুরুষ কে, তা আমি আজও চিনলাম না গো নানী!
এ্যাঁ,এ্যাঁ,এ্যাঁ…!’