1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখক : প্রিয়োতমা_মেঘবালিকা এর গল্প // নীরা_আক্তার - মান্নান প্রেস টিভি
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন

লেখক : প্রিয়োতমা_মেঘবালিকা এর গল্প // নীরা_আক্তার

এম.এ.মান্নান.মান্না
  • Update Time : শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩
  • ৭৬ Time View
“চল্লিশ দিনের বিধবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন।এই সমাজ আপনাকে মেনে নিবে না প্রান্ত।সমাজ আমাদের কলঙ্ক দিয়ে দেবে, কখনো সুখি হতে দেবে না”
-কলঙ্কের ভয় আমি পাই না মেঘ…
-আমি পাই।প্লিজ প্রান্ত আমার থেকে দূরে থাকুন
মেঘ কথাটা বলেই কলটা কেটে দেয়।শুধু কাটে না একেবারে সুইচড অফ করে দেয়।বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মেঘ।রাত ২টা বেজে চল্লিশ মিনিট। চোখে ঘুম নেই তার…
_________
প্রান্ত বয়সে তার চেয়ে একবছরের ছোট।এছাড়া খুব ছোট বেলায় প্রান্তর বাবা প্রান্ত আর তার মাকে ছেড়ে চলে যায়।সমাজে তারা তেমন প্রতিষ্ঠিত না হলেও আল্লাহ কম কিছু দেয় নি।খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার মতো অবস্থা আছে তাদের।প্রান্তর মা একজন শিক্ষিকা।
মেঘেদেরই প্রতিবেশি তারা।সেই ছোট্টবেলা থেকেই সে মেঘকে পছন্দ করতো।
রোজ মেঘের স্কুলে যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকতো।হাতে থাকতো রাস্তা পাশ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বেলীফুল।তবে কখনো সাহস করে মেঘকে দেওয়া হয়ে উঠে নি তার।মেঘ চলে গেলে সে সেগুলো মেঘের চলার পথে বিছিয়ে দিতো।বিকেলে মেঘ ছাদে উঠলে লুকিয়ে লুকিয়ে মেঘকে দেখতো সে।প্রত্যেক ভালোবাসা দিবসে বেনামি চিঠি পাঠাতো সাথে মেঘের পছন্দের সাদা গোলাপ…..
মেঘও যে তাকে মনে মনে অপছন্দ করতো তেমনটা নয়,ছেলেটা বড্ড পাগলামো করতো।এমন পাগল ছেলেকে ভালো না বেসে পারা যায়?
কিন্তু বয়সের যে ফারাক…সমাজ তো মানবে না।এছাড়া তাদের পরিবারে প্রেম শব্দটা নেওয়াই বারণ সেখানে প্রেমের বিয়ে অসম্ভব। দরকার পরলে তার বাপ ভাই তাকে খুন করে ফেলবে তবুও মানবে না।শুধুকি তাকে খুন করবে?প্রান্তকেও তো শেষ করে ফেলবে!
বুক কাঁপে মেঘের…নিজের জন্য নয় প্রান্তর জন্য।
——–
প্রান্তও কখনো মেঘকে সরাসরি কিছু বলে না।হৃদয়ের সব ভালোবাসা গোপনে লুকিয়ে রাখতো।এমন লুকোচুরির ভালোবাসার মাঝে দুইজন বেড়ে উঠে।
প্রান্ত মেঘকে লুকিয়ে চিঠি লিখতো….তারপর গভীর রাতে চিঠিটা মেঘেদের ছাদে রেখে দিতো।মেঘ ভোর ভোর ছাদে গিয়ে চিঠিটা নিয়ে আসতো।যদিও প্রান্ত কখনো চিঠিতে নিজের নাম উল্লেখ করতো না তাতে কি?মেয়েরা সব বোঝে………”পুরুষের চোখের চাহুনি থেকে শুরু করে পুরুষের হৃৎস্পন্দন সব চেনে তারা”
এভাবেই কেটে যায় কয়েকটা বছর
মেঘ ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রান্তও এই ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে।তবে দ্বিতীয় বর্ষে।তবে রোজ তাদের চোখাচোখি হলেও কথা বলাবলি একেবারে ছিলো না বললেই চলে।চোখের ভাষার চেয়ে নিরাপদ আর কি কিছু হতে পারে?
মেঘ ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে।দরজা নক করতেই মেঘের মা এসে দরজা খুলে দেয়।মেঘ জুতা খুলে ভেতরে ঢুকবে এমন সময় হটাৎ করেই মেঘের বড় ভাই মেঘকে এক টান দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।কষিয়ে দুইটা চড় মারে।মেঘ চড় খেয়ে ছিটকে মেঝেতে পড়ে যায়।
পাশে মেঘের বাবা দাঁড়ানো।
মাও সেখানেই উপস্থিত কেউ কোনো কথা বলছে না।
বিস্ময়ে মেঘের মুখ দিয়ে কোনো কথা বার হচ্ছে না….
মেঘ নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। চোখে পানি ছল ছল করছে,
-কি করেছি আমি ভাইয়া?মেঘ কথাটা কিছুটা চেঁচিয়েই বলে উঠে,
মেঘের মা মেঘকে আরেকটা চড় বসিয়ে দেয়,চুলের মুঠি ধরে বলে উঠে,
-বড়ভাইয়ের মুখে মুখে তর্ক করিস।বেহায়া মেয়ে লজ্জা করে না তোর….।জানিস না প্রেম ভালোবাসা হারাম?এই মানুষ করেছি তোকে?
নিমিষেই চোখ বেয়ে ঝর্ণার বাড়ি ধারা বয়ে যায়….
মা বরাবরই ভাইকে বেশি সাপোর্ট করে।কিন্তু তাই বলে আজ ভাই তার গায়ে হাততুললো? মাও সেটাকে সাপোর্ট করবে…..?
মেঘ স্ব শব্দে কান্না করে উঠে,
মেঘর ভাই ঘর থেকে প্রান্তের লিখা চিঠি গুলো বার করে মেঘের মুখের উপর ছুড়ে মারে।
-মির্যা বাড়ির মেয়ে হয়ে এই সব রঙ্গ লীলা হচ্ছে?রঙ তামাশা বেরে গেছে তাই না?যৌবন বাঁধ মানছে না তাই তো?
কথা বলতে বলতে মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে মুন্না(মেঘের বড় ভাই)
মেঘ দুকদম পিছিয়ে যায়,
ঘেন্না লাগছে তার ভাই নামক এই লোকটাকে…..
মেঘের বাবা তাদের মাঝে চলে আসে,মুন্না উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-কি সব ভাষায় কথা বলছিস তুই মুন্না।এক চড়ে সব দাঁত ফালায়ে দিবো।এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত দিস। আমি এখনো বেঁচে আছি।আমার মেয়েকে শাসন আমি করবো।
মেঘের ভাই গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠে,
-না মারবো না পুজা করবো তোমার মেয়ের পরিবারের মান ইজ্জত সব দফা রফা করে দিলো।আর তুমি আমারে বকো।এতো এক চোখামো ভালো না আব্বা।
মেঘের বাবা শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
-এগুলো কে দিয়েছে মা?কেউ কি তোকে জ্বালায়?নাম বল কেটে ভাসিয়ে দেবো…
আমার বিশ্বাস তুই এমন কিছু করবি না।
মেঘের বুক কেঁপে উঠে। তার বাপ ভাই সব করতে পারে।যদি প্রান্তর কোনো ক্ষতি করে তখন?
মেঘ চুপ করে থাকে।মেঘকে চুপ থাকতে দেখে মেঘের মা এসে মেঘকে আরো দুইটা চড় মারে,
-নির্লজ্জ মেয়ে নাম বল।কি করে এসেছিস তার সাথে?নাম বলতে বলেছি নাম বল
মেঘ চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠে,
-বলবো না।ওর কোনো ক্ষতি তোমরা করবা না বলে দিলাম….ওর যদি কোনো ক্ষতি হয় এই মেঘ কিন্তু বজ্রপাতের মতো ঝড়ে পড়বে।সব ভাসিয়ে দেবে।জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাঁক করে দেবে সব কিছু……
সবাই থমকে যায়,
“তলে তলে এতো?সাত চড়ে রা না কাটা মেয়েটা এতো কথা বলতে পারে?মেঘের বাবা থমকে যায়।মেয়েটা তার শেষ হয়ে গেছে।একে বারে শেষ।ধ্বংস হয়ে গেছে মেয়েটা।কোন বংশের বখাটে ছেলে মেয়েটাকে একেবারে শেষ করে দিলো”
মেঘের বাবা মেঘকে ঘরে আটকে দেয়।ঘর থেকে বার হওয়া বারণ ফোনে হাত দেওয়া বারণ…।পারলে মেয়ের পায়ে একটা শিকল পড়িয়ে দেবে সে।
যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ে দিতে হবে।একটা মেয়ের জন্য বিয়ের চেয়ে বড় বন্ধন আর কি হতে পারে।শেকল পড়ানো জরুরি।না হলে মান সন্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
সেদিন মেঘকে অনেক মার ধর করেও তারা মেঘের পেট থেকে প্রান্তর নাম বার করতে পারে নি।তবে মেঘ বলার চেষ্টা করেছে সে কোনো সম্পর্কে যায় নি।কারো সাথেই তার কোনো সম্পর্ক নেই।কিন্তু কেউ মানেনি।মেঘের মা মেঘকে চুলার লাকড়ি দিয়ে পিটিয়েছে।তবুও মেঘ একটা উহ্ শব্দ পর্যন্ত করে নি।রাগে গজ গজ করতে করতে সেদিনের মতো মেঘকে রেহায় দেয়া হয়।
পরদিনই মেঘের ভাইয়ের এক প্রাবসি বন্ধু ফারাজের সাথে মেঘের বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়।মেঘের অমতে একরকম জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয় তার।শর্ত একটাই মেঘ যদি বিয়েটা করে নেই তাহলে তার সেই নাম না জানা প্রেমিকের কোনো ক্ষতি তারা করবে না।নাম জানারও চেষ্টা করবে না।প্রেমিকের অধ্যায় সেখানেই শেষ করে দিবে।
মেঘ বিয়েটা করে নেই…. বিয়ে করতে বাধ্য সে।একদিকে বাবা বা হাত দিয়ে বুক চেপে ধরে রেখেছে অন্যদিকে ভাই বেল্ট নিয়ে তৈরী।মা সে তো ছেলে ছাড়া দুনিয়ায় কাওকে চেনে না।মেয়ের সুখ দুঃখ দেখার সময় কোথায়?
মেঘের বাবা ভাই মা আর ছেলের পরিবারের কিছু লোকের উপস্থিতে ভিডিও কলে মেঘের সাথে মুস্তাফিজের বিয়ে দেওয়া হয়।।সে মেঘের বড় ভাইয়ের বন্ধু।মেঘকে আগে থেকেই পছন্দ করতো।প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার সাহস হয় নি।কারণ মেঘের পরিবার অন্যরকম।মেঘও আর পাঁচজনের থেকে একেবারে আলাদা।হটাৎ বিয়ে দিতে চাইলেও সে না করে না…
দিন শেষে মেঘকে পাচ্ছে তার আর কি চাই।বাঁধ ভাঙ্গা সুখের জোয়ারে ভাসছে ফারাজ।বার বার মেঘের ছবি বুকে নিয়ে চুমু খাচ্ছে।
প্রান্ত মেঘের বিয়ের কথা শুনে একে বারে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়।কয়েকবার আ’ত্ম’হ’ত্যা করারও চেষ্টা করে তবে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পারে না।সে মরে গেলে মায়ের কি হবে?
মায়ের যে সে ছাড়া আর কেউ নাই।
_______
কথা ছিলো বিয়ের এক সপ্তাহ পর ফারাজ দেশে ফিরবে তারপর ধুম ধাম করে বিয়ে করে মেঘকে ঘরে তুলবে।
বিয়ের সপ্তম দিনে ফারাজ দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে উঠে।
দূর্ভাগ্য ক্রমে সেদিনই প্লেন এক্সিডেন্টে মুস্তাফিজ মারা যায়।
বিয়ের সপ্তম দিনেই মেঘের শরীরে সাদা শাড়ি উঠে।
আজকে ফারাজের মারা যাওয়ার পর চল্লিশ দিন সম্পূর্ণ হয়েছে।আজ
সকালে মেঘ শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলো ফারাজের চল্লিশায়।মূলত মেঘের মা চেয়েছিলো এই সুযোগে মেঘকে শ্বশুর বাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে।কিন্ত শ্বশুর বাড়ির কেউ তাকে ঘরে ঢুকতে দেয় নি।
সমাজ তাকে নতুন নাম দেয়,”রাক্ষসী,অপয়া “বিয়ের সাত দিনের মাথায় স্বামীকে খেয়ে ফেলেছে সে।ইস্ কি ঘৃনা কি ধিক্কার।
মেঘ শুদু তাদের ছোট্ট করে উওর দেয়,
-জন্ম মৃত্যু কখনো কোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।আমি চাইলেই কাওকে মেরে ফেলতে পরবো না আবার চাইলেই কাওকে বাঁচিয়ে দিতে পারবো না।আর সেটা তো ছিলো দূর্ঘটনা।সেখানে দয়া করে আমাকে দায়ী করবেন না।অপয়া শব্দটার কোনো অস্তিত্ব নেই।
মেঘ সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ির দরজার কাছে আসতেই দেখে প্রান্ত দাঁড়ানো।বলিষ্ঠ সুঠাম দেহের ছেলেটা একে বারে শুকিয়ে গেছে?এলোমেলো চুল চোখের নিচে কালি।
মেঘের ইচ্ছে করছিলো হাত দিয়ে প্রান্তর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতে।কিন্তু ভেতর থেকে কেউ একজন তাকে বাঁধা দিলো।মেঘ সেখানেই দাড়িয়ে কিছুক্ষন প্রান্তর মুখ খানা দেখলো।ইস্ এই পুরুষটা যদি তার হয়,তাতে সমাজের কি?
________
প্রতিবেশি হওয়ায় প্রান্তর মেঘের বাড়িতে যথেষ্ট যাওয়া আসা ছিলো।বাবা হারা ছেলেটাকে মেঘের বাবা যথেষ্ঠ সমিহ করতো।মেঘের মাও তাকে মন্দ চোখে দেখতো না।এমন নম্র ভদ্র স্বভাবের ছেলেকে ভালো না বেসে কি পাড়া যায়।প্রান্ত মেঘের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,
প্রায় আটচল্লিশ দিন পর সে মেঘকে দেখছে।চোখে মুখে বিষন্ন তার ছাপ।মেঘের সেই আগের চোখ ধাঁধানো রূপ যেন এখন ফিকে হয়ে গেছে।চাঁদে যেন গ্রহন লেগেছে।
চোখের নিচে কালি।শুকনা ঠোঁট,বসানো গাল….. গায়ের রংটাও কেমন কালচে হয়ে গিয়েছে….লাল চোখ,চোখের কোনো পানি চিকচিক করছে।জীবনে প্রথমবার প্রান্ত মেঘকে কাজল ছাড়া দেখলো।বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে,
“ও কি এতোই কষ্টে আছে যে কাজল পড়তে ভুলে গেছে?”
প্রান্তকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ একটু লজ্জা পায় সে বেশ ইতস্তত বোধ করছে।
মেঘ কোনো কথা না বলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে প্রান্ত মেঘের হাত ধরে ফেলে,তারপর হাতে একটা চিঠি গুজে দেয়।
মেঘ ভয়ে ভয়ে সেটা নিয়ে একছুটে বাসার ভেতরে চলে আসে।ঘরে ঢুকে চিরকুটটা ওপেন করতেই দেখে তাতে লিখা,
“মেঘ আমি অপেক্ষা করবো সারা রাত অপেক্ষা করবো।প্লিজ একটি বার আমার সাথে কথা বলিও।আর যে পারি না থাকতে।একটু করুণা করো।
নিচে ফোন নাম্বার দেওয়া”
তবে মেঘের হাত ধরার ঘটনাটা একজনের চোখের আড়াল হয় না।
—–
মেঘ চিরকুটটা আগুনে পুড়িয়ে দেয়।চিরকুট কাছে রাখার ভুল সে আর করবে না।
রাত বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট। মেঘ শুয়ে শুয়ে উসখুস উসখুস করছে।মনটা বার বার প্রান্ত প্রান্ত করছে।আচ্ছা ছেলেটা কি এখনো তাকে ভালোবাসে?ও কি জানে মেঘের বিয়ে হয়ে গেছে?শুধু বিয়ে কেন বিধবাও তো হয়েছে….
ওর সাথে কথা বলা কি ঠিক হবে?কলটা কি করবো?
এমন শত শত কথা ভাবতে ভাবতে প্রায় একটা বেজে যায়। মেঘ প্রান্তকে কল করে।
কলটা ঢুকতেই মেঘ ফোন কে’টে দেয়,
নাহ্ সাহসে কুলোচ্ছে না তার।ভয়ে বুক কাঁপছে।
মেঘ ফোনটা পাশে রাখতেই তার ফোনটা খুব জোড়ে বেজে উঠে।মেঘ ফোনটা সাইলেন্ট করে দেয়।
কি আশ্চর্য ছেলেটা কি ফোন নিয়ে বসে ছিলো নাকি?এতো অল্পতেই কি করে বুঝে গেলো?
মেঘের হাত পা কাঁপছে।কল সে রিসিভ করে না।এদিকে প্রান্ত কল করেই যাচ্ছে।এভাবে আরো কিছু সময় কে’টে যায়।মেঘ এক বুক নিঃশ্বাস নিয়ে প্রান্তর কল রিসিভ করে,
-হ্যালো?
-মেঘ?
তাদের মাঝে নীরবতা। কঠিন নিরবতা।কেউ কোনো শব্দ করছে না।নিবরে,গোপনে তাদের আলাপন চলছে।
এভাবে বেশ কিছু সময় পর মেঘ উওর দেয়,
-হু…আমি মেঘমালা বলছি।
প্রান্ত মেঘের গলাটা শুনে চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে বলতে শুরু করে….
-“ইস্ কি শান্তি। কি মধুর সেই কন্ঠ….মরুভূমির এক তৃষ্ণার্ত আনাড়ি পথিক পানির খোঁজে বেড়িয়েছে।সামান্য পানি হলেই চলবে কিন্তু হটাৎ করেই সে সমুদ্র পেয়ে গেছে।চারদিক পানিতে টইটুম্বুর”আমার এখন সেই আনাড়ি পথিকের মতো অবস্থা হয়েছে।কি তীব্র শান্তি।
মেঘ প্রান্তর কথা শুনে গম্ভীর হয়ে উওর দেয়,
-কিন্তু সমুদ্রের পানি যে নোনতা।খাবে কি করে?সেটা খাওয়ার অযোগ্য।
প্রান্ত চুপ হয়ে যায় কি উওর দেবে সে এই প্রশ্নের।
প্রান্তকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ নিজে থেকেই বলে উঠে,
-কি বলবেন বলুন।
-কেমন আছো তুমি?
-দেখুন এতো রাতে একজন পরপুরুষের সাথে কথা বলা ঠিক নয়।
-প্লিজ একটু কথা বলতে চাই…
-কি বলবেন?প্রেমের প্রস্তাব দেবেন?আপনার সাথে যদি আমার তেমন হারাম কোনো সম্পর্কে যাওয়ারই হতো আমি অনেক আগেই যেতে পারতাম প্রান্ত।ঐসব চিঠি ফুল সবই যে আপনার দেওয়া আমি কি জানতাম না?
-জানতেই যখন তখন বাঁধা দাও নি কেন?
মেঘ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিয়ে উওর দেয়,
-জানি না।শুধু জানি আমি কোনো হারাম সম্পর্কে যেতে চাই না।
-ঠিক আছে।বিয়ের সম্পর্ক তো হালাল?চলো বিয়ে করি?ওহে, মেঘ বালিকা তুমি কি আমার হবে?
মেঘ একটু থমকে যায়।তারপর থতমত করতে করতে বলে উঠে,
-চল্লিশ দিনের বিধবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন।এই সমাজ আপনাকে মেনে নিবে না প্রান্ত।সমাজ আমাদের কলঙ্ক দিয়ে দেবে?
-কলঙ্কের ভয় আমি পাই না মেঘ
-আমি পাই।প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকুন।
মেঘ কলটা কেটে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।কান্না করতে করতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।শব্দ করা যাবে না।নিঃশব্দে কাঁদতে হবে নয়তো পাশের ঘর থেকে মা জেগে যাবে।
________
আজ সকাল সকাল মেঘ খেয়ে দেয়ে তৈরি হয়ে বসে আছে।অনেকদিন পর সে ইউনিভার্সিটিতে যাবে সে।বাবাকে অনেক বলে রাজি করিয়েছে সে।
মেঘ একটা হালকা হলুদ রঙ্গের সালোয়ার কামিজ পড়েছে।মাথায় হিজাব বাঁধা।নাস্তার টেবিলে বোনকে এভাবে দেখে মুন্না একটু কৌতূহলী হয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে,
– কোথা যাবে এ?
-জানি না তোর বাবাকে বল।মেয়ে তো তার একার। মেয়ের সব দায়িত্ব ও তো সে একাই নিয়ে রেখেছে।আমাকে কেউ কিছু বলে নাকি!
স্ত্রীর এমন কথায় এমদাদ আহম্মেদ চেচিয়ে উঠে,
-মেয়ে তো তোমার ও।তবে কবে মেয়ের মা হয়েছো। কবে কোন দায়িত্ব পালন করেছো?
-দেখুন মেয়েকে সবসময় মাথাই তুলে রেখেছেন আপনি কি দায়িত্ব পালন করবো?
-বাদ দাও তোমার সাথে কথা বলাই বেকার
মুন্না একটু বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,
-কোথায় যাবে এ?
-নিজের বোনকে সন্মান দিয়ে কথা বলো বেয়াদব ছেলে। মেঘ আজকে থেকে পড়াশোনা শুরু করবে।
মুন্না একটু বিরক্ত হয়,
-কিসের পড়াশোনা এ আবার পড়াশোনা করে কি করবে?যদি
-মেঘই তো পড়াশোনা করবে।মেয়ে আমার পড়াশোনায় সেরা।ইন্টারে রাজশাহী বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিলো সে।তোমার মতো এক ক্লাসে বার বার ফেল করেনি।
মুন্না মুখ বাকিয়ে উওর দেয়,
-হ্যা। তারপর কোন পরপুরুষের সাথে রঙ্গলীলা শুরু করেছিলো। যদি সেখানে গিয়ে আবার প্রেম করে?চার হজ করে এসেছেন আপনি আব্বা।মেয়ে পিরীতি করে ধরা পড়লে আপনার সন্মান থাকবে?
মেঘ খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ভাইয়ের কথা তার আর সহ্য হচ্ছে না।
– বাবা আমি কখনো এমন কিছু করবো না যাতে তোমার মান সন্মান হানী হবে।
এমদাদ আহম্মেদ জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠেন
-সেসব তোমার না ভাবলেও চলবে।তোমার মতো গুন্ডা ছেলের বাপ হয়ে যদি আমার সন্মান না যায়।এমন হীরার টুকরা মেয়ের জন্য যাবে কেন।
-আম্মা দেখছেন?
-চুপ করো!
মেঘের বাবা উঠে দাড়ায়, মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন,
-আমি বিশ্বাস করি তোমার আম্মা।তবে সেদিন যদি তোমায় বিশ্বাস করতাম তাহলে হয়তো আজ তোমাকে সাদা শাড়ি কাপড় পড়ে ঘুরতে হতো না।
মেঘের বাবা মেঘ কে নিয়ে বেরিয়ে যায়।মুন্না খাবার প্লেট টা মেঝেতে ছুড়ে মারে।
-মেঘের প্রতি বাবার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা তার সহ্য হয় না।গা জ্বলে।হিংসাই শরীর জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়।
মেঘের বাবা মেঘকে নিয়ে নিচে নামতেই দেখে প্রান্ত একটা সিএনজি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রান্তকে দেখে মেঘের গলা শুঁকিয়ে যায়।মেঘ একবার বাবার দিকে তাকায় একবার প্রান্তর দিকে।
মেঘের ভয়কে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে প্রান্ত এদিকেই আসতে থাকে।
মেঘের হাত পা কাঁপছে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।ইস্ মাটিটা যদি ফাঁক হয়ে যাতো সে পাতালে ঢুকে যেতে পারতো।তাতে হয়তো প্রান্ত একটু কম পাগলামো করতো….
সেকি বাবাকে সব বলে দেবে?
বাবা তাকে এভাবে দেখে কি ভাববে?আচ্ছা সে কি করে জানলো বাবা তাকে ইউনিভার্সিটিতে পাঠাচ্ছে?
চলবে……
(নতুন একটা গল্প লিখার চেষ্টা করলাম।জানি না কেমন লিখেছি আশা করি ভালো লাগবে।দয়া করে আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন।এটাকে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের গল্প বলে কেউ লজ্জা দিবেন না

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD