আফরিন_আন্না : আজ আমার আপন বড় বোনের জন্য আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। আমার স্বপ্ন আশা সবকিছুই ভে’ঙ্গে তচ’নচ হয়ে গেলো।
কতো স্বপ্ন ছিলো আমার, ভালোভাবে পড়াশোনা করে বড় একজন ডাক্তার হবো কিন্তু আপুর একটা বো’কা’মির জন্য সবশেষ।
কি হলো বুঝতে পারছেন না তো কেন বারবার আমি আপুকে দো’ষা’রো’প করছি?
তাহলে এবার ক্লিয়ার করে বলি শুনুন……
আমি বিপাশা রহমান ক্লাস এইটে পড়ি ওহ পড়ি বললে ভুল হবে পড়লাম কারণ ভবিষ্যতে আর কখনো স্কুলে যেতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না এর জন্যও দা’য়ী আমার আপু। আচ্ছা এবার আসল কথায় আসি, যাকে এতকিছুর জন্য দা’য়ী করছি সে আমার আপন বড় বোন বন্যা রহমান। বাবা-মায়ের দুইটা রাজকন্যা আমি আর আপু, খুব ভালো সম্পর্ক আমার আর আপুর কিন্তু আপুর একটা ভুল আমার জীবনটা শেষ করে দিলো।
বর্তমানে আমি একটা ঘরে বসে আছি এটাকে “বাসর ঘর” বলে। কি ভাবছেন এতো ছোট মেয়ে “বাসর ঘরে” কেন?
তাহলে শুনুন। এটা আমার “বাসর ঘর” না এটা আমার আপুর “বাসর ঘর” আজ এখানে আমার জায়গায় আমার আপুর থাকার কথা ছিলো কিন্তু আপু তার ভালোবাসার মানুষের সাথে পা’লি’য়ে গিয়েছে।
অবশ্য আপুর পা’লি’য়ে যাওয়ার জন্য দা’য়ি আমার বাবা-মা কারণ আপু এই বিয়েতে রাজি ছিলো না, আপু একজনকে ভালোবাসে এটা বাবা-মাকে বলেছিল কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হয়নি যার জন্য আপু পা’লি’য়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
তো কি বলবো আপু তার ভালোবাসার মানুষের সাথে পালিয়ে বেঁচে গেলো এদিকে বাবা-মায়ের সম্মান রাখতে ১৫ বছরের একটা শিশুকে বিয়ে দিয়ে দিলো।
হ্যাঁ সেই শিশু টা আর কেউ নয় আমি নিজেই, আর বিয়ে দিলো তো দিলোই তাও আবার ২৫ বছরের একটা বুড়োর সাথে, কিভাবে থাকবো আমি এই লোকের সাথে আল্লাহ বাঁচাও আমাকে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই রাত ১২ঃ টা বেজে গেলো প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে কিন্তু ঘুমাতে পারছি না কারণ নানি শাশুড়ী এসে বলে গেছে তার নাতি না আসা পর্যন্ত ঘুমানো যাবে না কি একটা জ্বা’লা’য় পড়লাম।
এদিকে এতো রাত হয়ে গেছে এখনো তার আসার নামগন্ধ নেই।
আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো তার জন্য। কি’সব পড়িয়ে দিয়ে গেছে আমাকে এভাবে থাকতেই পারছি না, এতো ভারি শাড়ী, গলা ভর্তি গহনা, দু-হাত ভর্তি চুড়ি, আমার তো মনে হচ্ছে আমার ওজনের থেকে আমাকে যেগুলো পড়ানো হয়েছে সেগুলোর ওজন বেশি।
এ কোথায় এনে ফেলেছো আমাকে আল্লাহ, যার জন্য এতো সময় ধরে অপেক্ষা করছি এখন পর্যন্ত তার মুখ টাই দেখতে পারলাম না, কেমন দেখতে, খাটো নাকি লম্বা, কালো না-কি ফর্সা, মোটা না-কি চিকন, এসব কিচ্ছু জানি না। শুধু তার বয়স আর নামটা একবার শুনেছিলাম মিঃ আরিয়ান চৌধুরী, তারা যখন আপুকে দেখতে গিয়েছিলো তখন আমি নানা বাড়ি ছিলাম তাই তাদের দেখতে পারিনি। আর বিয়ের সময় তো আমি মাথা উপরে তুলিনি তাই দেখতেও পাইনি, আর এবাড়িতে আসার সময় গাড়িতে পাশাপাশি বসে ছিলাম তবুও তার মুখটা দেখার ভাগ্য হয়নি।
যাইহোক যে স্বামীকে মানি না আমি সেই স্বামীকে দেখারও কোনো ইচ্ছে নেই, আর অপেক্ষাও করতে পারবো না সে আসলে আসুক না আসলে নাই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এই বলে যেই শুতে যাবো তখনই কানে এলো দরজা লাগানোর শব্দ। আমি চমকে গিয়ে সোজা হয়ে বসলাম তারপর মাথা তুলে একটু দেখার চেষ্টা করলাম, দরজা লাগিয়ে সে ধিরে পায়ে এদিকে আসছে। তাকে দেখে তো আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, বুকটা ধুকধুক করছে, বাবা-মা এই কার সাথে বিয়ে দিলো আমার, এটা তো মানুষ নয় আস্ত একটা দা’ন’ব। এতো লম্বা মানুষ হয় আগে জানা ছিলো না তারউপর স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ, একদম একটা দা’ন’বের সাইজ। এ যদি আমাকে পাঁজা কোলে নিয়ে একটা আছাড় মা’রে তাহলে সাথে সাথেই আমার পাঁচ আত্মা পাঁচ দিকে দৌড় দিবে।
চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছি এসব। সে কখন যেনো আমার পাশে এসে বসেছে বুঝতে পারি নি, আমার বিড়বিড় করা দেখে সে গলা ঝাঁকি দিয়ে বললো।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না, খুব ভয় লাগছে আমার, মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না, আমার এমন অবস্থা দেখে সে নরম গলায় আবার বললেন।
“তোমার নাম কি শুধু সেটা জিজ্ঞেস করেছি এছাড়া বেশিকিছু তো বলিনি, আর এতো ভয় পাচ্ছো কেন আমাকে, এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি মানুষ বা’ঘ নই যে তোমাকে খে’য়ে ফেলবো সো যা-কিছু জিজ্ঞেস করছি নির্ভয়ে উত্তর দিতে পারো”
লোক টাকে যতটা কঠিন ভেবেছিলাম সে ততটা কঠিন না, এবার আমি একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছি তার উত্তর দেওয়ার জন্য কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছি না কোনো একটা ভয় আমাকে গ্রাস করছে, খুব ভয় লাগছে, তবুও আমি আমতা আমতা করে বললাম।
আমার এহেন কান্ডে সে ফিক করে হেসে দিলো, তারপর হাসি থামিয়ে বললো।
“এইটুকু বলতে এতো সময় লাগলো তাহলে অন্য কিছু বলতে গেলে তো আজ রাত পার করে দিবে”
আমি কিভাবে বোঝাবো তাকে যে আমার ভিতরে কি চলছে, আমি চুপচাপ আগের মতোই মাথা নিচু করে বসে আছি তাই দেখে সে আমার বলে উঠলো।
“সারারাত কি এভাবে বসে থাকবে নাকি? যাও ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করে আসো জলদি কথা আছে তোমার সাথে”
আমি ওয়াশরুমে যাবো কি “আমার সাথে কথা আছে শুনেই তো আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, কি-না কি বলবে কে জানে, তবে কি নানি শাশুড়ী তখন যা-কিছু বলে গেলো সেসবই সত্যি হবে, নিজের অজান্তেই চিৎকার দিয়ে বলে ফেললাম “না এটা হতে পারে না” তখন সে চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“কি হতে পারে না বিপাশা? কি হয়েছে তোমার শরীর খারাপ লাগছে তোমার”?
তার প্রশ্নে আমার হুঁশ ফিরে তখন বুঝতে পারি আমি ওটা জোরে বলে ফেলেছি, তখনই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম তারপর শান্তভাবে বললাম।
“আমার কিছু হয়নি, আমি যাচ্ছি ড্রেস চেইঞ্জ করতে”
কথাটা বলতে দেরি ওখান থেকে আমার আসতে দেরি হলো না, তারপর ড্রেস চেইঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চমকে গেলাম………