আজ একটু সকাল সকালই বাজার গেলেন পরিতোষ বাবু, ওনার মেয়ে জামাই আর ছেলে আসছে। মেয়ের, ইলিশ, জামাই আর ছেলের মাটন আর দাদুভাই এর চিকেন। তাছাড়া, বকফুল, লাউ, আরও কি সব যেন লিষ্ট করে দিয়েছেন গিন্নি। সব কিনে নিয়ে যখন বাড়ি ঢুকলেন তখন ঘড়ির কাঁটা নটা ছুঁই ছুঁই।
-কই গো একটু চা দেবে নাকি?
-আমার মরার সময় নেই, মায়া দাদুকে চা টা দিয়ে আয় তো।
চা নিয়ে মায়া আসতেই পরিতোষ বাবু বললেনঃ বুঝলি মায়া বুড়ো ঘোড়া তো তাই কেউ আর পোঁছেনা’।
‘তোর দিদিমাকে ডাকলেই রেগে যায়’।
-না গো দাদু, আসলে মাসী, মামা আসবে তো তাই দিদা খুব ব্যস্ত।
এরই মধ্যে বাড়ির সামনে একটা ‘ওলা’ দাঁড়ালো। পরিতোষ বাবুর মেয়ে জামাই থাকেন দিল্লিতে দুজনেই এইমস এর ডক্টর। ছেলেও দিল্লিতেই চাকরী করে। ফলে দিদি আর ভাই এর যোগাযোগটা আছে ভালোমত।
দুপুরে খাবার টেবিলে বসে পরিতোষ বাবুর মেয়ে বলল ‘ মা তোমার কি মনে হয় আমি এখনও ষোল বছরের মেয়ে? তুমি এক অয়েলি রান্না করেছ কেন? আমরা কেউই ইলিশ ভাপা খাব না। আবার মাটন! মারবে না কি?
-একটু খা, রাঁধলাম। তোর জন্য।
-ওহ্ মা। আমি আর তোমার জামাই এসব খাই না।
তোমার নাতি খেতে পারে।
ছেলেরও দেখলেন এক মত। কেউই ‘অয়েলি ‘ খেতে রাজী না।
বাধ্য হয়ে তুলে রাখলেন ফ্রিজে। চোখটা অকারণেই ভিজে গেল।
খাওয়া দাওয়ার পর ছেলে বললঃ ‘মা বাবা তোমাদের সাথে আমাদের কিছু কথা আছে। ইনফ্যাক্ট এ জন্যই আমাদের আসা’। ‘দিদি আর আমি ঠিক করেছি এই পুরানো বাড়িটা কোন প্রোমোটার কে দিয়ে দেবো । আমরা তিনটে ফ্ল্যাট পাবো, আর ক্যাশ টাকা। তোমাদেরও তো বয়স হচ্ছে। কার কি হবে, কে জানে। ‘
কতকটা এরকমই আন্দাজ করে ছিলেন পরিতোষ বাবু। না হলে হঠাৎ বলা কওয়া নেই মেয়ে, জামাই, ছেলে এক সাথে, ওঁনারা ভাবতে ও পারছিলেন না।
-বাবা তুমি কিছু বলো?
-তোমাদের ফেরার টিকিট কবে যেন?
-পরশু, কেন?
-শোন তোমরা তো আমাদের দেখতে আসোনি ! এসেছো নিজেদের আখের বুঝতে। এই কথাটা দিল্লি থেকে বসে ফোনেও বলতে পারতে, তোমরা বরং কোনো হোটেলএ চলে যাও। আমি আর তোমার মা বেঁচে থাকতে এ বাড়ির একটা ইঁট ও ভাঙতে দেবো না।
-কিন্তু বাবা, আমরা তোমাদের ভালোর জন্যই বলছিলাম।
-তোমাদের ভাবার দরকার নেই। আমরা নিজেদের ভালো বুঝি।
আমি তোমাদের জন্য ক্যাব ডেকে দিচ্ছি, বেরিয়ে পর।
শোয়ার ঘরে বিছানায় ফুলে ফুলে কাঁদছিলেন পরিতোষ বাবুর স্ত্রী। পরিতোষ বাবু ঘরে ঢুকে পিঠে হাত রাখলেন। তারপর পকেট থেকে একটা লেবু লজেন্স বার করে ওনার মুখে ঢুকিয়ে দিলেন আর জড়িয়ে ধরলেন। স্ত্রী কে।
-হ্যাপি চোকোলেট ডে, হ্যাপি হাগ ডে, অ্যান্ড হ্যাপি ভ্যালেনটাইন ডে। আমি ওদের ফিরিয়ে দিলাম মিনু। আমি আর তুমি এই হোক আমাদের জগৎ।আমরাই আমাদের ভরসা কাউকে প্রয়োজন নেই আমাদের।
পরিতোষ বাবুর কাঁধে মাথা রাখলেন মিনু দেবী। আজ আরও বেশী বেশী ভরসা করতে ইচ্ছে করছে লোকটাকে! চোখ দুটো বুজে আসছে ক্লান্তিতে। সারাদিন কম তো ধকল গেল না।
পরিতোষ বাবুর কাঁধে মাথা রেখে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
পরিতোষ বাবু উঠে গিয়ে জানলা টা খুলে দিলেন। দুরে কোথাও গান বাজছেঃ
‘তু ধার হ্যায় নদীয়া কি,
ম্যায় তেরা কিনারা হুঁ।
তু মেরা সাহারা হ্যায়
ম্যায় তেরা সাহারা হুঁ ——– !!!