এম,নুরুননবী চৌধুরী সেলিম: না আছে জমি, না আছে মাটি । আছে শুধু একখানা নৌকা। এই নৌকাতে জন্ম এই নৌকাতেই মৃত্যু। স্বামী স্ত্রী সারাদিন নৌকায় মাছ ধরে। যে মাছ পায় সেই মাছগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনী জিনিস গুলো কিনে। যে দিন তারা বেশি মাছ পায় সে দিনই তাদের সংসারে চাঁদের হাট বসে। সে দিন স্বামী-স্ত্রী একটু বেশি রাত পর্যন্ত গল্প করে। সবাই ঘুমিয়ে যায় শুধু শোনা যায় জলের ছলাত ছলাত শব্দ। নতুন দম্পতি এই নৌকাতেই সংসার পাতে। নৌকাতে সন্তান জন্ম নেয়। যখন স্বামী-স্ত্রী নদীতে মাছ ধরে তখন ছোট ছেলে- মেয়ের পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে যাতে নদীর জলে পড়ে না যায়। তাদের সন্তানেরা নদীর জলে সাঁতার কেটে ও নদীতেই ছুটাছুটি করেই বড় হয়ে উঠে। নদী তাদের বাড়ির উঠানের মত হয়। কি পদ্মা কি মেঘনা কাউকে তারা ভয় নাশিক্ষা ছাড়াই শতাব্দী পর শতাব্দী তারা তাদের জীবন ধারা অব্যাহত রেখেছে। চাকুরি নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নাই।এদের টিভি, এসি এবং গাড়ি-বাড়ি প্রভৃতির চাহিদা নাই। তাই অতিরিক্ত মানসিক চাপ নাই। তাদের জায়গা -জমি, গরু-ছাগল নাই তাই মানুষের সাথে তাদের ঝগড়া-বিবাদ ও কম। সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। মাছ ধরার জন্য আলদা নৌকা আছে। নদীই তাদের জীবন জীবিকার মূল উৎস। নদীর সাথে যেমন সংগ্রাম করতে হয় তেমনি নদীই তাদের পরম বন্ধু। তারা জলে বসবাস করে তাদের জীবন ও জলের মত সজল-সরল।নদীর জলে ভেসে ভেসে বছরের পর বছর ভেসে চলছে। তাদের সংসারে যে দুঃখ আছে, কষ্ট আছে তা কখন ও নৌকার বাইরে যায় না। যখন পুর্ণিমা চাদ উঠে তখন চাঁদের আলোতে তাদের দুঃখ-কষ্ট ধুয়ে যায়। দেশের আইন –কানুন না অতটা জানলেও নিজস্বে রীতিনীতি দিয়ে তাদের জীবনকে সুন্দর করেছে। না আছে বাড়তি চাহিদা ,না আছে বাড়তি সাধ। তাদের জীবন জলে ভাসা পদ্ম ফুলের মত।