কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে চলছিল সংঘর্ষ। ঠিক ওই সময় টিডিসি এলাকায় আন্দোলন দেখতে গিয়ে বের হয়েছিলেন ১৫ বছরের কিশোর রাসেল। হঠাৎ গুলি এসে বিঁধে তার বুকে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রাসেল। পরে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। টানা ৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২২ জুলাই মৃত্যু হয় রাসেলের।
শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নওগাঁর মান্দায় কশব ইউনিয়নের ভোলাগাড়ি গ্রামে গিয়ে কথা হয় নিহত রাসেলের পরিবারের সঙ্গে। ছেলের এমন মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মা-বাবা। মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস।
এদিকে কিশোর রাসেলকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার মা মোছা. অঞ্জনা। ছেলের শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা মো. পিন্টু রহমানও।
জানা গেছে, নিহত রাসেলের পরিবারে মা-বাবা ও তিন বোন নিয়ে অভাবের সংসার। বাবা মো. পিন্টু রহমান খেটে খাওয়া দিনমজুর আর মা মোছা. অঞ্জনা পরের বাড়িতে করেন গৃহকর্মীর কাজ। ছোট মেয়ের নাম মোছা. বৈশাখী সে প্রতিবন্ধী এবং বড় দুই বোন মোছা. শারমীন ও মোছা. শাকিলা তারা বিবাহিত। অভাবের তাড়নায় নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মোয়াজ্জেম নামের এক ব্যক্তির রেডিমেড গার্মেন্টস এ কাজ করতেন রাসেল।
নিহত রাসেলের বাবা মো. পিন্টু রহমান জানান, গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি রোড এলাকায় কোটা আন্দোলন দেখতে গেলে রাসেল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে স্থানীয় দুজন ছেলে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহফুজ বলেন, রাসেল ছেলেটা সৎ ছেলে ছিল। আগে থেকেই তার পরিবার আর্থিক কষ্টে দিন কাটাত। অভাবের তাড়নায় রাসেল নারায়ণগঞ্জে এক রেডিমেড গার্মেন্টস দোকানে কাজ করতে যায়। এরপর কোটা আন্দোলন দেখতে গিয়ে বুকে গুলি লেগে তার মৃত্যু হয়।
কশব ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুল ইসলাম বুলু জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাসেলের মরদেহ গ্রামের বাড়ি আনা হয় এবং রাত ২টার দিকে দাফন হয়। সেখানে স্বজনদের আর্তনাদে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা।
এ বিষয়ে মান্দা থানার ওসি মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, রাসেল ছেলেটা নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। সে ওই এলাকায় বাজারের কাছে ভাড়া থাকত এবং সেখান আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলি লেগে তার মৃত্যু হয়।