‘কেউ আমার ভাইয়ের খোঁজ দেবেন? আজ ১১ দিন আমার ভাইটা নাই। আপনারা যদি কেউ আমার ভাইয়ের খোঁজ পান জানান।’ সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এমন পোস্ট লিখে নিজের ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন অধরা ইসলাম আলো নামের এক তরুণী। তিনি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়ে আর বাসায় ফেরেননি ভাই নুরু আলম মিয়াজি (২৬)। গত ১৯শে জুলাই থেকে তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
ফেসবুকের ওই পোস্টের সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় অধরার সঙ্গে। তিনি বলেন, আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন নুরু আলম। আমরা খুব হতাশ হয়ে গেছি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুর বাড়ি- কোথাও আমার ভাই নেই। বাসায় আসতেছি বলে যে ফোন রাখছে আর কথা বলতে পারিনি।
নুরু আলমের বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবা অসুস্থ। ভাইয়ের কথা সারাদিন জিজ্ঞেস করে। কিছু বলতে পারি না। কোথায় আছে কিছুই জানি না। কোথায় খোঁজ করেছেন জানতে চাইলে অধরা বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে যারা চলাফেরা করে ওরা আইডি কার্ড নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করেছে। আমার মেজ ভাইও গিয়েছে। কিন্তু কোথাও আমরা তার খবর পাইনি। তিনি আরও জানান, ১৯শে জুলাই নিখোঁজ হওয়ার পর নুরু আলমের বন্ধুরা বলেছেন তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তবে সেখানেও খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে নুরু আলমের বড় ভাই গুলিস্তান পর্যন্ত গিয়ে কারফিউ’র জন্য যেতে পারেননি। আগামীকাল বা শুক্রবার আবার যাওয়ার কথা রয়েছে।
অধরা বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ। কোনো প্যাঁচগোচ বুঝি না। তাই থানায় যাইনি। কখনো এসবের দরকারও হয়নি। থানায় গিয়ে জিডি করা লাগবে- এটাও বুঝতে পারিনি। আমি মেয়ে মানুষ। যেখানে যেখানে খবর নেয়া যায় সেখানেই যাচ্ছি। বাধ্য হয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছি যাতে কেউ দেখলে বলতে পারেন। আমার মেজ ভাইও অনেক ঝামেলার মধ্যে থাকে। তিনি একদিন ছুটি নিলে পুরো সংসার চলবে না। ঢাকার কাজীপাড়ায় নুরু আলমরা ভাড়া বাসায় থাকেন। মা শিরীনা বেগম প্রয়াত। বাবা আরশাদ মিয়াজী অসুস্থ। চলাফেরা করতে পারেন না। নুরু আলম ও তার ছোট ভাইয়ের পোশাক কারখানার চাকরির বেতনেই সংসারের খরচ চলে। অধরা জানান, তাদের বাড়ি চাঁদপুর সদরের বাঘড়া বাজারের নানুপুর গ্রামে। ভাইদের মধ্যে নুরু আলম সবার ছোট। দুই মাস আগেই বিয়ে করেছেন তিনি।