‘ওরা মারামারি করলে কিন্তু আমাগো লোকজনরে কইয়া দিছি রামদা লইয়া ওপেন মিছিল করতে। কামাল খানরে শুদ্দা কোপাইতে কইছি। ফাইজলামী করলে কিন্তু কামাল খান (পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) কোপ খাইবে। আপনে কইয়া দেন যে সিদ্ধান্ত হইছে- মেয়র সামনে পড়লে মেয়রকেও কোপাইবো। যে সামনে পড়বে হ্যারেই কোপাইবে কেমন!
কথাগুলো অ্যাকশনধর্মী সিনেমার ডায়লগ মনে হলেও আসলে এই কথোপকথন বরিশাল-৪ (হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথের। মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে সংসদ সদস্য পংকজ নাথের এমন কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করেছেন সাংসদ পংকজের দলীয় প্রতিপক্ষ। তবে বিষয়টি দলীয় প্রতিপক্ষের সাজানো নাটক বলে দাবি করেছেন পংকজ নাথ।
মঙ্গলবার ১ মিনিট ১ সেকেন্ডের একটি অডিও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে কল রেকর্ডটি ভাইরাল হয়ে যায়। কথোপকথনের একপ্রান্তে এমপি পংকজ নাথের কণ্ঠ এবং অপরপাশে মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামানের। এমপি পংকজের কণ্ঠে বলা হয়েছে- ‘হ্যালো হোয়াটসআপ আছে। ভালো আছেন না?’
পরিদর্শক বলেন, ‘স্যার, স্যার।’ এমপি জানতে চান, কোথায় আছেন? পরিদর্শক বলেন, ‘পৌরসভার সামনে আছি স্যার।’ এবার এমপি বলেন, ‘ওইখানে মারামারি, ওই হালায় তো খারাপ। যা হইছে হইছে। ওরা মারামারি করলে কিন্তু আমাগো লোকজনরে কইয়া দিছি রামদা লইয়া ওপেন মিছিল করতে। কামাল খানরে শুদ্দা কোপাইতে কইছি। ফাইজলামি করলে কিন্তু কামাল খান কোপ খাইবে, কইছ কেমন!’
এ সময় পরিদর্শক বলেন, ‘আচ্ছা স্যার।’ এমপি বলেন, ‘আপনে কইয়া দেন যে সিদ্ধান্ত হইছে- মেয়র সামনে পড়লে মেয়রকেও কোপাইবো। যে সামনে পড়বে হ্যারেই কোপাইবে কেমন !’ এ সময় পরিদর্শক বলেন, ‘আচ্ছা স্যার, দেখি স্যার।’
কথোপকথনের এই পর্যায়ে এমপির কণ্ঠে শোনা যায়, ‘ওসি কই? ওসি কই?’ পরিদর্শক বলেন, ‘ওসি স্যারে বরিশাল আছে স্যার।’ এ সময় এমপি বলেন, ‘ঠিক আছে যেডায় কোপ খাইছে হেডায় তো খারাপ। নেশাখোর। অ্যাডিকটেড তাই না ? এ নিয়ে যেন মাতবারি না করে, বাড়াবাড়ি না করে। আমি পোলাপানরে রেডি হইতে কইছি। তোরা রেডি হ। যা আছে কপালে। যুদ্ধ হইয়া যাউক একটা। কেমন, ঠিক আছে’- এই বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন এমপি।
এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান মুঠোফানে বলেন, ওই কথা এমপি বলেছেন। এটা এমপি’র কণ্ঠ বলে নিশ্চিত হয়েছি।
কেন কোপানোর হুমকি দেয়া হলো জানতে চাইলে কামাল খান বলেন, ‘হ্যায়তো আওয়ামী লীগের কারোরে চোখে দেখতে পারে না। আমি আওয়ামী লীগ করি এইডাই আমার দোষ।’ বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন বলে জানান পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মেহেন্দিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামানের ব্যক্তিগত এবং সরকারি মুঠোফোন নম্বরে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একজন সংসদ সদস্য পুলিশ কর্মকর্তার সাথে এ ধরনের কথা বলতে পারেন কিনা জানতে চাইলে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো অনেক হাই প্রোফাইল কথা। এই প্রশ্নের উত্তর কি আমি দিতে পারি? মুঠোফোনে এমপির বক্তব্য সারা দেশে ভাইরাল হয়েছে। কীভাবে হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।’
এমপি’র ফোনালাপ একজন পুলিশ পরিদর্শক রেকর্ড করতে পারে কিনা কিংবা সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পরিদর্শকের (তদন্ত) কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তিনি (তৌহিদ) বলেছেন, তার মুঠোফোনে ফোন কল রেকর্ড করার অ্যাপস-ই নেই। কীভাবে ফোন কল রেকর্ড হলো আর কীভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামান। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন ওসি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বুধবার সকালে মুঠোফোনে এমপি পংকজ নাথ বলেন, ‘কার ফোন দিয়ে কোথায় কথা হয়েছে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, ‘মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভা সন্ত্রাস আর মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেখানে ওপেন মাদক বেচাকেনা হয়। পৌর মেয়রসহ অন্যরা মাদক ও সন্ত্রাসে লিপ্ত। থানার ওসি ওই আখড়া থেকে ভাগ খায়। এর প্রতিবাদ করায় দলীয় প্রতিপক্ষ পরিকল্পিকতভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’ এটা তাদের ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেন এমপি পংকজ নাথ।
https://www.facebook.com/100013722335730/videos/435872321796134