কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে কুলছুম বেগম (১৯) নামের এক গৃহবধূকে যৌন নিপীড়ন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট তুগুরিয়া (নোয়াপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী বাদি হয়ে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট তুগুরিয়া (নোয়াপাড়া) গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে নূর মোহাম্মদ গত ২০ মে কুলছুম বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তার স্ত্রী কুমিল্লা সদর উপজেলার শুভপুর এলাকায় নিজ পরিবারের সাথে থাকেন। গত ২২ জুলাই বিকেলে স্বামীর নির্দেশে তিনি কুমিল্লা থেকে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তিনি উপকূল বাস থেকে নাথেরপেটুয়া সিএনজি স্ট্যান্ডে নামেন। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা যোগে রাত আটটার দিকে নোয়াপাড়া রাস্তার মাথায় নেমে স্বামীর পরিচিত শানু বেগম নামে জনৈক মহিলার বাড়িতে আশ্রয় নেন। পায়ে হেঁটে আসার সময় তাকে একা দেখতে পেয়ে ছোট তুগুরিয়া গ্রামের আলমের ছেলে কবির, কলিম উল্যাহর ছেলে বাহার ও আব্দুল মতিনের ছেলে শেখ ফরিদসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন যুবক তার পিছু নেয়। তারা তার স্বামী নূর মোহাম্মদের পরিচিত দাবি করে তাকে স্বামীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তাদের সাথে স্বামীর বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে তারা তাকে স্বামীর বাড়িতে না নিয়ে তুগুরিয়া মজুমদার বাড়ি সংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে নিয়ে তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের কুপ্রস্তাব দেয়। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করায় তারা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন ভাবে শারিরীক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তারা এনায়েত মেম্বারের ভেড়ি বাঁধে নিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় সে শোরচিৎকার শুরু করলে তার পরনে থাকা স্বর্ণালঙ্কার খুলে তারা তাকে হাত-পা বেঁধে মুমূর্ষ অবস্থায় স্বামীর বাড়ির পেছনে নিয়ে রেখে এসে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে বাড়ির লোকজন দেখতে পেয়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
শারিরীক অবস্থার উন্নতি হলে গত ৩১ জুলাই ভুক্তভোগী কুলছুম বেগম বাদি হয়ে ছোট তুগুরিয়া গ্রামের আলমের ছেলে কবির, কলিম উল্যাহর ছেলে বাহার ও আব্দুল মতিনের ছেলে শেখ ফরিদসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত পিবিআই’কে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। শনিবার সকালে পিবিআই কুমিল্লার এসআই মোবারক হোসেন খান মামলার তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয়দের বক্তব্য নেন।
ভুক্তভোগীর স্বামী নূর মোহাম্মদ জানান, ‘প্রথমে আমি নাঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের পর নাঙ্গলকোট থানার এসআই সাধন চন্দ্র নাথ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। অভিযুক্তরা আমাদেরকে মামলা না করতে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। পরে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই। আমার স্ত্রী বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ বিষয়ে পিবিআই কুমিল্লার এসআই মোবারক হোসেন খান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশক্রমে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’