1. admin@mannanpresstv.com : admin :
১ হাজার টাকার জন্য ৩ ব্যবসায়ীকে হত্যা: ১৭ বছর পর পলাতক আসামী গ্রেফতার - মান্নান প্রেস টিভি
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

১ হাজার টাকার জন্য ৩ ব্যবসায়ীকে হত্যা: ১৭ বছর পর পলাতক আসামী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২
  • ১২৭ Time View

এক হাজার চারশত টাকার জন্য ৩ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ নেওয়াজ শরীফ রাসেল, (সবুজ) (বাবুকে) (৩৭) সতেরো বছর পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ এর সদস্যরা।
গোয়েন্দার তথ্যসূত্রে ২৮ আগস্ট গভীর রাতে আলেখারচর বিশ্বরোড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মৃত মোঃ সেলিম রেজার ছেলে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লা র‌্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন পলাতক ও দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের গ্রেফতারের নিমিত্তে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। পূর্বের কিছু আলোচিত হত্যাকান্ডে দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে একাধিক টিম মাঠে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ০৬ জানুয়ারি লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং বাজারে ১ হাজার ৪০০ টাকা ডাকাতি করার জন্য তিন ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার নির্মম ঘটনাটি র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার নজরে আসে। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর খুনসহ ডাকাতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী, গোয়েন্দা রিপোর্ট ও তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়শই রাস্তায় সাধারণ মানুষ ডাকাতের কবলে পড়তো এবং এতে করে সাধারণ মানুষের জান ও মালের বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হতো। আজ থেকে প্রায় ১৭ (সতের) বছর পূর্বে ০৬ জানুয়ারি ২০০৭ ইং তারিখ রোজ শনিবার প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার একটি রাতে গ্রেফতারকৃত আসামী শরীফ রাসেল ওরফে- সবুজ ওরফে- বাবুসহ আরো কয়েকজন ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং এলাকার বদির পুকুর পাড় সংলগ্ন একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। এমন সময় লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং বাজারের দোকান বন্ধ করে কাচাঁমাল ব্যবসায়ী মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের মনিন্দ দেবনাথ’র ছেলে উত্তম দেবনাথ ও পরীক্ষিত দেবনাথ এবং পান ব্যবসায়ী লাকসাম উপজেলার জগৎপুর গ্রামের সামছুল হকের ছেলে বাচ্চু মিয়া বাড়ি ফিরছিলেন। তারা বদির পুকুর পাড় এলাকায় এসে পৌঁছালে আকস্মিকভাবে জঙ্গল থেকে আসামী রাসেল ও তার সহযোগীরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং যার যা কিছু আছে সব কিছু দিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ভিকটিমরা তাদের টাকা-পয়সা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামী রাসেলসহ তার সহযোগীরা ভিকটিমদেরকে অনবরত
কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে ভিকটিমরা তাদের সাথে থাকা টাকা-পয়সা বাধ্য হয়ে আসামীদের দিয়ে দেয়। হঠাৎ ভিকটিম উত্তম দেবনাথ আসামী রাসেল ও তার সহযোগীদের চিনতে পেরেছে এবং পরেরদিন স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে মর্মে চিৎকার করে উঠে। যেহেতু ভিকটিমরা আসামীদের চিনে ফেলেছে তাই আসামী রাসেল ও তার সহযোগীরা ভিকটিমদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিমদেরকে একটি মাঠে নিয়ে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে গলা কেটে নিমর্মভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় ভিকটিম বাচ্চু মিয়ার ভাই কবির হোসেন ০৭ জানুয়ারি ২০০৭ ইং তারিখে বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানায় খুন সহ ডাকাতি মর্মে একটি মামলা দায়ের করেন।

১৪ নভেম্বর ২০১৮ রোজ বুধবার কুমিল্লার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ, আদালতের বিচারক নুর নাহার বেগম শিউলী আলোচিত ও নিমর্ম হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ০৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করেন, যার মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী অন্যতম। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- লাকসাম শ্রীয়াং এলাকার সেলিমের ছেলে মোঃ রাসেল, আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুর রহমান, ইয়াকুব আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ, আব্দুল মান্নানের ছেলে ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে স্বপন। দন্ডপ্রাপ্ত ০৫ জন আসামীর মধ্যে আব্দুর রহমান, শহীদুল্লাহ, ফারুক হোসেন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। অপর আসামী স্বপন পলাতক রয়েছে।

গ্রেফতাকৃত আসামী মোঃ রাসেল ওরফে- সবুজ ওরফে- বাবু’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার পরেরদিন সকালে রাসেল ও তার পরিবার কুমিল্লা জেলা ত্যাগ করে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ডগরমুরা এলাকায় তার পিতার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীতে স্ব-পরিবারে সেখানে ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করে। নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য আসামী রাসেল ডগরমুরা এলাকায় পরিচিতি লাভ করে সবুজ নামে। এই এলাকায় তিন থেকে চার বছর অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত হকার ব্যবসা করে খুব নিরাপত্তার সাথে বসবাস করে আসছিল। ২০১০ সালের শেষের দিকে তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি পরিবারের ডগরমুরা এলাকায় যাতায়াত পরিলক্ষিত হলে তারা সাভার নবীনগর থানাধীন নিরিবিলি এলাকায় নতুন বাসা ভাড়া নেয়। এই এলাকায় এসে আসামী রাসেল পরিচিতি লাভ করে বাবু নামে। নিরিবিলি এলাকায় ২/৩ বছর ভ্যান গাড়িতে করে হকারী ব্যবসা করার পরে ২০১৩ সালে নীলফামারী জেলার একটি মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য হকারী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে সড়কে পলাশ ও নিরাপদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ করা শুরু করে। ২০১৬ সালে তার স্ত্রী তার আসল পরিচয় ও মামলার বিষয়টি জানতে পেরে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। তাই ভয়ে আসামী রাসেল সাভার এলাকা ত্যাগ করে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাস শুরু করে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তার পরিবার সাভার এলাকা ত্যাগ করে কুমিল্লা জেলার বরুড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। বরুড়া এলাকায় বসবাসকালীন তার মা গোপনে লাকসাম এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত করে এবং বুঝতে পারে ২০০৭ সালের হত্যাকান্ডের বিষয়টি এলাকায় তেমন কোন আলোচনা নেই তাই আসামী রাসেল ২০২০ সাল থেকে বরুড়ায় তার মায়ের সাথে ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করে। আসামী রাসেল মূলতঃ বরুড়ায় তার বাড়ির আশেপাশে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে কাজ শুরু করে। ০১ বছর অতিক্রম হয়ে গেলে পদ্মা পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে। ২০২২ সালে আসামী বোগদাদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে কুমিল্লার লাকসাম থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD