বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘আপনারা (বিএনপি) দেশকে নিয়ে বহু ছিনিমিনি খেলেছেন। ক্ষমতায় থাকতে অনেক অন্যায়-অত্যাচার করেছেন। ক্ষমতার বাইরে গিয়েও পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যা অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করেছেন। এ দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার আর সুযোগ দেওয়া হবে না।’
আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লার দেবিদ্বারের এবিএম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের অশুভ তৎপরতাকে দমন করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নামে সহিংসতা, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুত থাকতে হবে।’
‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে হত্যা, গুম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের রাজনীতি শুরু করেছিলেন’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের অপকর্ম ঢাকতে বিএনপি নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কখনো গুম, খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।’
বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন,‘মির্জা ফখরুল সাহেব কথায় কথায় ক্যামেরার সামনে চোখের পানি মোছেন। তাদের নেতাকর্মীদের নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। নেতাকর্মীদের নাকি গুম করা হয়েছে। তাদের কাছে তালিকা চাওয়া হলো, তারা দিতে পারেনি। তালিকা চাওয়ার পর অনেকেই ফিরে আসতে শুরু করে। আগে ৫০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে বললেও এখন নামতে নামতে সেই তালিকা ৭০ জনে চলে এসেছে। এদের কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে ছিল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করায় মামলা হলে পালিয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। আমরা আশা করি, ৭০ জনও ফিরে আসবে।’
‘জিয়াউর রহমান বিনাবিচারে সামরিক বাহিনীর ১২০০ কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন’, এমন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দকে গুম করে হত্যা করা হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল একটাই, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। জিয়াউর রহমান যাদের বিনাবিচারে হত্যা করেছে আজকে তাদের স্বজনরা বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। আর আজ সেই দলের নেতা মির্জা ফখরুল সাহেব চোখের পানি ফেলেন।’
হানিফ বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আপনার দলের সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। তাদের স্বজনদের কাছে তারা আর ফিরবে না। তখন কোথায় ছিল আপনার চোখের পানি? কোথায় ছিল আপনাদের মানবতা? তখন আপনাদের বিবেক কথা বলেনি? তখন মানবাধিকারের প্রশ্ন আসেনি, মানবতাও জাগেনি?’
বিএনপি’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি পাঁচবছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা দেশের জন্য কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে পারেনি। তারেক রহমান হাওয়া ভবন বানিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছে। কোনো কাজ শুরু করতে হলে আগে হাওয়া ভবনে কমিশন দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হতো।’
‘দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে কীভাবে দেশের মানুষের কল্যাণ হতে পারে’, বিএনপি নেতাদের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ চরম দারিদ্র্যের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার ছিল তা ১৩ বছরের মাথায় ২৯০০ ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। দেশের রফতানি ৮ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। একসময় বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করতে হতো। ২০০৯ সালে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। আবার সেই বিদ্যুৎ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাও ব্যবহার করা সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছেন। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুদিন লোডশেডিং হলেও আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।’
‘৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় বিপ্লব সাধন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। করোনাকালীন দুই বছরে সারাবিশ্ব মহামারিতে বিপর্যস্ত ছিল। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানির মতো দেশ করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খেয়েছে। লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগকে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে মোকাবিলা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, পৃথিবীতে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের একটি।’
হানিফ বলেন, ‘দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। শেখ হাসিনা সকল সেক্টরে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক সেই সময়ে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কথায় কথায় মানবতার কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাদের প্রভুর নির্দেশে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার চক্রান্ত করছে। কোনো অপশক্তি যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, এবিএম গোলাম মোস্তফা, রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপি, দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ম. রুহুল আমিন। দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনিরুজ্জামান মাস্টারের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার।