হঠাৎ!”প্রথম আলো”
পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় নিচের একটা সংবাদে,চোখ আটকে গেলো আমার।সংবাদটা দেখে অঝোরে ঘাম ঝরতে লাগলো শরীর বেয়ে।
সংবাদ নয় বলতে গেলে বড় সড় এক বিজ্ঞাপনের এড।প্রথম পৃষ্ঠার একদম নিচে বড় করে লেখা ছিল,”জরুরি ভিত্তিতে মেয়ের জন্য কেয়ারটেকার আবশ্যক”!
যোগ্যতা অনার্স পাশ।উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি।শারিরীক গঠন মোটাতাজা হতে হবে।গায়ের রং দবদবে ফর্সা।বয়স হতে হবে ২৫ থেকে ৩০ এর নিচে।মুখ হতে হবে গোলাকার!বুকে পশম থাকতে হবে!হাসলে গালে ঠোল পড়তে হবে।আর ছেলে অবশ্যই বিপদগ্রস্থ,হতদরিদ্র আর দুস্থ হতে হবে!!
একি!সব কিছু যেন আমাকে দেখে বানানো!আমার সাথেই বায়োডাটার সব কিছুই যে মিল রয়েছে!!
আরো লেখা,মাসের স্যালারি হিসেবে দেওয়া হবে ব্ল্যাংক চেক! মানে নিজের প্রয়োজন মত বসাতে পারবো নিজের এমাউন্টটা।ভাবতেই ভালো লাগছে।কত টাকা বসাবো সেটাই,মনের আকাশে উড়াল দিচ্ছে।।
কেন জানি মনে হলো, চাকরীটার জন্ম আমার জন্য ই হয়েছে।এটার আগমণ শুধু দুনিয়াতে আমাকে কেন্দ্র করে এসেছে।।
তাই খবরটা পড়ে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো।এতো এক্সাইটেড হলাম বলার বাইরে। আর শর্ত মোতাবেক আমার চেয়ে বিপদগ্রস্থ বর্তমানে আর কেউ,দুনিয়াতে বেঁচে নেই।।
তাই খুবি উত্তেজিত হয়ে পড়লাম!উত্তেজিত হওয়ার কারণ ছিলো একটাই, চাকরীর প্রয়োজনীয়তা।
এই অবধি ডজন খানেক চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিই আমি।কিন্তু চাকরী পাওয়া তো দুরের কথা কোনো পরীক্ষায় ফিরতি ফোন অবধি আসে নি।।
অথচ বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি তার মতো কোনো এক সরকারী চাকরি করি।তার মতোই নির্ভাবনাতে জীবন অতিবাহিত করি।
কিন্তু সরকারী জব পাওয়া আর কোনো হীরার খনি পাওয়ার সমতুল্য,আজ-কালকার যুগে।তাই চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়েই,দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে আমার জীবন।
অথচ আমার জীবনটা কত সুন্দর হতে পারতো!হতে পারতো আমার বন্ধুদের মত পরিপাটি ।
কিন্তু তা না হয়ে,চাকরীর চিন্তাই ঢাকার মতিঝিলেই, পুরাতন এক রুমে দুশ্চিন্তাই জীবন কাটছে প্রতিটা প্রহর!শেষ কবে হেসেছি ভুলেই গেছি!
প্রতিদিন চাকরীর খোঁজে বের হচ্ছি আর হতাশ হয়ে রুমে ফিরে আসছি এটাই হয়ে গেছে আমার প্রতিদিনকার রুটিন।পায়ের জুতো ফুটো দিয়ে এখন মাটি দেখি!দেখি,পাথরের পথ।।
বাবা মারা যাওয়ার পর সৎমায়ের পীড়াপীড়িতে জমিজমা বন্ধক দিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম আমি।কিন্তু ভাবিনি দালালের খপ্পরে পড়বো!এয়ারপোর্ট থেকেই ফিরে আসতে হয় আমাকে।পাসপোর্টটাও যে নকল ছিল,সে সাথে নকল ছিল প্লেনের টিকিটটাও।সৎমা যে আমাকে এতোটা বিপদে ফেলবেন তা ভাবিনি;তাকে তো আমি মায়ের আসনেই বসিয়েছিলাম।তাই তার কথা মতো আরব আমিরাতে যেতে, তার সন্ধান দেওয়া লোকের কাছ থেকেই সব কিছু করিয়ে নিয়েছিলাম।
তাই বিপদেও পড়লাম সবার আগেই।সৎমায়ের মিথ্যা কান্না মনে পড়ছিল খুব।।
তার আগে,বাবার রেখে যাওয়া বউ মানে আমার সৎমায়ের অত্যাচারে দুর্বিসহ ছিলো আমাদের জীবন।।।
আমাদের জীবন বলছি,আমার এক ছোট আপন বোন যে আছে। নাম নীলা।
নীলার বয়স যখন প্রায় চারবছরের কাছাকাছি,তখন আমাদের মা “মারা” যান।বাবা “নীলা” এর জন্যই আবার বিবাহ করতে রাজি হন।কিন্তু সে বিয়ে যে আমাদের জীবন’কে তছনছ করে দিবে;তা কে বা জানত!
তাই আমি আর আমার বোন নীলা ছিলাম সৎমায়ের দু’চোখের বিষ।
ছোটবোনটার বিবাহের কথা চিন্তা করেই হুট করেই বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
আর সেই সিদ্ধান্তটাই যে বড় ভুল ছিল,তা বুঝতে অনেক দেরী হয়েছিল আমার!
আর সে সাথেই,আমার সব স্বপ্ন,সব কিছুই প্রতারণার ফাঁদে নিমজ্জিত হয়ে যায়!!
পরিবারের কেউ জানেনা আমার প্রতারিত হওয়ার কথা,জানেনা ঢাকার এক গলির এক অন্ধকারময় রুমে থাকার কথা।তারা জানে আমি বিদেশে আছি এখনো।তাদেরকে মিথ্যা বলে ভালো আছি এখানে।
শুনেছি আমার সৎমা আমার বিদেশী টাকার লোভে আমার ছোট বোনকে নিজের মেয়ের চেয়েও বেশী আদর যত্ন করেন এখন।
টাকার লোভ যে বড় লোভ!সে লোভ সৎ মায়েরা ছাড়াহ.. আর কে বা ভালো জানে?!
বোনের থেকে ফোনে কথাটা শুনে,বোনকে ভালো রাখতেই মিথ্যা বলতে বাধ্য হই আমি!!
দেশের বাড়ি গিয়েও সেখানে আমার কি বা হতো!সবার মুখে কথা শুনে কান্নায় তো করতে হতো!আর আমার ছোটবোন’টা আমার কষ্ট দেখে,শুধু আমার জন্য মিথ্যা শান্তনা দিয়ে যেতো!তার চেয়ে এখানেই ভালো আছি।
বিদেশ তো তাকে বলে,যেখানে আপনজন কেউ থাকেনা;আমার এখানেও তো সত্যিই কোনো আপনজন নেই!
তাই এই চিলেকোঠায় রয়েছি,তিনমাস ধরে।শুনেছি বোনটাকে ছেলে পক্ষ পছন্দ করেছে।ছেলে বেক্সিমকো অফিসে চাকরী করে।ভালো মাইনে পায়।দেখতে শুনতেও অনেক ভালো।।
আমার বোনের বান্ধবীর ভাই।বোন’কে তার বোনের কলেজে দেখেই পছন্দ করেছে, সে।আমিও “না” করিনি;বিয়েতে সম্মতি দিয়ে দিয়েছি।অমন ছেলে কি হাত ছাড়া করা যাই?কিন্তু বিয়ের খরচ কোত্থেকে আসবে,সেটা আমার মাথায় আসেনি।যদি সৎমা লক্ষ টাকা পাঁঠানোর কথা না বলতেন তাহলে মনেই আসত না;বিয়েতে যে খরচ লাগে!
এখন আমার টাকা জোগাড় হয়ে গেলেই,বিয়ে হয়ে যাবে।সবাই আছে আমার বিদেশী টাকার অপেক্ষায়।
আমিও তাই সময় নিয়েছি কয়েকমাস!!
আজ যদি পত্রিকায় খবরটা না দেখতাম তাহলে হয়তো কিডনি বিক্রি করে দিয়ে আসতাম।নতুবা ডাকাতি করতাম কোনো এক বিকাশের এজেন্সিকে।হয়তো সফল হতাম,হয়তো বিফল।হয়তো হাত কাঁপতো, নতুবা কারো জীবন!!
কিন্তু আল্লাহ একজন আছেন;তিনি আমার জন্যই এই চাকরীর খবর,আমার চোখের সামনে তুলে ধরেছেন!আমার হাতে কোনো অন্যায় হতে দেননি।
তাই মনে হচ্ছে চাকরীটা আমার জন্যই।।।
তিনি আমার জন্যই এই চাকরীটা খবরের কাগজে লিখে পাঁঠিয়েছেন।।
——————————————————————————————————————–
৩০ তারিখ রাত্রিবেলা।শিয়াল ডাকছিল খুব।শিয়াল ডাকার শব্দে মনে পড়ে যাই সে জায়গায় যাওয়ার কথা।আজ সে জায়গাতে ইন্টার্ভিউ দেয়ার যে পালা!
এই প্রথম কোনো ইন্টার্ভিউ রাত্রিবেলায় দিতে যাচ্ছি!
একটা মেয়ের কেয়ারটেকারের জন্য কি এমন প্রশ্ন আসবে,তা ভাবতে থাকলাম!হয়ত বেশী হলে তারা জিজ্ঞাসা করতে পারে,আপনি রাত জাগতে পারেন কিনা,মোবাইলে গেইম খেলেন কিনা বা নেশা করি কি না,এসব!
ভালোমতো গোসল গা ধুয়ে সুগন্ধী মেখে সবচেয়ে পুরাতন জামাটা পরে ভালোমতো গরীব সেজে চলে গেলাম সেই বিজ্ঞাপনের ঠিকানা মতো!
ঘন্টাখানিক পর, পৌঁছলাম সেই ঠিকানা মাফিক।।হাতে শুধু সার্টিফিকেটের ফাইল।শুনশান এলাকা।চারদিক শুধু নিস্তব্ধতা। নির্জনতা ছেয়ে গেছে চারপাশ।চারদিকে পূর্ণিমার আলো।পূর্ণিমার আলোতেই সব দেখা যাচ্ছে দিনের মতো।তাই সে আলোতে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দশটা হতে চলল।যাক বাবা!নির্দিষ্ট সময় আসতে পেরেছি তাহলে।।
সামনের গেট টা খুলতেই, ক্যাচ করে পুরাতন একটা শব্দ হলো।মনে হলো যেনো আমি এক ভুতুড়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।শব্দটা রীতিমত আমাকে চমকিয়ে দিলো। তবুও মনে মনোবল নিয়ে ভিতরের দিকে হাঁটতে থাকলাম।সামনে এক নির্জন বাংলো।এখানে কেউ আসে বলে মনে হয়না।চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ।উঠোনের মাঝে এক পুরোনো কুয়ো।সেটার দিকে তাকাতেই ভয় পাইয়ে দিচ্ছে খুব।বাড়িটার এক পাশে এক লোহার দোলনা।হালকা বাতাসে শব্দ করে করে দোল খাচ্ছে।।বাড়ির দালান ঘেঁষে এক লোহার সিঁড়ি উঠেছে ছাদ অবধি!!
যতই বাড়ির সামনে যাচ্ছি,ততই শরীর ছমছম করছে।মনে হচ্ছে শীতল হয়ে যাচ্ছে রক্তের প্রতিটা কণিকা।।
নিচের দিকে তাকিয়েই দশ কদম দিতেই
সামনের কিছুর সাথে ধাক্কা খেলাম।দেখি, শক্ত বড় একটা খুঁটি।মনের অজান্তেই মুচকি হেসে দিলাম।অনেকদিন পরে হেসে উঠলাম!হা হা হা!
বাড়ির সম্মুখ দরজার সামনে চলে এলাম।
দরজাটা অনেক পুরানো। তবে দামি কারুকার্য রয়েছে।বাড়িটা হয়তো কোনো আমলের রাজ বাড়ি ছিল।এখন হয়তো তা শুধু ইতিহাসের কোনো এক পৃষ্ঠা হয়ে আছে।।
কিভাবে যে কাউকে ডাকবো বুঝতে পারছিনা!ইন্টার্ভিউ বলে কথা!
যদি আমার ডাক মালিকের মন মতো না হয়!তাহলে চাকরী গেল বলে!
দরজার আশে-পাশে কোনো কলিংবেল নেই।।
ভালো করে দেখলাম,দরজার একপাশে মন্দিরের ঘন্টার মতো একটা ঘন্টা লাগানো।সাথে একটা রশি।রশি’টা টান দিতেই টুংটাং শব্দ হলো।পুরো শব্দে বাড়ির নির্জনতা কাটিয়ে দিলো।এই শব্দ যেনো বাড়ির সাথে বেমানান।কয়েক সেকেন্ড পর,বাড়ির ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ লাইট হাতে বের হয়ে আসলেন।বয়স ৬৫-৭০ এর মতো হবেন।চোখে চশমা।পরনে কোট-টাই।এখনো সুঠাম দেহের অধিকারী।দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক বড় লোক।টাকা পয়সা অনেক কামিয়েছেন।বাংলার বিল গেটসের মতো চেহারা।তবে,বিল গেটসের চেয়ে অনেকখানি মোটা হবেন।।
আমার হাতের সবুজ ফাইলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুঁচকে রইলেন।।
তারপর,আমাকে ইশারা করলেন ভিতরে আসার জন্য।।।।
আমি মার্জিত ভাবে উনার সামনে গিয়ে বসলাম।ডাইনিং রুমে বসে রইলাম আমরা দু’জন। ভিতরে ঝাড়বাতি জ্বলছে।আর কিছু মোমবাতি!আমার মনে হলো এক রোমান্টিক ইন্টার্ভিউতে আছি।তবে,জনাব এর জায়গায় কোনো সুন্দর নারী হলে ভীষণ ভালো হতো!!
তিনি আমাকে বায়োডাটা দিতে বললে,আমি ফাইল থেকে আমার ইংরেজীতে করা বায়োডাটা উনার হাতে
তুলে দিলাম।উনি ভালো মত দেখলেন।আর আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন!!!
শেষের প্রশ্নটি ছিলো এমন,,,”তুমি বিপদগ্রস্ত যে কিভাবে মানবো?”
আমি বুদ্ধি করে,আমার পকেটে থাকা জাল পাসপোর্ট আর জাল ভিসা উনাকে দেখালাম।আর উনার সামনে আমার মিথ্যা বিদেশ থাকার প্রমাণ স্বরুপ ছোটবোন’কে ফোন দিলাম।
লাউড স্পীকারে পুর্ণাঙ্গ কথা তাকে শুনালাম।।তিনি আশ্বস্ত হলেন,আমি বিপদগ্রস্থ বলে।।
তিনি আমাকে একটা রুলসের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিলেন।সেখানে সব কিছু লেখা আছে।সকালে মেয়েটাকে জাগানো।দাঁত ব্রাশ করানো,সকালে নাস্তা করানো,দুপুরে গোসল করিয়ে কাপড় পরানো,বিকালে দোলনায় চড়ানো,রাতে ডিনার শেষে ঘুম পাড়ানো।।।
আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,” আমি একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে কিভাবে এসব করিয়ে দিই!আমি তো একজন পর-পুরুষ!
খান সাহেব গম্ভীরে হয়ে বললেন,”যদি সমস্যা থাকে,তাহলে বলো অন্য আরেকজন কে দেখি!”
“না না স্যার!আমার চাকরীটা খুব প্রয়োজন।আমি পারব স্যার!”
লোকটা অদ্ভুত হাসি হেসে বললেন,”হা হা হা!গুড!পর-পুরুষ কথাটা বলে একটা ভালো আইডিয়া দিলে আমায় তুমি!”
আমি কিছু না বুঝার মত করে রইলে,উনি একটু থেমে আবার বললেন,
“তুমি কি চাও বড় লোক হতে?”
আমি মাথা নাড়ালাম হ্যাঁ সুচক অব্যয় দিয়ে।।
“তুমি কি চাও তোমার বোনের বিবাহ দিতে?তুমি কি চাও তোমার বন্ধক সম্পত্তি উদ্ধার করতে,আর তোমার সৎমায়ের মুখ বন্ধ করতে?”
“তাহলে,আমার মেয়েকে বিয়ে করো!”
“কি বলেন স্যার!এটা কিভাবে সম্ভব!চেনা নেই,জানা নেই,ডাইরেক্ট বিবাহ!আর আপনারা কোথায়,আমি কোথায়!আপনার মেয়ের জুতো কেনার সামর্থ্যও তো আমার নেই!”
“আমরা তো মেনে নিয়েছি,তাহলে আর কি সমস্যা!আর চেনার জন্য তো পুরোজীবন ই রয়েছে!তখন না হয় চিনে নিবো। আমার কাছে যে বেশী সময় নেই,বুঝলে।তোমাকে আমার মেয়েও পছন্দ করেছে খুব!”
“কি বলছেন এসব স্যার!আমাকে আপনার মেয়ে দেখলো কখন?”
“পূর্ণিমার আলোর মাঝে দেখেছে,যখন একটু আগে কুয়োটার পাশে ছিলে!তোমাকে দেখেই আমার মেয়ে পছন্দ করছে!সবাইকে যেখানে আমার মেয়ে রিজেক্ট করেছে,সেখানে শুধুই তোমাকেই আমার মেয়ে পছন্দ করেছে।তা না হলে কি তোমাকে ঘরের মধ্যে আসতে দিতাম?”
“তুমি কি ভাবো,তুমিই একজনি এই চাকরীর জন্য এখানে এসেছো!আরো চারজন এসেছিল।তাদেরকে আমার মেয়ে পছন্দ করেনি, তাই তাড়িয়ে দিয়েছি আমি।একমাত্র তোমাকেই আমার মেয়ে পছন্দ করেছে।কি রাজি?”
আমি হতাশা নিয়ে বললাম,
“স্যার!কিন্তু…আপনার মেয়েকে তো দেখেনি আমি।না দেখে কিভাবে বলি,আমি বিয়েতে রাজি কিনা!না মানে স্যার… আমাকে ভুল বুঝবেন না।আপনার মেয়ে কালো হোক বা অন্ধ বা বোবা তাতে আমার কিছু যাই আসে না,কিন্তু তাকে না দেখে তার ছবি মনে বসাই কিভাবে?আর শত হোক এটি আমার জীবনের প্রশ্ন!”
“ওকে!তাহলে,চলো!তবে,ওয়াদা দাও।আমার মেয়ে যেমন হোক তুমি মেনে নেবে?ওয়াদা দাও,তুমি আমার সকল রুটিন প্রতিদিন পালন করবে?আমিও ওয়াদা দিচ্ছি,তোমার নামে আমার সকল সম্পত্তি করে দেবো। কি রাজি?”
“ওকে আমি ওয়াদা দিলাম!আপনার মেয়ে যেমন হোক আমি মেনে নেবো!আমার মরা মাইয়ের কছম,স্যার!”
এই কথা বলার পর জৈনক বৃদ্ধ উৎফুল্ল হয়ে আমার হাত ধরে, নিয়ে গেলেন এক ভিতরের আলিসান কামরায়।উনি আমাকে দাঁড় করিয়ে একটা উল্টো মুখী চেয়ারের সামনে গিয়ে বললেন,মা তোমাকেও পছন্দ করেছে সে!তোমার সাথেই বিয়ে হবে তার!এবার খুশিতো?”
কোনো সাড়া শব্দ আসেনা!কিন্তু উনি কিছু একটা শুনার ভান ধরে,আমার সামনে এসে আমার হাতটা ধরে ইজি চেয়ারের সামনে নিয়ে গেলে আমার মাথা চক্কর দিতে লাগল আমার হবু বউ কে দেখে।মনে হলো আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো মেঝেতে। কারণ,আমার বউ কোনো মানুষ ছিল না।ছিলো এক পুতুল।তার মানে কি আমাকে পুতুল কে বিবাহ করতে হবে?!!