কবি –সুবীর কুমার গুপ্ত এর কবিতা // একটি মেয়ের কথা
সুখের সংসার ছিল আমাদের
বাবা মা আর দুই বোন।
বাবার আদরে আর মায়ের যতনে,
সুখে শান্তিতে কাটছিল জীবন।
এত সুখ লেখা ছিলনা ভাগ্যে
তাই তো দুর্ঘটনা কেড়ে নিল বাবাকে ।
আমি তখন পনেরো আর দিদি উনিশ ,
মাকে নিয়ে আমরা পড়ি যে বিপাকে।
মা তখন শোকে পাথর,
দিদি কাজ নিল এক অফিসে
সেখানেই তার হল এক বন্ধু,
মাঝে মাঝেই সে বাড়িতে আসে।
তাকে আমার লাগতো না ভালো,
কিন্তু বলতে আমি পারিনা।
অসময়ে সাহায্য করেছে সে,
আর দিদিও কি শুনবে মানা?
মাকে আঁকড়েই ছিলাম আমি
বুঝিনি ভাগ্যে কি আছে ।
ঘুমের ঘোরেই একদিন মা,
চলে গেল বাবার কাছে।
একদিন দিদি আর সেই দাদা,
নিয়ে গেল এক বন্ধুর বাড়িতে।
সেখানে শরবত খেয়ে হলাম বেহুঁশ।
জ্ঞান এলো এক অন্ধকার গলিতে।
বুঝলাম আমার নিজের দিদি
নিতে চায়নি আমার ভার।
তাই তো আমায় দিয়েছে বেচে।
পালাতে গিয়ে খেয়েছি মার।
দিন যায়, যায় মাস, বছরও গেল ঘুরে,
শেষ হল আমার মেয়েবেলা।
রোজই কিছু নোংরা বাবু,
শরীর নিয়ে করে খেলা।
একদিন পুলিশে দিল হানা।
সবার সাথে আমাকেও তুলে নিল।
আদালত ঘুরে এবার মেয়েদের
এক হোমে আমার ঠাঁই হল।
অভাগী মেয়েদের শেখায় তারা,
নানাবিধ কারুকাজ।
সেই কাজ শিখে কত মেয়েই,
নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে আজ।
আমিও বললাম শিখবো আমিও,
এমন একটি শিল্প।
যেটা শেখা যায় অল্পদিনেই,
আর মূলধন লাগে অল্প।
কয়েকদিনেই শিখলাম আমি
বিনুনি গাঁথা সূক্ষ্ম অতি।
পাট দিয়ে বানালাম
সুন্দর সুন্দর গয়না গাটি।
এরপরেই পেলাম আমি
কারুশিল্পের রাজ্য পুরস্কার।
হোমেই পেয়েছি সরকারী চাকরি।
হয়েছে আমার এক সুখী পরিবার।