কবি –নির্মল প্রিয়া বিশ্বাস (কালাগ্নি) এর কবিতা // নাড়ীর টানে –মা’
একটা খুব মিষ্টি শব্দ মা,
যার ভুবন মোহিনী রূপে খোকার চোখে
ঘুম আসে,
যার ভুবন মোহিনী রূপে
‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’
‘বর্গী এলো দেশে’ শুনতে পাই
কানে–
সেই শব্দের খোঁজে
কত বিদেশ ভুঁইয়ে ঘুরেছি আমি ,
কত্তো নদী নালা ডিঙিয়েছি আমি
কিন্তু পায়নি সেই ভুবন মোহিনী রূপে
খোকা ঘুমালো,পাড়া জুড়ালো ‘বর্গী
এলো দেশে’ শুনতে!
তারপর একদিন এই দেশের মাটিতে
আলোর সন্ধানে,মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা
একটা বৃহৎ মহিরুহকে জিঙ্গাসা করলাম,
ও বৃহৎ মহীরুহ বন্ধু,
তুমি কি শুনবে একটিবার আমার কথা?
তুমি নাকি নীল গ্রহটার অক্সিজেনের উৎস,
অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখ সব্বাইকে,
ও বৃহৎ মহীরুহ বন্ধু
শোন না একটিবার,
আমায় একটা খুব মধুর,
খুব মিষ্টি শব্দ,শোনা মাত্র উষর ধূসর
মাটির বুকেও প্রাণ আসে খুঁজে
দাও না?
যার ভুবন মোহিনী রূপে
ভাগ চাষীর লাঙ্গলে সোনার ফসল ফলে,
নদীর বুকে কুলকুল ঢেউ ওঠে,
যার সতেজ রশ্মির তেজে
তুমি সবুজ হও–
তোমার ‘লক্ষ আশা অন্তরে’
বৃহৎ শাখী সম্ভাবনা জাগে,
দাও না গো ও বৃহৎ মহীরুহ বন্ধু সেই রকম
একটা শব্দ খুঁজে,যার ভূবন মোহিনী রূপে
খোকার চোখে ঘুম আসে,
দাও না গো বন্ধু
সেই রকম একটা শব্দ খুঁজে
যার ভুবন মোহিনী রূপে মা গর্ভধারিণী,
মা জন্মদায়িনী।
দেখলাম
সেই মহিরুহ বন্ধু
যে অটবি নামে বিটবি,
লজ্জাবতী লাজে উন্নত শির
–নুয়ে গেল,
নিরুত্তরে দুর্বল মহিরুহকে ত্যাগে
সেই মধুর শব্দের খোঁজে আবার
বেরিয়ে পড়লাম,
তারপর কত পথ পেরিয়ে,
এক সময় তপ্ত মরুর মাঝে
দুই হাত তুলে একা দাঁড়িয়ে
চিৎকার করে,
ও মরু ভাই
তুমি শুনবে একটিবার আমার কথা,
তুমি কি আমায় একটা সবচেয়ে সুন্দর,
সবচেয়ে মধুর শব্দ খুঁজে দিতে পারবে?
তুমি তো
কত অজানা যাত্রীকে
পথ দেখাও,
তোমার দিগন্ত রেখায় আঁকা
কত ছবি–
তোমার সাথে কত কথা কবির,
কত অভিশাপ তোমার বুকে,প্রেমিকের,
লাইলা-মজনুর,হির-রাঞ্জার,রোমিও
জুলিয়েটের।
তোমার সাথে
কত কথা আরব্য রজনীর,
তোমার সাথে তো কত কথা
আলাদিনের যাদু প্রদীপের!
তুমি আলাদিনের
সেই যাদুর প্রদীপকে একবার সংবাদ দাও
আমায় যেনো একটা ভূবন
মোহিনী রূপ খুঁজে দেয়,
তোমার সেই কায়ামত জিনকে
একবার বলো আমায় যেনো সে এই
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর,সবচেয়ে মধুর
একটা শব্দ খুঁজে দেয়,
দেখলাম নিরুত্তরে
মরুটি দিনের এক বুক
ক্লান্তি নিয়ে শুয়ে পড়ল!
হতাশ হয়ে
আবারও তার খোঁজে বেরিয়ে পড়লাম,
তারপর দিনের শেষে একটা পর্বতের
কাছে জিঙ্গাসা করলাম,
ও আকাশ ছোঁয়া শৃঙ্গচূড়া
তোমার চূড়ায় বিজয় গাঁথায়
কত্তো কাহিনী,
তোমার বুক থেকে বয়ে
আসা নদী–কত তার পরিচিতি!
তোমার তীরে
কত নগর সভ্যতার বিস্তৃতি,
তুমি পবিত্র,
তোমার শ্বেতশুভ্র বুকে
কোন পাপ নাই,তুমি দূর্ভেদ্য,
মানবতার প্রতীক।
দাও না আমায়
একটা শব্দ খুঁজে,যার ভূবন
মোহিনী রূপে ‘খোকা ঘুমালো,
পাড়া জুড়ালো’,’বর্গী এই এলো
দেশে’–
দাও না গো
আমায় সেই রকম
একটা শব্দ খুঁজে,যার ভুবন মোহিনী রূপে
তুমি সুন্দর,যার ভুবন মোহিনী রূপে
বসুধা কুমারী প্রসূতি।
দেখলাম
শিখর চূড়ায় শ্বেত-শুভ্র
পোষাকের মতন অংশ
ধ্বসে পড়ছে,
আমি ফিরলাম সেই শব্দের
খোঁজে,যার ভুবন মোহিনী
রূপে খোকা ঘুমালো পাড়া
জুড়ালো,কত বর্গী এলো
এই পবিত্র দেশে!
তারপর,
এক সময় মাথার উপরে দিগন্ত বিস্তৃত
আকাশটাকে জিঙ্গাসা করলাম
ও নীল-সাদা শাড়ী পরা নীলাম্বরী
প্রেয়সী তুমি আমার,
তুমি আমায় ভুবন মোহিনী রূপে
খোকা ঘুমালো,পাড়া জোড়াল
কিছু একটা খুঁজে দাও,
তোমার পরিচয়ে
তুমি আকাশ,যাকে
ছোঁয়ার সাধ্য আমার নেই
কিন্তু তোমার তো মহাশূন্য
পর্যন্ত বিস্তৃতি,
তোমার বিস্তৃত সীমানায়
খুঁজে দাও আমার খোকা ঘুমালো
পাড়া জুড়ালো,কত বর্গী ছুটে এলো
এই দেশে,
দেখলাম নীলাম্বরীর
বুক ভেঙে বৃষ্টি নামছে
চোখের কোণে কালো
ছাপ পড়ছে,
আমি এগিয়ে
কত পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে,
নদী নালা পেরিয়ে,শেষে ফিরলাম
আমার দুঃখের চালাঘরে,
দেখলাম,
একটা ফুটফুটে চেহারার শিশু
তার মায়ের কোল জুড়ে
জননীর আঁচলখানি টেনে শুয়ে
অমৃত পান করছে,মুখে যার
আউ আউ শব্দ।
তাই দেখে
মায়ের মন ভরে উঠছে
মা তার গা বুলিয়ে ঘুম পাড়ানি
গান গাইছে,রাতের চাঁদকে ডাকছে,
‘আয় আয় চাঁদ মামা
টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিপ দিয়ে যা’।
ভাবলাম কত বোকা আমি
আমার মাটির পৃথিবীর বুকেই তো
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো,
কত শান্তি নিরিবিলি ঘুমাচ্ছে
তার মায়ের আঁচলখানি টেনে
–নাড়ীর টানে।(পুরোনো লেখা)