1. admin@mannanpresstv.com : admin :
প্রতিবাদের কৌশল হোক অন্য রকম - মান্নান প্রেস টিভি
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন

প্রতিবাদের কৌশল হোক অন্য রকম

আবুল বাশার পিয়াস
  • Update Time : রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩
  • ৬৭ Time View
আবুল বাশার পিয়াস
চাকরির বেতনের টাকাটা যখন আমার স্বামী আসিফের হাতে তুলে দিলাম, সে টাকাটা গুণে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– “তুমি তো ৩০ হাজার টাকা বেতন পাও, এখানে তো দেখছি মাত্র ১০ হাজার টাকা!”
আমি বললাম- ১০ হাজার তোমাকে দিলাম, ১০ হাজার নিজের কাছে রাখলাম আর বাকি ১০ হাজার আমার বাবা-মায়ের জন্য।
আসিফ অবাক হয়ে বললো,
– “তোমার বাবা-মায়ের জন্য মানে! মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে মানে মেয়ের উপর তাদের দায়িত্ব শেষ! আর স্বামীর বাড়ি পা রেখেছো মানে তোমারও তাদের উপর দায়িত্ব শেষ! আলাদা করে উনাদের প্রতিমাসে তোমার টাকা দিতে হবে না। দাও বাকি টাকাটা দাও!”
আমি বাবা-মায়ের জন্য যে টাকাটা আলাদা করে রেখেছিলাম, সেই টাকাটাও আসিফের হাতে তুলে দিলাম। আসিফ টাকাটা গুণে বললো
– “তোমার নিজের জন্য টাকা রাখতে হবে কেন? তোমার যা লাগে সবই তো আমি দিই!”
আসিফের কথার ধরণ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম কি বুঝাতে চেয়েছে। আমি আমার জন্য রাখা টাকাটাও চুপচাপ তার হাতে দিয়ে দিলাম…
শ্বাশুড়িও কিছুটা তার ছেলে আসিফের মতোই। একদিন মার্কেট থেকে একই রঙের দুইটা শাড়ি এনে শ্বাশুড়িকে দেওয়ার পর শ্বাশুড়ি বললো,
– “বউমা, একই রঙের দুইটা শাড়ি এসেছো কেন? দুইটা দুই রকম আনতে?”
আমি বলেছিলাম- একটা আপনার জন্য, একটা আমার মায়ের জন্য।
সেদিন শ্বশুড়ি বিরক্ত হয়ে বলেছিল
– “তোমার আহ্লাদ দেখে বাঁচি না। মেয়ে মানুষের বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই সব। এতো বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করলে হবে?”
মাথা নিচু করে বলেছিলাম- ঠিক আছে, আর বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করবো না!
পরদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় আসিফকে বললাম,
– আমাকে ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা দিও। আর শোনো, বাসায় ফেরার সময় আমার জন্য নতুন দুই সেট ব্রা*-পেন্টি* নিয়ে এসো, আর হ্যাঁ ফার্মেসি থেকে এক প্যাকেট প্যাডও। ব্রা আনার সময় ভুল সাইজ এনো না কিন্তু! যদি আনো, তাহলে তোমারই আবার সেটা চেঞ্জ করে আনতে হবে।
কথার ধাক্কাটা হয়তো আসিফ নিতে পারেনি। তাই বোবা হয়ে গেলো! আমি মানিব্যাগ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে অফিস চলে গেলাম…
অফিস থেকে ফেরার পর শ্বাশুড়ি একটা শাল দেখিয়ে বললো,
– “এটা রিনা (আমার ননদ) আমার জন্য কিনে পাঠিয়েছে। কেমন হয়েছে বউ মা?”
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম
– রিনার তো বিয়ে হয়েছে। সে শ্বাশুড়ির জন্য শাল না কিনে কোন আক্কেলে আপনার জন্য কিনেছে বুঝলাম না! বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই মেয়েদের নিজের বাড়ি! জানি না রিনার এতো আহ্লাদ কেন? যা হোক, শালটা আমি নিয়ে গেলাম। পরে সময় মতো রিনার কাছে পাঠিয়ে দিবো! একথা বলে শ্বাশুড়ির গা থেকে শালটা খুলে নিজ রুমে চলে আসলাম…
কিছুক্ষণ পর আসিফ বাসায় ফিরলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
– আমার জিনিস এনেছো?
আসিফ মুখ ভোঁতা করে বললো- “না, আনিনি!”
কিছুটা রেগে বললাম,
– আনো নি কেন? আমার পেট ব্যথা শুরু হয়েছে। একটু পর যখন পিরিয়ড শুরু হবে, তখন বিদেশ থেকে আনা এই দামী কম্বলে রক্তের দাগ লেগে গেলে সেটা কি ভালো লাগবে? আমার কথা শুনে আসিফ তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো…
কিছুক্ষণ পর এক প্যাকেট প্যাড এনে আমার হাতে দেওয়ার পর আমি বললাম
– বাকী জিনিস কোথায়?
আসিফ মাথা নিচু করে ১০ হাজার টাকা হাতে দিয়ে বললো
– “আজ থেকে তোমার জিনিস তুমিই কিনো। মেয়েদের সব জিনিস পুরুষ কিনতে পারে না!”
পরদিন বাবা বাসায় এসে আমার স্বামী-শ্বাশুড়ির সামনে আমাকে বললো,
– “মা, আমার বয়স হয়েছে। কখন কি হয় বলা যায় না। তুই তোর প্রাপ্য সম্পত্তিগুলো বুঝে নে।”
বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কিসের সম্পত্তি বাবা? তুমি জানো না, মেয়েরা বিয়ের পরে পর হয়ে যায়? তুমি যেদিন আমায় বিয়ে দিয়েছো, সেদিনের পর থেকেই আমার প্রতি তোমার দায়িত্ব শেষ! আর আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেছি, তখনই তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব শেষ! আমার স্বামী-শ্বাশুড়ি আমাকে সেটাই শিখিয়েছে!
বাবা অবাক হয়ে বললো,
– “মা, এসব তুই কি বলছিস?”
আমি বললাম- ঠিক বলেছি বাবা, আমার কিছুই লাগবে না।
আসিফ আমতা আমতা করে আমাকে বললো,
– “তুমি আমাদের ভুল বুঝছো, বিষয়টা এমন না!”
শান্ত গলায় আসিফকে বললাম,
– তুমিই বলো বিষয়টা কেমন? আমার কি ইচ্ছে হতে পারে না, যে মানুষটা আমাকে এতো বড় করলো, পড়াশোনা শিখিয়ে যোগ্য পাত্রের সাথে বিয়েও দিলো, তার জন্য কিছু করতে? আজ আমি চাকরি করছি সবটা তো উনার জন্যই। উনি তো চাইলেই পারতেন উনার মেয়েকে পড়াশোনা না করাতে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে উনার প্রতি আমার সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে? মেয়ে বিয়ে দিলেই যদি বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যেতো, তাহলে আমার বাবা এখানে আসতো না আমার প্রাপ্য আমাকে বুঝিয়ে দিতে।
আসিফ আর কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে রইলো…
আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
– এক মাকে ছেড়ে আরেক মায়ের কাছে এসেছি। আমার দুই-দুইটা মা! যে মেয়ের দুই-দুইটা মা, সে তো একটু আহ্লাদি হবেই। আমি এক মায়ের জন্য কিছু কিনবো, আরেক মায়ের জন্য কিনবো না, সেটা কিভাবে হয় মা, আপনিই বলুন?
শ্বাশুড়ি মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো…
আসিফ আমার হাত ধরে বললো,
– “তুমি তোমার সম্পত্তি নাও কিংবা না নাও, এতে আমার বিন্দু পরিমাণ আপত্তি নেই। কিন্তু তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না। আমি চাই তোমার সাথে থেকে হলেও আমার নিচঁ মন-মানসিকতার পরিবর্তন হোক।”
বাবা আমাদের এসব কথা শুনে অবাক হয়ে বললো- “মা রে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
হেসে বললাম- তেমন কিছু না বাবা। একটু সমস্যা হয়েছিল, তোমার সামনেই সেটা সমাধান হয়ে গেলো।
শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– আহারে সোনা, শালটা নিয়ে গেছি বলে কান্না করতে হবে না?
শ্বাশুড়ি আমার কান টেনে বললো,
– “ফাজিল মেয়ে, মায়ের সাথে ঢং করা হচ্ছে? শালের জন্য না, আমি আমার করা ভুলের জন্য, আর এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আরেকটা মেয়ে পেয়েছি, সেই খুশিতে কান্না করছি।”
মানুষ কখনো ভুলের উর্ধ্বে নয়। সংসার জীবনে এমন সমস্যা হতেই পারে। আপনার প্রতিবাদের কৌশলটা শুধু একটু অন্য রকম হোক…

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD