1. admin@mannanpresstv.com : admin :
বেলা_শেষে - মান্নান প্রেস টিভি
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন

বেলা_শেষে

মোঃ বেল্লাল হোসেনঃ
  • Update Time : রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩
  • ৮২ Time View
মেঘাদ্রিতা_মেঘা: আমার আব্বু যেদিন বিয়ে করে তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে দরজায় এসে দাঁড়ান,আমি তাকে একটা প্রশ্নই করেছিলাম,আচ্ছা আব্বু,আমার আম্মু কি আপনাকে সুখী করতে পারেনি?যে আপনি আমার আম্মু জীবিত থাকাকালীন আপনি আরেক জনকে বিয়ে করে বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন।
সেদিন আব্বু যেই উত্তরটি দিয়েছিলেন,সেই উত্তর শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
তিনি বল্লেন,
তোমার মা আমাকে এত বছরেও সন্তানের সুখ দিতে পারেনি।একটা সন্তানের মুখ দেখাতে পারেনি।
আর একটা পুরুষের কাছে এই চাওয়াটা পৃথিবীর সব কিছুর ঊর্ধ্বে।
আমি আব্বুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম।
মানে?
কি বলছেন আপনি এসব আব্বু?সন্তানের সুখ দিতে পারেনি মানে?সন্তানের মুখ দেখাতে পারেনি মানে?
তাহলে আমি কে?
সেই মুহূর্তে আম্মু কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন,
চুপ করো তুমি চুপ করো।
কিন্তু আব্বু চুপ করলেন না,তিনি বললেন।
কেন?তোমার অক্ষমতার কথা তুমি আদ্রিতাকে জানাতে চাওনা বুঝি?
তাছাড়া আমি চাইনা ওর চোখে ছোট প্রমাণিত হতে।
আজ যদি ওকে আমি সব না বলি,তাহলে আমি ওর চোখে সারাজীবন ছোট হয়ে থাকবো।
ও ভাব্বে আমি অযথা ওর মাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করেছি।
ওর মাকে ঠকিয়েছি।
কিন্তু সত্যি তো এই।
তোমাকে বিয়ে করে আমি ঠকে গেছি।এত বছরেও আমি একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি।
আমি এবার আর এসব সহ্য করতে না পেরে আম্মুর দু হাত ধরে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম,
আম্মু আব্বু এসব কি বলছে?
তিনি এত বছরেও সন্তানের মুখ দেখতে পারেন নি মানে?বার বার কি বলছেন তিনি?
আমি কি তাহলে?আমি কি তার সন্তান না?
আব্বু কি পা গ ল হয়ে গেলেন নাকি আম্মু?
কি সব আবোল তাবোল ব কছে?
আম্মু চুপ করে শুধু দুচোখের জল ফেলছেন।
_তোমার আম্মু কি বলবে,ওর কিছু বলার মুখ আছে নাকি।
আমার কথা শোনো,
তুমি আমাদের পালিত সন্তান।
তোমাকে আমরা দত্তক নিয়েছি।
তোমার এই আম্মু তোমাকে গর্ভে ধরেনি।
আব্বুর কথা গুলো শুনে এক মুহূর্তে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
আমার দু চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
মারে তুই উনার কথা শুনিস না।
তুই আমার মেয়ে,আমার মেয়ে তুই।
এরমধ্যে আব্বুর ২য় স্ত্রী বলে উঠলেন,আমাকে কি তোমাদের এই পারিবারিক ড্রামা দেখানোর জন্য বিয়ে করে এনেছো?
কত ক্ষণ এই ভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো?
_এইতো এক্ষুনি আমি তোমাকে আমাদের রুমে নিয়ে যাবো।
চলো তুমি আমার সাথে,
আমি আমার চোখের জল মুছে আব্বুকে বললাম,
_আব্বু দাঁড়ান,
আমি শুধু জানতে চাই,আমি যদি আপনাদের পালিত সন্তান ও হয়ে থাকি,
তারপরও এত বছরে কি আমি আপনাকে একটুও বাবা হবার অনুভব উপলব্ধি করাতে পারিনি?
সন্তানের ভালবাসা,মায়া মমতা দিতে পারিনি?
সন্তানের অভাব পূরণ করতে পারিনি?
অথচ আমি তো জানতাম আপনারাই আমার বাবা মা।
কম তো ভালবাসি না আমি আপনাকে আর আম্মুকে।
আপনি কি আমায় কোন দিন ভালবাসেন নি?
তাহলে কি ধরে নিবো সন্তান হিসেবে আমি ব্যর্থ?
_তোমাকেও আমি নিজের সন্তানের মতই ভালবাসি।
কিন্তু নিজের সন্তান আর পালিত সন্তানের মাঝে বহুত ফারাক।
_আর আপনাদের এত বছরের সংসার?
আম্মুর আপনার প্রতি এত বছরের অগাধ ভালবাসা?
এর কি কোন মূল্য নেই?
আর এত বছর পর মনে হলো,আপনার সন্তান দরকার?
নিজের সন্তান দরকার?
আগে কেন মনে হলোনা?
এই বয়সেই এসে কেন মনে হলো?
_আদ্রিতা,তুমি কিন্তু অনেক বেয়াদব হয়ে গেছো।
বাবার মুখের উপর কথা বলো।
যাও তুমি তোমার আম্মুকে নিয়ে সরে দাঁড়াও।
আর তোমার আম্মুকে তোমার রুমে নিয়ে যাও।
আমাদের রুমে আমি তোমার ছোট আম্মুকে নিয়ে যাচ্ছি।
আজ থেকে তোমার আম্মুকে তোমার রুমে রাখবে।
এই বলে আব্বু উনার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে তার রুমে চলে যান।
আর আম্মু কান্না করতে করতে বেহুশ হয়ে যান।
আম্মুর মাথায় পানি ঢেলে,মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে আম্মুকে আমি স্বাভাবিক করি।
আম্মু এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করেন।
আর বলেন,
আজ আমার এ কি হয়ে গেলোরে মা।
আমি আমার স্বামীর সাথে সাথে আমার মেয়েকেও হারিয়ে ফেললাম,
আজকের পর তুইও আর আমাকে মা বলে ডাকবিনা না?
আমি কাঁদতে কাঁদতে আম্মুকে বললাম,
কে বলেছে তোমায়?
তুমিই আমার মা।
তুমিই আমার আম্মু।তুমিই আমার সব।
শুধু জন্ম দিলেই মা হয়না।
আম্মু আমাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
সেদিনের রাত টা ছিলো আমাদের জন্য খুবই ভয়াবহ রাত।
পরের দিন সকাল হতেই আম্মু প্রতিদিনের মত নাস্তা তৈরী করে টেবিলে দিয়ে, আমাদের ডাকেন।
আমি চেয়ারে গিয়ে বসা মাত্র আব্বু তার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে এসে আমার পাশে বসেন।
আম্মু খাবার প্লেটে দিতে গেলে আব্বুর ২য় স্ত্রী বলে উঠেন,
আপনার দিতে হবেনা।
আমি দিচ্ছি।
আম্মু আমার দিকে তাকালেন।
আমি আম্মুকে মাথা ঝাকিয়ে ইশারায় বললাম,কোন কিছু না বলতে।
খাওয়াদাওয়া শেষে আব্বু তার বউকে নিয়ে চলে গেলেন।
একটা বারও আম্মুকে বললেন না,
আদ্রিতার মা,তুমিও বসো।
খেয়ে নাও।
হায়রে মানুষ।
নতুন নারীর সঙ্গ বুঝি এতই পাওয়ারফুল।
যে প্রথম নারীকে এক মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয়।
আম্মু সেদিন আর নাস্তাই করলেন না।
আমি বলার পরও না।
আব্বু কিছু দিনের জন্য অফিস ছুটি নিয়েছেন।
তিনি তার নতুন বউকে নিয়ে ঘুরবেন ফিরবেন বলে।
প্রতিদিনের মত আম্মু দুপুরের রান্না করেন।
তারা এসে খাওয়া দাওয়া করে চলে যান তাদের রুমে।
বিকেলে দেখি আব্বু তার নতুন বউকে নিয়ে সাজগোছ করে কোথায় যেন যাচ্ছেন।
আম্মু আমাকে বলে রেখেছেন,তারা কি করলো না করলো তা নিয়ে আমি যেন কোন কথা না বলি,
তাই আমিও তাদের ব্যাপারে কোন কথা বলিনা।
রাতের বেলা তারা দুনিয়ার শপিং করে বাসায় ফিরেন।
খেয়েও আসেন বাইরে থেকে।
আম্মু শুধু এখন সারাদিন রাত কান্না করেন।
রাত ভর জেগে থাকেন,ঘুমান না।
আম্মু আমি দুজনই শুয়ে আছি।
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
আম্মু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
_হুম বল।
_তুমি কষ্ট পাবা নাতো?
_তোর জন্মদাতা,জন্মদাত্রীর কথা জানতে চাইবি?
_আমি আম্মুর বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,তুমি বুঝলে কি করে?
_মা তো,মেয়ের মনের কথা বুঝবো নাতো কার কথা বুঝবো?
আমি আম্মুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,ভালবাসি আম্মু।
এবার আম্মু বললেন,
আমি যতটুকু জানি তোর জন্মদাতা বাবা বেঁচে নেই।
তোর জন্মদাত্রী মায়ের কাছ থেকে তোকে আমরা নিয়ে আসি।
তবে তোর কিন্তু আরেকটা বোন আছে জানিস?
_বোন?
_হুম তোর জমজ বোন।
তোর জন্মদাত্রী মা দুজনের খরচ একা বহন করতে পারবেন না বলে তোকে আমাদের কাছে দিয়েছেন।
তাছাড়া আমরাও নিঃসন্তান।
তোর আব্বুর আর্থিক অবস্থাও ভালো।তুই ভালো থাকবি।তাই তিনি আমাদের কাছে তোকে দিয়েছেন।
জানিস তোর জমজ বোন টার চেহারা অবিকল তোর মত।
শুধু ওর গালে একটা তিল আছে আর তোর নেই।
নাহলে কেউ চিনতেই পারবেনা কে কোন টা।
ওই তিল টাই শুধু আলাদা করতে পারে তোদের।
তোকে নিয়ে আসার সময় তুই খুব কান্না করছিলি ওর জন্য।ও ও খুব কাঁদিছিলো।
সাড়ে চার বছর কি পাঁচ বছর ছিলো তখন তোদের।
কিছু দিন খুব কান্নাকাটি করতি তুই এখানে আসার পর।
পরে আমার আর তোর আব্বুর আদরে ধীরেধীরে অতীতের সব কিছুই ভুলে যাস।
_আম্মু কোথায় আমাদের বাসা?
_কেন মা?তুই কি আমায় ফেলে চলে যাবি তোর ওই মায়ের কাছে?
_না আম্মু।আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যাবোনা।কোথাও যাবোনা।
_তবে একটু যেয়ে দেখতাম,কেমন আছেন তারা।
কি অবস্থায় আছেন।কোথায় আমার জন্ম।
_আচ্ছা আমি কাল তোকে ঠিকানা টা দিবোনে।
আমি ডায়েরিতে লিখে রেখে দিয়েছি।
এখন ঘুমা অনেক রাত হয়েছে।
_আচ্ছা আম্মু।
তুমিও ঘুমাও।
পরের দিন আম্মু আমাকে ঠিকানা টা দেন।
আমি ঠিকানা টা রেখে দেই,কারণ আম্মুর মনের অবস্থা তখন ভালোনা।
তাই আম্মুকে রেখে তখন কোথাও যাবার চিন্তাও করিনি।
দেখতে দেখতে অনেক গুলো দিন কেটে যায়।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজই আমি আমার জন্মদাত্রী মা এবং জমজ বোনের সন্ধানে বের হবো।
কারণ আম্মুও এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি আব্বু বাসায় অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঢুকলেন।
এক প্যাকেট আমাকে দিয়ে বললেন,
এগুলো তুমি খাও আর তোমার আম্মুকে নিয়েও দাও।
_মিষ্টি,
মিষ্টি কিসের জন্য?
_তুমি বড় বোন হতে যাচ্ছো আদ্রিতা।
তোমার ছোট আম্মু মা হতে চলেছে।
সেই খুশিতে মিষ্টি।
আব্বু হাসি মুখে কথা গুলো বলতেই আম্মুর হাত থেকে কাঁচের গ্লাস টা ঠাস করে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
আব্বু চলে যায় তার নতুন বউ এর কাছে।
আমি আম্মুর কাছে যেতেই আম্মু আমাকে যা বলেন,তা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
_আদ্রিতা,এ কি করে সম্ভব?
তোর আব্বু তো কোন দিন বাবা হতে পারবেন না।
চলবে…

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD