1. admin@mannanpresstv.com : admin :
কারাবন্দি আল্লামা সাঈদীর ইন্তেকাল - মান্নান প্রেস টিভি
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন

কারাবন্দি আল্লামা সাঈদীর ইন্তেকাল

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩
  • ১০৪ Time View

শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহ

পর পর দুইবার জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, আল কুরআনের পাখি বলে পরিচিত, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে কারাবন্দি ছিলেন। তার ইন্তেকালে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মুসলমানদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীরবিক্রম)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা শোক প্রকাশ করে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন।
গত ১৪ আগস্ট সোমবার রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাত ৮.৪০ মিনিটে মৃত্যু হয় সাঈদীর। এছাড়া তার ছেলে মাসুদ সাঈদী ফেসবুক পোস্টেও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত রোববার (১৩ আগস্ট) রাত সোয়া ১০টায় তাকে বিএসএমএমইউয়ের ব্লক-ডির কার্ডিয়াক সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্ধ্যায় ঢাকায় পাঠায় কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হার্টে পাঁচটি রিং পরানো হয়েছিল। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবত উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তিনি পায়ের গিরায় ব্যথাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অপরের সাহায্য ছাড়া তিনি একাকী হাঁটা-চলা ও ওঠা-বসা কোনোটাই করতে পারছিলেন না।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শহীদবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সাঈদীকে। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ প্রমাণিত বলে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষাপটে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী : আল্লামা সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর (ইন্দুরকানী) উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাওলানা ইউসুফ সাঈদী, যিনি একজন স্বনামধন্য আলেমেদীন ছিলেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদরাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। কামিল পাস করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্ত্বের ওপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চার ছেলেÑ মরহুম রাফীক বিন সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসুদ সাঈদী এবং নাসিম সাঈদী। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। আল্লামা সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত জামায়াতের নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেয়া হয়। তিনি মাত্র ৬,৯৯৬ ভোটে পরাজিত হন। ২০০১ সালে তিনি ১,১০,১০৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুধাংশু শেখর হালদার ৭৬,৭৩১ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর মাত্র তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আল্লামা সাঈদী ৫৫,৭১৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুধাংশু শেখর হালদার পেয়েছিলেন ৫৫,৪৩৭ ভোট।
১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ‘দায়ি ইলাল্লাহ’ হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পৃথিবীর অর্ধশতেরও বেশি দেশে আমন্ত্রিত হয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। দেশে তার ৫০ বছরের ইসলাম প্রচারের আনুষ্ঠানিক তৎপরতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ ক. চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে প্রতি বছর ৫ দিন করে দীর্ঘ ২৯ বছর মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম এ মাহফিলে দুবার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। খ. খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানসহ শহরের বিভিন্ন মাঠে প্রতি বছর ২ দিন করে দীর্ঘ ৩৮ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গ. সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৩ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঘ. রাজশাহী সরকারি মাদরাসা মাঠে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৫ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঙ. বগুড়া শহরে প্রতি বছর ২দিন করে দীর্ঘ ২৫ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। চ. ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ময়দান ও পল্টন ময়দানে প্রতি বছর ৩ দিন করে দীর্ঘ ৩৪ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ছ. কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তিন দিনব্যাপী প্রায় দীর্ঘ ৩১ বছর তাফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাওলানা সাঈদী : মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন বিশ^ব্যাপী ইসলাম প্রচারক। দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর বাকি পাঁচটি মহাদেশে তিনি ইসলামের দাওয়াতের উদ্দেশে সফর করেছেন। বিশে^র অন্তত ৫৭টি দেশে পবিত্র কুরআনের তাফসির করেছেন। ক. ১৯৭৬ সাল থেকে সৌদির আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হজব্রত পালন করেন। ১৯৯০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর রমজান মাসে মক্কা-মদীনায় থাকা তার রুটিন হয়ে গিয়েছিল। খ. ১৯৮২ সালে ইমাম সৈয়দ আলী হোসেনী খামিনির আমন্ত্রণে ইরানের প্রথম বিপ্লববার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তেহরান সফর করেন। ১৯৯১ সালে সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে কুয়েত -ইরাক যুদ্ধের মীমাংসা বৈঠকে তিনি যোগদান করেন। ১৯৯১ সালে ইসলামী সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা তাকে ‘আল্লামা’ খেতাবে ভূষিত করে। গ. ১৯৯৩ সালে নিউইয়ার্কে জাতিসংঘের সামনে আমেরিকান মুসলিম ডে প্যারেড সম্মেলনে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘গ্র্যান্ডমার্শাল’ পদক দেয়া হয়। দুবাই সরকারের আমন্ত্রণে ২০০০ সালের ৮ ডিসেম্বর আরব আমিরাতে ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রোতার সামনে তিনি কুরআনের তাফসির পেশ করেন।
ঘ. লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাবা শরীফের সম্মানিত ইমাম ‘শায়েখ আব্দুর রহমান আস সুদাইসির’ সাথে মাওলানা সাঈদীও আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মাওলানা সাঈদীর হাতে হাত রেখে কয়েক হাজার অমুসলিম ভাই-বোন ইসলামের সুমহান আদর্শ গ্রহণ করে জীবন আলোকিত করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD