1. admin@mannanpresstv.com : admin :
কুড়িয়ে পাওয়া ব্যাগ - মান্নান প্রেস টিভি
মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩১ অপরাহ্ন

কুড়িয়ে পাওয়া ব্যাগ

নাঈমুল হাসান তানযীম
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৬২ Time View

নাঈমুল হাসান তানযীম

বেশ কদিন যাবৎ কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না মাজেদ মিয়া। দারোয়ানির চাকরিটাও ছুটে গেছে মাস দেড়েক হলো। তারপর প্রায় পঁচিশ ত্রিশ দিন বাসার পশ্চিম দিকের অ্যাপার্টমেন্টে ইটভাঙার কাজ করছিল। দশ বারো দিন হলো সে কাজটুকুও শেষ হয়ে গেছে। এখন বাসায় বসে বসে বেকার সময় কাটাচ্ছে। অবশ্য নতুন কাজবাজের খোঁজ লাগাচ্ছে কিন্তু মিলছে না কোথাও। ওদিকে জমানো টাকাও প্রায় শেষের দিকে। সেদিন আবার ছোটো ছেলেটা খেলতে গিয়ে চোখে বল পড়ে ব্যথা পেয়েছে। ওকে নিয়ে যেতে হয়েছে হাসপাতালে। টাকা পয়সা সব ওর পেছনেই খরচা হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে মাজেদ মিয়ার নিতান্তই খালি হাত। একটা টাকাও আর অবশিষ্ট নেই। ঘরে বাজার সদাই বলতে কয়েক কেজি চাল আর কিছু ডাল আছে। এর বাইরে নতুন কিছু বাজার থেকে কিনে এনে রান্নাবান্না করার কোনো সামর্থ্যই আর নেই তার।

আসরের আজান পড়ে গেছে। রেললাইনের কিনার ধরে উদাস উদাস ভাব নিয়ে হেঁটে চলছে মাজেদ মিয়া। গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সে। ভাবছে, কী করা যায়? এই মুহূর্তে তার একটা কিছু করতেই হবে। নইলে যে পুরো পরিবারটিকে পোহাতে হবে ক্ষুধা পিপাসা আর অভাবের কষ্ট। খুব চিন্তিত মনে হেঁটে চলছে সে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল। দেখল, অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছে। এবার বাসায় ফিরতে হবে। আবারও উল্টো দিকে পথ ধরল। বেশ কিছু পথ যাওয়ার পর রাস্তার এক কোণে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখল সে। আশপাশে দুচোখ বুলিয়ে দেখল, কেউ আছে কি না। নাহ, তেমন কেউ নেই। ব্যাগটি আস্তে করে কাঁধে তুলে নিয়ে সোজা বাসার দিকে হাঁটা ধরল সে। মনের ভেতর তুমুল উত্তেজনা কাজ করছে। কী না কী আছে ব্যাগের ভেতর। আবার অনুতাপও জাগছে, কার না কার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ পথে পেয়ে আমি নিয়ে এলাম। কাজটা কি ঠিক হলো? মনের ভেতর একই সাথে ভয়-শঙ্কা আর আশা-আকাক্সক্ষা দুটোই ঝিলিক দিয়ে উঠছে। তবে আপাতত কোনো সিদ্ধান্তে স্থির হতে পারেনি সে। বাসায় গিয়ে তারপরই দেখবে ব্যাপারটা।

বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। রুমে ঢুকতেই বউয়ের চেঁচানো শুনতে হলো,

-কী! কোনো কাজবাজ বুঝি পাও নাই আজও!

হাতে থাকা ব্যাগের দিকে ইশারা করে মাজেদ মিয়া বলল,

-আরে থামো, দেখো না তোমাদের জন্য কী নিয়া আসছি!

ব্যাগের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে উঠল স্ত্রীর।

-আরে, এ আবার কী নিয়ে এলে! দেখি দেখি।

এ বলে লাইটের নিচে একসাথে বসল। একে একে ব্যাগের সবগুলো চেইন খুলল। তারপর ভেতরে হাত ঢোকাতেই চমকে উঠল দু’জন।

‘ইয়া মালিক! কতগুলো টাকার বান্ডিল!’

তাও আবার সবগুলো একহাজার টাকার!

ব্যাগের সাইট চেইন খুলতেই দেখতে পেলো একজনের পরিচয়পত্র। তার মানে এই ব্যক্তিই এই ব্যাগের আসল মালিক। স্ত্রী তো মহাখুশি। এই টাকা দিয়ে অনেকদিন চলতে পারবে তারা। দুঃখের সময় বিদায় নিয়ে সুখের সময় আসবে। অভাবের সংসারে আনন্দের দিন আসবে। কিন্তু মাজেদ মিয়া ভাবছে অন্য কথা। জীবনে কোনো দিন মানুষের টাকা মেরে খাওয়ার রেকর্ড নেই তার। এমনকি অনেক সময় নিজের প্রয়োজনের মুহূর্তেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্নভাবে। আজকে কী করে আরেকজনের সম্পদে অবৈধ হস্তক্ষেপ করবে সে! হঠাৎ করেই তার চোহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতেও বিন্দুমাত্র দেরি করল না আর। ব্যাগের ভেতর থাকা মূল মালিকের পরিচয়পত্রে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করল।

-আসসালামু আলাইকুম! আমি কমলাপুর থেকে মাজেদ বলছিলাম স্যার।

জবাবে কাঁপা কাঁপা স্বরে ওপাশ থেকে ভেসে এলো,

-ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হ্যাঁ ভাই! বলুন।

-আপনি কি মাসুদ আহমাদ?

-জি! কেন?

-না মানে, আপনর কি কোনো কিছু হারিয়েছে?

চাপা উত্তেজনা আর কৌতূহল নিয়ে লোকটি বলল,

-হ্যাঁ ভাই! আমার একটি ব্যাগ হারিয়েছে গতকাল। ট্রেন থেকে নামার পথে কোথায় যে পড়েছে খবর নেই আর। আপনি কি সে ব্যাগটি পেয়েছেন?

-হ্যাঁ ভাই, আজ বিকেলে হাঁটতে গিয়ে ব্যাগটি রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে এনেছি।

-আচ্ছা ভাই, আপনার ঠিকানাটা বলবেন কি? আমি এক্ষুনি আসছি।

মাজেদ মিয়া নিজের পূর্ণ ঠিকানা জানালো লোকটিকে। এর ঠিক আধঘণ্টা পর লোকটি হাজির হলো মাজেদ মিয়ার বাসায়। মাজেদ মিয়াকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরল লোকটা। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ল দুজন। মাজেদ মিয়া লোকটিকে তার ব্যাগ বুঝিয়ে দিলো। লোকটি নিজের হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটি পেয়ে যারপরনাই খুশি হলো।

তারপর কী হলো…!

তারপর লোকটি তার মহৎ চরিত্র ও আমানতদারিতায় মুগ্ধ হয়ে এক লক্ষ টাকা উপহার দিলো।

আর কী বলল? বলল,

-আসলে ভাই, আমি আপনাকেই খুঁজছি এতোদিন যাবৎ। অমন মহৎপ্রাণ ও আমানতদার ব্যক্তি। এবং কোথাও খুঁজে পাইনি বলে এমন বড়ো একটা ঝুঁকি নিয়েছি। অনেকগুলো টাকার বান্ডিল ব্যাগে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে রেখেছি। আগে থেকেই মনে মনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ব্যাগটি যে আমানতদারিতার সঙ্গে আমার হাতে পৌঁছে দেবে তাকে পুরস্কৃত করব এবং আমার ব্যবসায় তাকে আজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেব। শেষমেশ পেয়েই গেলাম। এখন সিদ্ধান্ত জানান, আপনি কি আমার প্রস্তাবে রাজি?

-মাজেদ মিয়া যেন পুরোই থ হয়ে গেল। শুকরিয়া প্রকাশের কোনো ভাষা খুঁজে পেল না সে। জীবিকা নির্বাহের জন্য এমন সম্মানজনক স্থায়ী কাজ খুঁজে পাওয়ায় আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল।

সানন্দে সে লোকটির জবাবে বলে উঠল,

– আলহামদুলিল্লাহ ভাই, আমি রাজি আছি।

তারপর মাজেদ মিয়া জীবনে কোনোদিন অভাবের কষ্ট অনুভব করেননি।

আমানতদারিতা আর সততার পুরস্কার এমনই হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD