আলোকচিত্রশিল্পী শামসুল ইসলাম আলমাজী আমাকে নিয়ে গেলেন একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ছবি তুলতে হবে। তিনি কেন আমাকে সাথে নিলেন? ভাবনার মাঝেই তিনি বললেন, যখন ছবি তুলবো তখন তোমাকে যেভাবে বলবো তুমি সেভাবেই তুমি আমাকে সহযোগিতা করবে। অর্থাৎ আমি তার সহযোগী হিসাবে ছবি তোলার সাথী হলাম। বেশ ভালই লাগছিল। একটি বাড়ির সামনে এসে থামলেন। বাড়ির দারোয়ানকে পরিচয় দিয়েই ভিতরে ঢুকলেন।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি এলেন। আমি চমকে উঠলাম। হেসে বললেন কেমন আছেন? আলমাজী উত্তর দিলেন। আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। যিনি এতদিন আমার স্বপ্নের রাজকন্যা ছিলেন তিনি আমার সামনে রুনা লায়লা। আমি রুনা লায়লার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে শামসুল ইসলাম আলমাজী রুনা লায়লাকে বললেন, আমার সহকর্মী খান আখতার হোসেন।
আমি অবাক হলাম। আমিতো সাপ্তাহিক বিচিত্রার স্টাফ নই, আনন্দ বিচিত্রারও স্টাফ নই, তাহলে কেন তিনি আমাকে তার সহকর্মী বললেন? পরবর্তীতে শামসুল ইসলাম আলমাজী আমাকে জানালেন, এই মিথ্যা পরিচয় না দিলে আপনাকে ওখানে রাখা যেত না। কিন্তু আপনিওতো সাংবাদিক। একই পেশা আমাদের। আপনাকেতো ছোট করতে পারিনা।
আমি তখন পাক্ষিক তারকালোকে চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে কাজ করি। পাক্ষিক তারকালোকে আমাকে সাজ্জাদ কাদির চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তার পূর্বে আমি কাজ করতাম সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে। সম্পাদক মালেকা বেগম আমাকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সচিত্র সন্ধানীতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমি মূলত: কাজ করতাম সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে কাজ করতাম। শিল্প সাহিত্য নাটক ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নেয়া ছিল আমার কাজ। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে রুনা লায়লার সাথে দেখা করার কোন সুযোগ আমি করতে পারিনিআমি করতে পারিনি। তিনি তখন সংগীত অঙ্গনে সবার শীর্ষে অবস্থান করছেন। দেশে-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে তার। আমার মত নতুন সাংবাদিকের তার সাথে যোগাযোগ করাতো সম্ভব নয়।কিন্তু সেই সুযোগ আজ শামসুল ইসলাম আলমাজীর মাধ্যমে এসেছে। বড্ড ভালো লাগছে। রুনা লায়লাকে আমি এক দৃষ্টিতে দেখছি।
রুনা লায়লা। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। হতে চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী’। কিন্তুু হলেন গানের শিল্পী। ১৯৬৪ সালে মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘ জুগনু’ চলচ্চিত্রে ‘ গুডিয়াসি মুন্নী মেরি ভাইয়া কি পেয়ারি’ তে গান গেয়ে প্রথম চলচ্চিত্রে প্লে ব্ল্যাক করেন। প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন কিছু সম্ভব নয়- এটা রুনা লায়লার পরিবার তাকে বুঝিয়েছিলেন। গান গাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন প্রশিক্ষণের। এই গানটির জন্য রুনা লায়লা দুই মাস ধরে কণ্ঠ সেধেছিলেন। অর্থাৎ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই রুনা লায়লা ৯০ দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানের সুরকার নিমসার বাজমির কারেন্ট তো ঠিক হইছে কাকু তাই এবারে দিবেন না সুরে ৩ দিনে ৩০ টি গান গেয়েছিলেন। যা গিনেজ বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। রুনা লায়লা ১৮টি ভাষায় এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি গানে কন্ঠ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে রুনা লায়লা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশে এসে ১৯৭৪ সালে সত্য সাহার সুরে ‘ জীবন সাথী’ ছবিতে গান গেয়ে দর্শকদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে বাংলাদেশের ছবিতে রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান – গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘ গানেরই খাতায় স্বরলিপি লেখে’। লাহোরে থাকা অবস্থায় এ গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। বলিউডে কয়েকটি চলচ্চিত্রেও গান করেছেন রুনা লায়লা। ‘ও মেরা বাবু চেইল চেবিলা’ গানটি বহু জনপ্রিয়। রুনা লায়লা পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার, পাকিস্তানের নিগার আ্যওয়ার্ড সহ অনেক পুরস্কার।
স্টেজে দাঁড়িয়ে গানের সাথে নৃত্যের ভঙ্গি প্রর্বতনের অগ্রপথিক বলা হয় তাকে। রুনা লায়লার গান শুনতে দর্শকদের ঢল নামে। রুনা লায়লা স্টেজে উঠার সময় নীচু হয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। এরপর দর্শকদের সামনে এসে কুশল বিনিময় করেন। তারপর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে গান পরিবেশন করেন। যা দর্শকদের হৃদয়ে স্পন্দনের সৃষ্টি করে। ১৯৮৭ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে রুনা লায়লা গান পরিবেশন করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি সাংবাদিক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। সেই অনুষ্ঠান কভার করি আমি। অনুষ্ঠানের ছবি পত্রিকাতে প্রকাশ পায়। তবে সাপ্তাহিক মেঘনার নির্বাহী সম্পাদক শরিফুল ইসলাম উক্ত পত্রিকায় কভার করার জন্য আমার তোলা একটি ছবি ব্যবহার করে। অবশ্য তখন আমি দৈনিক বাংলার বানীর সাপ্তাহিক সিনেমায় স্টাফ ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করি।
তখন আমি থাকতাম শেরশাহ সুরি রোডে।