জেগে থাকি
মুক্তা পারভীন
রাত জাগা আমার অভ্যাস নেই
তবুও মাঝে মাঝে জেগে থাকি
তোমার জন্য
মেসেঞ্জারে তোমার সবুজ বাতির দিকে
একদৃষ্টে চেয়ে থাকি
ভাবি হয়তো একটা ফোন আসবে
দশ, এগারো, বারোটা বাজে
তবুও যখন কোন ফোন আসেনা
মোবাইলটা হাতে নিই ফোন দিতে
পরক্ষণেই থেমে যা-ই
এক রাশ অভিমান পায়ে পায়ে এসে
জড়িয়ে ধরে হাতদুটো।
সমুদ্রের নোনা জল চিকচিক করে
দু’চোখের কোণে
কখনো কখনো গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে
কখনো বা আবার জমাট বেঁধে
সজোরে ধাক্কা দেয় পাঁজরে
কষ্টের কোন রঙ হয়না
যদি হতো, তাহলে দেখতে পেতে
কষ্টের রঙে কতোটা রাঙিয়েছো আমায়।
তারিখ ঃ ২৯/১১/২৩
করবে আলিঙ্গন
মুক্তা পারভীন
আজকাল অকারণেই রেগে যা-ই
বারবার
কোন কারণ ছাড়াই হাসি
আবার – আবার অকারণেই
কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই।
কি যেন এক অভাববোধ ঘুরেফিরে
আমার হৃদয়ের অলিগলিতে
আমি ভুলতে চাই, মুছতে চাই
অগ্রাহ্য করতে চাই
কিন্তু – কিন্তু পারিনা।
স্বজনের মতো ভীড় জমায় চারপাশে
কৃষ্ণচূড়ার থোকা থোকা ফুলের মতো
রক্তাক্ত করে অষ্টপ্রহর
ঝলসে যাওয়া ঘাসের মতো
রক্তশুন্য করে মাঝে মাঝে।
খিদেটাকে তাড়িয়ে দেয় দূর প্রবাসে
টুকরো টুকরো মেঘের মতো
ভেঙে দেয় ভেতরটাকে
ক্লান্তি অবসাদ জড়িয়ে ধরে
ক্লান্ত পথিকের পায়ের মতো।
কষ্টগুলো ছোট ছোট ঢেউ হয়ে
আঁচড়ে পড়ে বুকের মধ্যে
নিতান্ত প্রয়োজন না হলে
কথা বলতে ইচ্ছে করে না
অজানা ভীতিতে কুঁকড়ে যাই সারাক্ষণ
মৃত্যু বুঝি অতি সন্নিকটে
এখুনি আমার করবে আলিঙ্গন।
তারিখ ঃ ২৭/১১/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
পুরুষ
মুক্তা পারভীন
পুরুষ
তোমায় ভীষণ ভালোবাসি
অনুরাগে যার হাতটি ধরে
সংসার জীবনে আসি।
পুরুষ
তোমায় করি অকুন্ঠ সম্মান
সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাস পেতে
যিনি দিয়েছো জন্মদান।
পুরুষ
তোমায় রেখেছি স্নেহ ভালোবাসায়
বাসে যারা সীট ছেড়ে দিয়ে
বসুন আন্টি বলে উঠে দাঁড়ায়।
পুরুষ
তোমায় আজ-ও ভুলিনি
বিপদে যে সাহস জুগিয়ে
করেছো আমায় ঋণী।
পুরুষ
তোমার দেখতে চাই না মুখ
আমার সাফল্যে এখনো
যাদের হিংসায় জ্বলে বুক।
পুরুষ
তোমায় ভীষণ ঘৃণা করি
নিশীথে যারা অকারণে
মেসেঞ্জারে করছো ঘুরাঘুরি।
পুরুষ
তোমায় করছি প্রত্যাখান
নানান ছুতোয় কাছে পেতে
যে দেখাও প্রলোভন।
পুরুষ
তোমায় আজও পাশে চাই
শ্রদ্ধায় আর সম্মানে
যে হৃদয়ে দিয়েছো ঠাঁই।
তারিখ ঃ ২৬/১১/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
বন্ধু তোকে ভালোবেসে
মুক্তা পারভীন
একটা প্রজাপতিময় গোধূলি লগ্ন
আর একটা তুই চাই
চাই কিছু কিছু অনিয়ম
নিয়মের বেড়াজালে আর
আটকে থাকতে ভালো লাগেনা
তুই এসে পূরণ করবি
আমার ঘাটতিগুলো
হইচই করে মাতিয়ে রাখবি
আমায় অষ্টপ্রহর
আমার কষ্ট, আমার অপ্রাপ্তি
সব ঢেলে দিব তোর বুকে
হৃদয়ের অলিগলিতে জমাটবদ্ধ
বেদনার ধুলো উড়িয়ে দিবি
এক পলকে
আমার বদ অভ্যাস গুলো
শুধরে দিবি বন্ধুর মতো
ঝগড়া হবে, রাগ হবে
অভিমান হবে – তবুও
তবুও ছেড়ে যাবি না আমায়
আগলে রাখবি যত্ন করে
প্রবল দহনে পুড়বো যখন
হৃদয় দুয়ার খুলে দিবি
চোখের কোণের অশ্রু গুলো
দুহাত দিয়ে কুড়িয়ে নিবি
বটবৃক্ষের ছায়ার মতো
শীতল পরশে জুড়িয়ে দিবি
তেমনই একটা তুই যদি আজ
থাকিস আমার চারিপাশে
পুরো পৃথিবী লিখে দিব
বন্ধু তোকে ভালোবেসে।
তারিখ ঃ ১২/১১/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
স্বাধীন আকাশে
মুক্তা পারভীন
———
হামাগুড়ি দিয়ে চলছে ঘড়ির কাঁটা
তীব্র যন্ত্রণায় তমসার দিন রাত্রি
প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে
বিশ্বাস, আস্থা, ভালোবাসা।
বিশ্বাসঘাতকতায় ডুবছি
ডুবে যাচ্ছি চোরাবালির ফাঁদে
অপেক্ষায় থাকি সুর্যের
উদয় হবে পূর্ব আকাশে।
নিশুতি রাত
বিভীষিকাময় ঘুটঘুটে আঁধার
উতরে আসবে প্রভাত
আলো উত্তাপে ভরবে চারপাশ।
মীরজাফরের কপটতার অবসান
উচ্ছ্বাসের ঊষালগ্নের হবে আবির্ভাব
মুক্তির আনন্দে ফুটবে মহত্ত্বের ফুল
মুক্ত মন উড়বে স্বাধীন আকাশে।
তারিখ ঃ ০১/১১/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
আছি হৃদয় পেতে
মুক্তা পারভীন
একটা পাখি রাত দুপুরে
বুকের ভিতর ঝাপটে মরে
উড়াল দিতে মেলছে ডানা
আকাশ যেন করছে মানা।
কি অভিমান ঝরে চোখে
কেউ কি তার খবর রাখে?
হঠাৎ দেখা মধ্য রাতে
তোমার স্মৃতিগুলোর সাথে।
কষ্টেরা সব জেগে উঠে
কপাট খুলে আসছে ছুটে
কি যে ব্যথা আঘাত হানে
নিত্য নতুন ক্ষণে ক্ষণে।
দুরারোগ্য ব্যাধির মতো
আগলে রাখে অবিরত
হৃদয়টাকে ভেঙে চূরে
নিষ্পেষিত রাখলে করে।
ভিসুভিয়াস জ্বলছে বুকে
মরছি কেবল ধুঁকে ধুঁকে
তোমার প্রেমের নির্যাস নিতে
বসে আছি হৃদয় পেতে।
তারিখ ঃ ২৩/১০/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
ছন্নছাড়া
মুক্তা পারভীন
—————-
সুখগুলো ছন্নছাড়া
কেউ আসে, কেউ আসে না
অজানা কোন দূরের দেশে
বসত তাদের অরুণ বেশে
মাঝে মাঝে মেঘে ঢাকে
ভয়ানক এক থাবা হাঁকে।
দুঃখ গুলোর সখ্যতা খুব
কেউ কারোর হাত ছাড়ে না
অনির্ধারিত বার্তা নিয়ে
সামনে আসে যখন তখন
বহ্নি শিখা জ্বালিয়ে দিয়ে
পুড়তে ভালোবাসে ভীষণ।
তারিখ ঃ ২৪/১০/২৩
মানুষ প্রেমে পড়ে
মুক্তা পারভীন
—————–
মানুষ প্রেমে পড়ে
বহু বার পড়ে
শতবার পড়ে
হাজার বার পড়ে
প্রেমের কোন বয়স নেই
সময় অসময় নেই
সকাল নেই, সন্ধ্যা নেই
দিন নেই, রাত নেই।
গ্রীষ্ম নেই, বর্ষা নেই
শীত নেই, হেমন্ত নেই
আছে শুধুই বসন্ত
প্রেমিক যুগলের মনে
মানুষ প্রেমে পড়ে
বহু বার পড়ে
শতবার পড়ে
হাজার বার পড়ে।
মানুষ প্রেমে পড়ে
২৩/১০/২০২৩
আজও অসম্পূর্ণা
মুক্তা পারভীন
—————
নিজের কথা কখনো লেখা হয়নি
যখনই লিখতে চাই
তমস্যা ভেদ করে
পায়ে পায়ে সামনে দাঁড়াও
ভুলে যাই নিজেকে
মুগ্ধ নয়নে দেখি আর ভাবি।
ধরিত্রীর চারদিকে
বনে অরণ্যে,
আকাশের নীলিমায়
ক্লান্তির অবসরে
বিষন্ন বিকেলে
বর্ষণমুখর সন্ধ্যায়
নিঃসঙ্গ রজনীতে
চোরাবালির মতো
মিশে আছো অস্তিত্বে।
তোমাকে ছাড়া আজও
আমার কবিতা হয়না
গল্প হয়না, গান হয় না
তোমাকে ছাড়া আজও
স্বপ্ন গুলো কাছে আসে না
ইচ্ছে গুলো বিকলাঙ্গ
চলতে পারে না
তোমাকে ছাড়া আজও
আজও, আমি অসম্পূর্ণা।
তারিখ ঃ ২১/১০/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
সমুদ্রের প্রান্তে
মুক্তা পারভীন
—————–
তবুও জীবন চলছে আপন গতিতে
থেমে যায়নি এক মূহুর্তের জন্য
মনে পরে কতো রাত
অপেক্ষায় থেকেছি তোমার?
নিস্তব্ধ রাত্রির একমাত্র
সঙ্গী ছিলাম আমি
পেঁচার ডাক,শেয়ালের চিৎকার
সবাই যেন আমার দুঃখে কাঁদছে।
তোমার কাছে সবদিক থেকেই
ব্যর্থ ছিলাম আমি
তাই তো রাতের পর রাত কেটেছে
নিঃসঙ্গতায় বিরহ দহনে।
কখনো কখনো ভোরের আলোয়
এসে ক্লান্ত দেহ ছড়িয়েছো বিছানায়
নিস্তব্ধ রাত কিভাবে কেটেছে
জানতে চাওনি একবারও।
জীবন আমার এখনো চলছে
ভালোবাসাহীন স্পর্শহীন
তাতে কি?
থেমে তো যায়নি।
শত বাঁধা অতিক্রম করে
নানান বাঁক পেরিয়ে
একদিন ঠিক পৌঁছে যাবে
সীমাহীন সমুদ্রের প্রান্তে।
তারিখ ঃ ০৭/১০/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)
আকুতিগুলো মরে না।
মুক্তা পারভীন
—-
তোমার সাথে কথা বলার
আকুতি গুলো মরে না,
তোমাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা
দু’চোখে চিকচিক করে জ্বলে।
প্রতি মুহূর্তে জেগে উঠে
তোলপাড় করে হৃদয় গহিনে
উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করে
দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায়।
দিন দিন অব্যক্ত ভান্ডার
কানায় কানায় পূর্ণ হয়
মর্মপীড়া নিয়ে
একান্ত আপন করে পেতে।
এ যেন এক অনাহুত অসুখ
তোমাকে দেখার অসুখ
তোমার সাথে বলার অসুখ
তোমাকে স্পর্শ করার অসুখ।
পৃথিবীতে যতো বৈদ্য কবিরাজ
যতো ওঝা-ই থাকুক
তুমিই যেন শ্রেষ্ঠ কবিরাজ
এ-ই অসুখের, সুখানুভূতি।
তোমার সাথে কথা বলার
আকাঙ্ক্ষা গুলো মরে না
তোমাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা
দু-চোখে চিকচিক করে জ্বলে।।
তারিখ ঃ ১১/১২/২৩
(পান্ডুলিপি সংরক্ষিত)