1. admin@mannanpresstv.com : admin :
লেখিকা: নুসাইবা_জান্নাত_আরহা এর গল্প // আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায় - মান্নান প্রেস টিভি
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন

লেখিকা: নুসাইবা_জান্নাত_আরহা এর গল্প // আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়

লেখিকা: নুসাইবা_জান্নাত_আরহা :
  • Update Time : বুধবার, ৩ মে, ২০২৩
  • ৬২ Time View
নিজের বরের কোলে অন্য একটি মেয়েকে এভাবে বসে থাকতে দেখে হাত থেকে খাবারের ট্রেটা ঝনঝনিয়ে মাটিতে আছরে পড়ল। পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। আকস্মিক এমন ঝনঝন কাচের কোনো কিছু পড়ার আওয়াজে তারা ফিরে তাকালো আমার দিকে। এদিকে আমার চোখে অজস্র অশ্রুরা এসে ভির জমালো। কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে নিলেই তা অতি সাবধানে মুছে নিলাম। নিজের কষ্টটাকে নিজের মধ্যেই পুষে রাখলাম।
ফারিহা রা*গে গজগজ করতে করতে এগিয়ে এলো আমার দিকে। রা*গ নিয়ে ঝা*ড়ি দিয়ে আমায় বলল
-‘ এই মেয়ে, দেখে শুনে চলতে পার না। আর কারো রুমে যে নক করে আসতে হয় তা কি তুমি জানো না নাকি মা বাবা শেখায়নি কিছু? ম্যানারলেস্ কোথাকার একটা।
-‘ নিজের রুমে আসতে গেলও বুঝি নক করে আসতে হয় নাকি ননদিনী?
-‘ হাও ডেয়ার ইউ? তুমি জানো আমি কে? তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পাও কিভাবে? আর আমায় এসব ননদিনী বলে ডাকবা না, গাইয়া ক্ষ্যাত কোথাকার। ভুলে যেও না আমি রাশফিনের কাজিন, তবে খুব বেশিদিন থাকবো না। আর হ্যাঁ একবার এই বাড়ির বউ হয়েনি তারপর তোমার মতো ডা*স্টবিনের কিটকে এ বাড়ি থেকে কিভাবে বের করতে হয় আমিও দেখে নিব। জাস্ট মাইণ্ড ইট।
কথাটা বলে ক্রুর হাসল ফারিহা।
এদিকে ফারিহার এমন কটু কথা শুনে এখনও সেখানেই চুপচাপ বসে আছে রাশফিন চৌধুরী ওরফে আমার বর। কোনো প্রতিবাদও করল না। গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে আমার দিকে।
আমি তাদের সাথে আর কোনো কথা না বলে ভাঙা কাচের টুকরা গুলো ওঠাতে লাগলাম। আর প্রতিবাদ করেই বা কি লাভ যেখানে রাশফিন আমার হয়েও একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি। এমন সময় একটা ছোট কাচের টুকরো ওঠাতে গিয়ে বেশ খানিকটা হাত কে*টে গেল আমার। আমার হাত থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেও একবারও এগিয়ে এলো না রাশফিন। সে সেখানেই বসে আছে, যেন কিছুই হয়নি। আর ফারিহা এদিকে খিলখিলিয়ে হেসেই চলেছে। অ*মানুষ একটা।
নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না, আমার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। আমি সব কিছু পরিষ্কার করে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। কোনোমতো কাপাকাপা হাতে রান্নাঘরে ট্রেটা রেখেই এক দৌড়ে অন্য রুমে চলে গেলাম।
হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো খামচে ধরে অঝোর ধারায় কাদতে লাগলাম। আমি যে কিছুতেই পারছি না আর এসব মানতে। এতোক্ষণ নিজেকে সামলে নিলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। সামনে আমার র*ক্তাক্ত হাতটা নিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বললাম
-‘ “এটাতো বাহ্যিক র*ক্তক্ষরণ মাত্র। আমার অভ্যন্তরে যে এর থেকেও বেশি র*ক্তক্ষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরু কাচের টুকরো দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হলে যেমন র*ক্তক্ষণ হয় তেমনি কাচের টুকরোর ন্যায় কোনো বি*ষাক্ত মানুষকে জড়িয়ে ধরলে হয় হ্রদয়ের র*ক্তক্ষরণ।”
আর যাইহোক, একটা মেয়ে কখনোই তার স্বামীর ভাগ অন্য কাওকে দিতে চায় না। ম*রে যাবে তবুও নিজের স্বামীর সাথে অন্য কাওকে সহ্য করতে নারাজ। আর আমার সাথে সেটাই হচ্ছে। কি এমন পাপ করেছিলাম আমি। দুঃখ গুলো যেন আজ অশ্রু রূপে ঝরে পরতে লাগল। রা*গে দুঃখে ইচ্ছে করছে ম*রে যেতে। সিলিং ফ্যানটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম আমি। অতিরিক্ত কান্নার ফলে মাথাটা ধরে আসছে যেন। চোখের সামনে আবছা আবছা ভেসে উঠতে লাগল অতিতের সেই স্মৃতিমাখা দিনগুলি…
.
.
.
শাড়িটা ঠিক করে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতেই হুট করে কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই বলিষ্ঠ হাতে ধরে ফেলে কেউ একজন। সামনে তাকাতেই ভ্যা*বাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। সাথে ভীষণ ভ*য়ও পেলাম। মুখে জো*রপূর্বক হাসি ফুটিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বললাম
-‘ স সর সরি, রাশফিন ভাই। আ আমি আসলে খেয়াল করিনি।
তিনি গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে কিছুক্ষণ। আমি চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন
-‘ ইটস্ ওকে। বাট নেক্সট টাইম যেন এমন না হয়।
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিয়েও কি একটা ভেবে যেন আবার আমার সামনে চলে এলেন। আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বললেন
-‘ শাড়ি পরেছো যে, তো কার জন্যে পরলে শুনি?
-‘ ভার্সিটিতে আজ একটা অনুষ্ঠান আছে, আমার বান্ধবীরাও শাড়ি পরবে, তাই আমাকেও পরতে হলো।
-‘ শুধু কি তাই নাকি অন্যকিছু…
-‘ কিসব যা তা বলছেন আপনি?
– বড় গলায় কথা বলার আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো একবার। কি শাড়ি পরেছো যে পেট বের হয়ে থাকে। তুমি কি আদৌও অনুষ্ঠানে যাচ্ছো নাকি পেট দেখাতে যাচ্ছো মানুষকে?
রাশফিনের এমন কথা শুনে নিজেকে একবার পরখ করে দেখলাম। সত্যিই তো, ছি কি ল*জ্জা। বারবার কি এই লোকটার সামনেই এমন বি*ব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয় নাকি। ল*জ্জায় আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে মনে হয়। আচ্ছা এই মানুষটা কি একটু ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেনা। সবার সাথে ঠিকভাবে কথা বললেও আমার সাথেই কেন এভাবে কথা বলে। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোড়ে ধ*মক দিয়ে বললেন
-‘ কি হলো কথা কি এখনো কানে পৌছায়নি, তোমার অরনিশা?
আ*চমকা ওনার এমন ধমক শুনে আমি আর চোখের জল আটকাতে পারলাম না কা*ন্নাই করে দিলাম। আমায় কাদতে দেখে তিনি আরও রেগে গিয়ে বললেন
-‘ একদম ন্যা*কামি করবে না বলে দিলাম। আমার সামনে তো না-ই। শাড়িটা কি ঠিক করবে না-কি এভাবেই যাবে?
ওনার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। এই মানুষটা এমনই। আমার মুডটাই ন*ষ্ট করে দিল। রা*গে দুঃখে মনে হচ্ছিল ওনার মাথার সবগুলো চুল টেনে ছি*ড়ে ফেলতে। এই লোকটা যে আমার মামনির ছেলে তা কে বলবে। মামনিরা, সম্পর্কে আমাদের কেউ না হলেও, আমাদের ফ্যামিলির সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে মামনি বলেই ডাকি। আর এই শান্তশিষ্ট মামনিটারই একমাত্র বে*য়ারা ছেলেটাই হলো রাশফিন চৌধুরী। অ*হংকারের দাপটে যার কিনা মাটিতে পা-ই পরে না। আজ আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল, আর ঘটে গেল এইসব কাণ্ড। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে মনে অজস্র গা*লি দিলাম রাশফিন ভাইকে।
-‘ অরনিশা মা, একটু দাড়া তো।
পেছন ফিরতে দেখলাম হাসিমুখে মামনি দাঁড়িয়ে। মামনিকে দেখতেই এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।
-‘ মামনি, ভার্সিটি যাব। আজ অনুষ্ঠান তো। পরে এসে তোমার সাথে সারারাত গল্প করবো।
বলেই বের হতো যাব ওমনি মামনি বলল
-‘ একা একা কোথায় যাচ্ছিস? রাশফিনকে বলছি ও দিয়ে আসবে তোকে।
-‘ মানেহ্ ইম্পসিবল। আমি কখনোই যাব না রাশফিন ভাইয়ের সাথে।
-‘ কেন রে আবার ঝগড়া হয়েছে?
-‘ ব্যা*টা খা*রুশ একটা। সকাল সকাল এসে আমাকে ঝা*ড়ি দেয়। কথাটা কি ভালোভাবেও বলা যেত না? সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলে, তাহলে আমার সাথেই কেন এমন রুড বিহেভ করে?
মামনি হেসে দেয়। কারো গলা খাকারির আওয়াজে ফিরে তাকালাম সেদিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাশফিন। যেন আমায় চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেবে। এবার কি হবে আমার, আমি তো আজকে শে*ষ। রাশফিন ভাই আজ আমায় মে*রেই ফেলবে।
চলবে ~

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Categories

© All rights reserved © 2022 mannanpresstv.com
Theme Customized BY WooHostBD