আমার বিয়ে হয়েছে ছয় বছর আগে। বিয়ের আড়াই বছর পর বাচ্চা পেটে আসে। আমার ছেলের জন্মের আটদিন আগেই আমার প্রাক্তন বিদেশ চলে যায়।প্রায় ৪ বছর পর হুট করে আমার প্রাক্তনের সাথে দেখা হয়ে গেল। এই ৪ বছরে বেশ পাল্টে গেছে সে। কথা বলব কি বলব না ,ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম তার দিকে। অনেকটা
দোটানা ভাব নিয়ে পিছন থেকে ডাক দিলাম ,” পরাগ “। অপ্রত্যাশিত ভাবে এমন ডাক শুনে ঘুরে তাকালো সে। বেশ খানিকটা চমকে গিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করল ,”তুমি ?”। হুট করে এভাবে দেখা হবে সে হয়তো সেটা আশা করে নি । আমি প্রতিউত্তরে জবাব দিলাম,”
হ্যাঁ আমি,এভাবে দেখবে বলে আশা করো নি তাই না ? ” ” না মানে,ইয়ে মানে বলে চোখ নামিয়ে নিলো পরাগ “
– তা কবে ফিরলে দেশে?
এইতো গতকাল
– হ্যাঁ ,তুমি কেমন আছো? তোমার বর কোথায়?? কেমন আছো???
আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।
– আছে আশেপাশেই, এলে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
– কি বলে পরিচয় করিয়ে দেবে শুনি? আমি তোমার প্রাক্তন এটা বলবে?
এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তাই কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে উল্টো তাকেই জিঙ্গেস করলাম
– কতদিন আছো দেশে?বৌ কেমন আছে?
– হ্যাঁ, ও ভালো আছে হয়তো, আমি ঠিক জানি না।
কথা বলতে বলতে আমি আর পরাগ হেঁটে চলে এলাম বড় কড়াই গাছের নিচে। এখানে ছোট বেলা থেকে আমাদের কয়েক হাজার বিকেল না চাইতেই দেখা হয়ে যেতো মুখোমুখি চোখাচোখি।
হঠাৎ পরাগ বললো
– এই নেও
– কি এটা ?
– তোমার প্রিয় অ্যালপিন চকলেট
– এখনও মনে রেখেছো এসব?
– এতো সহজে কি করে ভুলি বলতো? পকেট থেকে বের করে আমার পছন্দের চকলেটগুলো হাতে তুলে দিলো।
কেন জানি না ,ও আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হয়তো আমার এহেন আচরণ তার কাম্য ছিল না। আমি ওর দেওয়া চকলেট হাত দিয়ে নিতে পারি সেটা ভাবতে পারেনি সেদিকে নজর না দিয়ে আপন মনে চকলেট খেতে লাগলাম।
হঠাৎ আবেগে আপ্লুত হয়ে আমার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে!
– কি হলো ? কাঁদছো কেন?
চোখে পোকা পড়েছে।
হয়তো ও কারণটা বুঝে তবুও অবুঝের মতো আমাকে প্রশ্ন করে !এদিকে পকেটে থাকা রুমালটা বের করে দিলো। অবশ্য এই রুমালটা আমার দেওয়া , নিজে হাতের কাজ করে দিয়েছিলাম রুমালটা। ও কখনো কাছ ছাড়া করিনি রুমালটাকে।
– এটা এখনো রেখেছো?
– হুম,সবসময় থাকে এটা।
– তোমার বউ কিছু বলে না ?
– ও এই রুমলটা ধুয়ে ,ভাজ করে রেখে দেয়।
” বড্ড হিংসে হয় তোমার সুখ দেখে। আমার কপালে যদি এমন সুখ থাকত। ” আমি উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসলাম।
রাস্তার ওপাশ থেকে আমার বর হাত ইশারা করে ডাকছে। পরাগ বুঝতে পারলো ওটা আমার স্বামী।
– তুমি ওপাশে আসো, আমি একা রাস্তা পার হতে ভয় পাই জানো তো।
বর কি বলল জানি না ,তবে মুখ দেখে মনে হলো ও আসবে না বলেছে।
– আমি রাস্তা পার করে দেই?
– হাত ধরে রাস্তা পার হওয়াটা অনেক আগেই ভুলে গেছি ,নতুন করে আর মনে করতে চাই না। আমাদের পথ তখন একই ছিল,এখন তুমি ভিন্ন পথযাত্রী আমিও ভিন্ন। আমাদের পথটা বেঁকে গেছে ,সেটা বক্ররেখায় পরিণত হয়েছে, এ পথের বাঁক মেলাতে এসো না, ক্ষাণিক সময়ের প্রাপ্তি আমায় গুমড়ে মুচড়ে মারবে। আমাকে আমার মতো সামলিয়ে নিতে দেও।
” অমি ,তুমি ভালো আছো তো? ” তীব্র কষ্ট নিয়ে প্রশ্নটা ছুড়ে মারলাম ওকে? আমার কথার উত্তর না দিয়ে ছলছল চোখে আমার দিকে দুদন্ড তাকিয়ে হেটে গেল ও। মন চাইছিল একটাবার ডাকি তাকে, বলে দেই এখনো ভালবাসি। পরক্ষণেই মনে হলো আমাদের পথ গেছে বেঁকে, এ পথের বাঁক মেলার নয়।গন্তব্য আলাদা হয়ে গেছে আমাদের। এখন শুধু অনেক বছর পর পর এরকম পথের বাঁকে দেখা ই হতে পারে আর কিছু নয়।